‘পাড়া উৎসবের মাধ্যমে সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হবে’

প্রকাশিত: ৬:৩৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি

‘শহরে দেখা যায় প্রতিবেশীরা এক ভবনে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করেও কেউ কাউকে সেভাবে চেনেন না। নিজেদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই। তাই সবার সঙ্গে পরিচিত হতে এবং সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে এই পাড়া উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। পাড়া উৎসবের মাধ্যমের সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হবে।’

 

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোনের ৩ নম্বর সড়কে এই পাড়া উৎসবের উদ্বোধনে এসে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

সকালে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা, ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুক, ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত লিও টিটো এল অসান জুনিয়র, ব্রুনাই দারুসসালামের রাষ্ট্রদূত হাজী হারিস বিন ওথমান, জাপান দূতাবাসের মন্ত্রী (ডিসিএম) মাচিদা তাৎসুয়া, লিবিয়া দূতাবাসের মিনিস্টার প্লেনিপটেনশিয়ারী আবদালফাত্তাহ খিতরেশ, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকার হেড অব স্কুল জন স্মিথিসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই পাড়া উৎসবে ছিল দেশীয় পিঠার স্টল, বায়োস্কোপ, পুতুল নাচ, ম‌্যাজিক শো, স্বাস্থ‌্য সেবা স্টল, পাটের তৈরি পণ‌্য। এছাড়া আরো ছিল উইশ বোর্ড, শিশুদের ছবি আঁকার ক্যানভাস ও রং তুলি, ক্যারাম বোর্ড, টেবিল টেনিস দাবাসহ নানা ধরনের খেলার সামগ্রী।

পাশাপাশি স্ট্রিট ফুড, ট্যালেন্ট শো, স্ট্যান্ড-আপ কমেডি, পথনাটক, খেলাধুলা, ট্রেডিশনাল ও মর্ডান মার্শাল আর্টসের আয়োজন করা হয়েছে। সবার জন্য উন্মুক্ত এই পাড়া উৎসব সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত চলবে। 

ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে আমরা সবাই মোবাইল ফোনে, ইন্টারনেটে ব্যস্ত। আমাদের সমাজের সবার সাথে সম্পৃক্ততা খুব প্রয়োজন।

পাশের বাসার মানুষকে আমরা চিনি না। প্রতিবেশীর বাসায় কি সমস্যা সেটা আমরা জানি না, খোঁজ নেই না। ছোটবেলায় আমরা পাড়ায় পাড়ায় উৎসব করতাম। প্রতিবেশীদের বাসায় হালুয়া, রুটি বিতরণ করতাম। সমাজের সবার মধ্যে অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল।
ছোটরা বড়দের সম্মান করতাম, দেখলে সালাম দিতাম। ঢাকায় এ ধরনের চিত্র দেখা যায় না। তাই সামাজিক বন্ধন সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে এই পাড়া উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছি।’ 

মেয়র আরো বলেন, ‘গ্রামের ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে, সামাজিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে এর আগে উত্তরায় ও গুলশানে পাড়া উৎসবের আয়োজন করেছি। আজ বারিধারায় পাড়া উৎসব হচ্ছে। পাড়া উৎসবের মাধ্যমে বলতে চাই আমরা মানুষের পাশে আছি। পাড়া উৎসব থেকে বলতে চাই আমরা প্রতিবেশীর সুখের সময় পাশে না থাকলেও অন্তত বিপদের সময়ে পাশে থাকবো। আমরা এই উৎসব থেকে প্রতিজ্ঞা করতে চাই কেউ রাস্তায় কোন ময়লা ফেলবো না। সবাই মিলে সুন্দর শহর গড়ে তুলবো।’

এ সময় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার বিভিন্ন সোসাইটিকে এ ধরনের উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

বারিধারা সোসাইটির বাসিন্দাদের উদ্দেশে মেয়র বলেন, ‘বারিধারা লেকের পানি দূষিত হয়ে গেছে। সেখানে আমরা মাছের চাষ করতে পারছি না। মশার চাষ হচ্ছে। বেশিরভাগ বাড়ির পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ সিটি কর্পোরেশনের সারফেস ড্রেনে দিয়ে রেখেছে। আমি অভিযান করেছিলাম, কলাগাছ ঢুকিয়ে অবৈধ সংযোগ বন্ধ করেছিলাম। সবাইকে বলছি দয়া করে পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ আমাদের সারফেস ড্রেনে দিবেন না। সারফেস ড্রেন বৃষ্টির পানি ও কিচেন ওয়াটার প্রবাহের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে।’

পাড়া উৎসব উদ্বোধনের পর ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ঢাক ঢোল বাজাতে বাজাতে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুককে ডেকে নেন। পরে মেয়র স্বাদের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী…গানটি শুরু করেন এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে তার সঙ্গে গলা মিলিয়ে গানটি গাইতে অনুরোধ করেন। ব্রিটিশ হাইকমিশনারও বাংলার এই জনপ্রিয় গানটি গান এবং উচ্ছ্বসিত হোন।

পরে মেয়র ডেকে নেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মাকে। কাছে ডেকে নিয়ে ঢাকা ঢোলের তালে শুরু করেন চুমকি চলেছে একা পথে, সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে…..। পরে ভারতীয় হাই কমিশনারকেও গানটি গাইতে বলেন। মেয়রের সঙ্গে গানটি গেয়ে শোনান ভারতীয় হাইকমিশনার। এছাড়াও মেয়রের সঙ্গে গান গেয়ে শোনান ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত লিও টিটো এল অসান জুনিয়র। পরে মেয়র ব্রুনাই দারুস সালামের রাষ্ট্রদূত হাজী হারিস বিন ওথমানের সঙ্গে টেবিল টেনিস খেলেন। এভাবেই ডিএনসিসি মেয়র উৎসবে আগত স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আনন্দে ভাগাভাগি করে নেন।

‘হিরোস ফর অল’ এর প্রতিষ্ঠাতা রেহনুমা করিমের সঞ্চালনায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন ১৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জাকির হোসেন, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর হাছিনা বারী চৌধুরী, বারিধারা সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ফিরোজ এম হাসান প্রমুখ।