বিএনপির নেতাদের স্ত্রীরা ভারতীয় শাড়ি কেনেন না : রিজভী

প্রকাশিত: ৬:০৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৮, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিনিধি

বিএনপির নেতাদের স্ত্রীরা ‘ভারতীয় শাড়ি কেনেন না’ বলে দাবি করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন’-এর প্রসঙ্গ টেনে এই দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, “গতকাল (বুধবার) প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আচ্ছা ওরা এত কিছু করছে, শাল পোড়ায়, তো ইন্ডিয়া থেকে আনা বউয়ের শাড়িটা পুড়াতে পারে না?’ আমি বলতে চাই, আমাদের বিএনপি নেতারা ইন্ডিয়া থেকে শাড়ি তেমন কেনে না।”

নিজের পুরনো স্মৃতি তুলে রিজভী বলেন, “আমার নানার বাড়ি হচ্ছে ইন্ডিয়া।

বিয়ের পরে একবার গিয়েছিলাম। আমার ছোট মামা একটা শাড়ি দিয়েছিলেন। আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলাম যে ওই শাড়িটা কই? আমার মিসেস বলল, ‘কাঁথা সেলাই করতে কবে দিয়েছি সেটাও ছিঁড়ে গেছে।’ আমাদের দেশের মেয়েরা শাড়ি পুরনো হলে সেটা দিয়ে কাঁথা সেলাই করতে দেয়।
শেখ হাসিনা আপনি আজকে দেশ নিয়ে, দেশের স্বার্থ নিয়ে আপনি তামাশা করেন।” 

ভারতীয় পণ্য বর্জনের সামাজিক আন্দোলনের সাথে সকলের সম্পৃক্ত হওয়া উচিত উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘এ দেশকে স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। আমরা সেই প্রত্যয় সেই আদর্শ নিয়ে কাজ করছি। আমাদের নিজের বুনন করা যে ফসল সেটা আরো বেশি করে উৎপাদন করব, আমাদের মিল-কারখানায় যে শাড়ি তৈরি হয় সেই শাড়ি আমাদের মেয়েরা পড়বে, আমাদের কল-কারখানায় যে লুঙ্গি তৈরি হয় সেই লুঙ্গি আমাদের দেশের ছেলেরা পরবে।

কিন্তু আমরা অন্যের কাছে নতজানু হব না, অন্যের কাছে দ্বারস্থ হব না। এই জাতীয়তাবাদী চিন্তা থেকে আমাদেরকে কাজ করতে হবে।’ 

আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে ভারত সরকারের নীতির কঠোর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘আজকে এত বড় একটা ডামি নির্বাচন হলো। ২০১৮ সালে তাদের (ভারত) কূটনীতিক এসে একজন রাজনীতিবিদকে শেখ হাসিনার সাথে নির্বাচনে যাওয়ার কথা বলেছে। বাংলাদেশের মানুষ এসব কর্মকাণ্ডে বিক্ষুব্ধ হবে না? এত কিছু ঘটনা, সীমান্ত হত্যা হয়, আপনি একটা ডামি সরকার, একটা ডাকাত সরকার, একটা অবৈধ সরকারের পক্ষে যদি একটি দেশ থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে লড়তে হবে না, জনগণ প্রতিবাদ জানাবে না? আজকে যদি এটুকু বলত, না আমরা একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, আমরা কোনো দলের পক্ষে না, যেটা আমেরিকা বলছে, যেটা ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে যে, আমরা কোনো দলের পক্ষে না, আমরা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাই, সেটা পর্যন্ত তারা (ভারত) বলে নাই।

উল্টো ইন্ডিয়ার হাইকমিশনের কর্মকর্তারা বলে দিলেন যে, আমরা এই সরকারের পক্ষে। অতএব আমি মনে করি, অবশ্যই যে সামাজিক আন্দোলন হচ্ছে পণ্য বর্জণের তার প্রতি সংহতি জানানো ন্যায়সংগত।’ 

ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান রেখে তিনি বলেন, ‘কেনো আমরা অন্য দেশের সমালোচনা করি। ৭৪ সালে মুজিব ইন্দিরা চুক্তি হয়েছে, বেরুবাড়ি ভারত নিয়ে যাবে। কথা ছিল বেরুবাড়ি নিয়ে যাবে, আমাদেরকে দোহগ্রাম-আঙ্গরপোতা যাওয়ার জন্য করিডোর দেওয়া হবে সেটা ৪০ বছরেও দেয়া হয়নি। এখনো কিন্তু দেওয়া হয়নি। বেরুবাড়ি কিন্তু তারা নিয়ে গেছে। করিডর দিয়ে ২৪ ঘণ্টা যাতায়াত করতে পারবে কিন্তু আইনগতভাবে যেটা দেওয়ার কথা সেটা দেওয়া হয়নি। ভারতের পার্লামেন্টে এটা বন্ধ করে রেখেছে। আমাদের যেটা প্রাপ্য সেটা আমাদেরকে দেওয়া হয়নি। না এটার জন্য প্রতিবাদ করতে পারব না। দেশের স্বার্থের পক্ষে আমরা কথা বলতে পারব না। এই যে এম ইলিয়াস আলী কেন গুম হয়েছে? মানুষ বলে ভারতের টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে তার যে শক্ত অবস্থান সে জন্য তাকে গুম করা হয়েছে। আজকে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ তিনি বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসের ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন, এমপি ছিলেন পাঁচবার, মন্ত্রী ছিলেন, তাকে গুম করা হলো, পাওয়া গেল আরেকটি দেশে! এটি কি বড় ধরনের কেলেঙ্কারি নয়? এটা কি আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যায় না! এত ঘটনা, এত কিছু, এভাবে ওরা আগ্রাসন করছে।’

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘আমরা বিএনপি পরিবার সেল’-এর উদ্যোগে বিরোধী আন্দোলনে গুম-খুন-পঙ্গুত্বের শিকার পরিবারের সদস্যদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঈদ উপহার প্রদান উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। সেলের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে ও সদস্য নাজমুল হাসানের সঞ্চালনায় এই আলোচনাসভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, মীর হেলাল, যুবদলের আবদুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের ইয়াসিন আলী, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব, নাছির উদ্দীন নাছির, গুম-খুন হওয়া পরিবারের মধ্যে চৌধুরী আলমের ভাই খুরশীদ আলম মিন্টু, সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজীদা ইসলাম তুলি, নুরে আলমের স্ত্রী রিনা আলম, মাহবুবুর রহমান বাপ্পীর বোন ঝুমুর আক্তার, পারভেজ রেজার ছোট মেয়ে হৃদি প্রমুখ বক্তব্য দেন।

পরে গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের হাতে তারেক রহমানের ঈদ উপহার তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।