ইউরোপে যুদ্ধ নিয়ে যে সতর্কবার্তা দিলেন পোলিশ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৬:০২ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিনিধি

পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টুস্ক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ইউরোপ এখন ‘প্রাক-যুদ্ধের যুগে’ এবং সমগ্র মহাদেশের ভালোর জন্য ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে পরাজিত হতে দেওয়া উচিত হবে না। রাশিয়া বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে ব্যাপক হামলা চালানোর পর তাঁর এ মন্তব্য এলো।

ইউরোপীয় কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি টুস্ক বলেছেন, যুদ্ধ ‘আর অতীতের ধারণা নয়। এটি বাস্তব এবং দুই বছর আগে শুরু হয়েছে’।

 

তিনি আরো বলেন, ‘আমি জানি এটি বিধ্বংসী শোনাচ্ছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য। কিন্তু আমাদের এই সত্যে অভ্যস্ত হতে হবে যে একটি নতুন যুগ শুরু হয়েছে: প্রাক-যুদ্ধ যুগ। আমি অতিরঞ্জিত করছি না; এটি প্রতিদিন পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে।’

এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই সপ্তাহে বলেছেন, ন্যাটো দেশগুলোর প্রতি মস্কোর ‘কোনো আগ্রাসী অভিপ্রায় নেই’।

 তিনি জানান, ইউক্রেনের বিপরীতে ন্যাটো জোটের সব সদস্য পোল্যান্ড, বাল্টিক দেশ এবং চেক প্রজাতন্ত্রে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম পারমাণবিক অস্ত্রাগারের অধিকারী রাশিয়া আক্রমণ করার বিষয়টি ‘সম্পূর্ণ বাজে কথা’। 

পাশাপাশি পুতিন সতর্ক করে এ-ও বলেছেন, ইউক্রেন যদি অন্যান্য দেশের বিমানঘাঁটি থেকে পশ্চিমা এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে তবে সেগুলো ‘বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে, যেখানেই সেগুলোর অবস্থান হোক’।

রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করার পর পশ্চিমের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক কোল্ড ওয়ারের সবচেয়ে খারাপ দিনগুলোর পর থেকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।

ইউক্রেনে সর্বশেষ রুশ হামলায় প্রায় ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে।

এতে বেশ কয়েকটি অঞ্চল আংশিক বিদ্যুৎবিভ্রাটের সম্মুখীন হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এটি ছিল এ ধরনের দ্বিতীয় আক্রমণ, যেখানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রতিরক্ষাকে বিভ্রান্ত করতে একযোগে বিপুলসংখ্যক অস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি এই কৌশলটিকে ‘ক্ষেপণাস্ত্র সন্ত্রাস’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, হাইড্রো-ইলেকট্রিক পাওয়ার প্লান্টে হামলা একটি বড় পরিবেশগত বিপর্যয়ের সৃষ্টি করতে পারে।ইউক্রেনের জন্য জরুরি সামরিক সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন টুস্ক।

যুদ্ধের পরবর্তী দুই বছরের ওপর ভিত্তি করে সব কিছুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে উল্লেখ করে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর থেকে আমরা সবচেয়ে সংকটময় মুহূর্তে বাস করছি।’ 

টুস্ক ২০২৩ সালের শেষের দিকে পোলিশ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর ইউরোপীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎকার ব্যবহার করেছিলেন মহাদেশের চারপাশের নেতাদের তাঁদের প্রতিরক্ষা জোরদার করার জন্য। তিনি বলেছিলেন, ইউরোপের ‘ন্যাটোর সমান্তরাল কাঠামো’ তৈরি করার দরকার নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যেই জিতুক না কেন, সামরিকভাবে আরো স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে মহাদেশটি দেশটির কাছে আরো আকর্ষণীয় অংশীদার হবে।

এ ছাড়া ইউরোপীয় কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট টুস্ক সতর্ক করেছেন, ইউরোপকে আগে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত টুস্ক যখন প্রথমবারের মতো পোলিশ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন, তখন তিনি বলেছিলেন, পোল্যান্ড ও বাল্টিক দেশগুলোর বাইরে আরো কয়েকজন ইউরোপীয় নেতা রাশিয়াকে সম্ভাব্য হুমকি বলে উপলব্ধি করেন।

পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সতর্কবার্তাটি বাল্টিক দেশগুলোতে তাঁর প্রতিবেশীরা অনেক সময়ের জন্য যা বলে আসছে তার প্রতিধ্বনি করে। রাশিয়া যদি ইউক্রেনের সব প্রদেশে আক্রমণ, দখল ও একত্র করতে সক্ষম হয় তবে প্রেসিডেন্ট পুতিন তাদের মতো দেশগুলোর বিরুদ্ধে একই ধরনের আক্রমণ চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তারা কতক্ষণ ভয় পাবে?

পশ্চিম ইউরোপের তুলনায় রাশিয়ার সীমান্তবর্তী ন্যাটো দেশগুলোতে মাথাপিছু প্রতিরক্ষা ব্যয় লক্ষণীয়ভাবে বেশি। ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি বলেছেন, ন্যাটো দেশকে আক্রমণ করার তাঁর কোনো পরিকল্পনা নেই। কিন্তু এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী কাজা কাল্লাসের মতো বাল্টিক নেতারা বলছেন, মস্কোর কথা বিশ্বাস করা যায় না। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার দিনগুলোতে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ আসন্ন আক্রমণের পশ্চিমা সতর্কতাকে ‘প্রোপাগান্ডা’ এবং ‘পশ্চিমা হাইপারবোল’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

সূত্র : বিবিসি, এএফপি