বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা একের পর এক উপেক্ষা বেরোবি উপাচার্যের

প্রকাশিত: ১:৩১ অপরাহ্ণ, জুন ১৫, ২০২৪

 

স্টাফ রিপোর্টার :বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা একের পর এক উপেক্ষা করে যাচ্ছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ। চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রার ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নিয়োগ, পরীক্ষার পারিতোষিকের হার বৃদ্ধি, কর্মকর্তাদের ৪র্থ গ্রেডে পদোন্নতির চেষ্টাসহ নানা ক্ষেত্রে ইউজিসির বিধিবিধানের তোয়াক্কা করেননি তিনি।

এপ্রিলে ইউজিসির বাজেট পরীক্ষক দল বেরোবির ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের সংশোধনী ও ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের মূল বাজেট নিরীক্ষা করলে এসব অনিয়ম ধরা পড়ে। ইউজিসির অর্থ পরিচালক রেজাউল করিম হাওলাদার স্বাক্ষরিত বাজেট পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা যায়, এসব বিষয়ে ২৮ মে বেরোবির উপাচার্যকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছিল। সেখানে আরও বলা হয়েছে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বিদ্যমান আপগ্রেডেশন/পদোন্নতি নীতিমালা-২০২৩-এ অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে সরকারের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে। তাই নীতিমালাটি সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপনের আগে অর্থ মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা বিভাগ ও কমিশনের প্রতিনিধি সমন্বয়ে কমিটি করে অধিকতর যাচাই-বাছাই করার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু ইউজিসির নির্দেশনা আমলে না নিয়ে উপাচার্য ১০১তম সিন্ডিকেট সভায় নীতিমালাটি পাশ করেন।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ওই নীতিমালার আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ২৫ জন ৩য় শ্রেণির কর্মচারীকে অর্গানোগ্রামবহির্ভ‚তভাবে কর্মকর্তার মর্যাদা দিয়ে অনিয়ম করা হয়েছে।

পরীক্ষার পারিতোষিক হার নির্ধারণ নীতিমালা কার্যকর: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার পারিতোষিকের হার অতিরিক্ত হওয়ায় তা অধিকতর যাচাই-বাছাই করে সংশোধিত নীতিমালা প্রস্তুত করার কথা। পাশাপাশি ইউজিসির অনুমোদন সাপেক্ষে ওই পারিতোষিক নীতিমালা কার্যকর করার কথা থাকলেও অনুমোদন ছাড়াই নীতিমালাটি কার্যকর করেন উপাচার্য। জানা যায়, পারিতোষিক ১২৯ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

তৃতীয়বার চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রার নিয়োগ: সার্চ কমিটির মাধ্যমে ২০২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরীকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ২০২৩ সালে তাকে দ্বিতীয়বার এবং চলতি বছরের ৫ ফেব্র“য়ারি তৃতীয়বার এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অথচ দুইবারের বেশি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার বিধান নেই।

বারবার ৪র্থ গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়ার চেষ্টা : ইউজিসির নীতিমালা অনুযায়ী, উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চতুর্থ গ্রেডের পদে কর্মকর্তার নিয়োগ দিতে হবে। তাছাড়া এসব পদে নিয়োগ দিতে হলে ইউজিসির অনুমোদন নিতে হবে। এক্ষেত্রে পদোন্নতি/আপগ্রেডেশন/পর্যায়োন্নয়ন দেওয়া যাবে না। কিন্তু বেরোবিতে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার/সমমানের পদে পদোন্নতির জন্য ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর প্রথমবার কর্মকর্তাদের ৪র্থ গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য বাছাই বোর্ডের আয়োজন করা হয়।

বিষয়টি ইউজিসির নজরে এলে কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়ে দুই কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছিল। সর্বশেষ ৩০ মে নজিরবিহীন গোপনীয়তায় ৩১ জন কর্মকর্তার ৪র্থ গ্রেডে পদোন্নতির বাছাই বোর্ড সম্পন্ন করেন উপাচার্য।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নিয়োগ : ইউজিসির নির্দেশনা উপেক্ষা করে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. নিতাই কুমার ঘোষকে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য ড. হাসিবুর রশীদ। গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর এ নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ ২০২২ সালের ২০ মার্চ ইউজিসির জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পরিচালকসহ (অর্থ ও হিসাব) গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় পূর্ণকালীন নিয়োগ দিতে হবে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বেরোবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশিদ যুগান্তরকে বলেন, আমি কোনো অনিয়ম করিনি বা করার চেষ্টাও করছি না। ইউজিসি সারা বছর রুটিনমতো নানা নির্দেশনা দিয়ে থাকে। এটি তাদের কাজ। তারা তাদের কাজ করবেÑএটাই স্বাভাবিক। আমি যা করেছি বা করছি তাতে কোনো বিধিবিধান বা পরিপত্রের নির্দেশনা অমান্য করিনি।

ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান যুগান্তরকে বলেন, তিনি (উপাচার্য) বিধিবিধান মানছেন না বলেই তো আমরা নির্দেশনা দিচ্ছি এবং এতে অনেক কিছুই বন্ধ হয়েছে। আমরা যতবার অভিযোগ পেয়েছি, ততবার কোনো অনিয়ম হলে তা বন্ধের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। আবারও যদি এমন কোনো ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।