রূপগঞ্জে গণশুনানির প্রথম দিনে নিখোঁজ ৮০ জনের তালিকা কুড়িয়ে পাওয়া হাড় নিয়ে গেছে স্বজনরা

প্রকাশিত: ১২:২৫ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২, ২০২৪

মোঃআবু কাওছার মিঠু 

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা:

নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের গাজী টায়ার কারখানায় আগুনের ঘটনায় গণশুনানিতে নিখোঁজ ৮০জনের আত্মীয়-স্বজনের বক্তব্য নেয়া হয়েছে। গতকাল ১সেপ্টেম্বর রবিবার সকাল ১০টায় আট সদস্যের তদন্ত কমিটির সামনে গাজী টায়ার কারখানা এলাকায় এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আর শেষ হয় দুপুর দুইটায়।

নিখোঁজদের আত্মীয়-স্বজনরা স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে তালিকা তৈরিতে নাম, ঠিকানা, কর্ম, বয়স, পারিবারিক অবস্থানসহ প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করেন। ঘটনার ৭ দিন অতিবাহিত হলেও কারখানায় নিখোঁজদের কোন খোঁজ-খবর না পাওয়ায় স্বজনদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নিখোঁজদের স্বজনরা গণশুনানিতে অংশ নিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনা কবলিত ভবনের ভেতর থেকে কুড়িয়ে পাওয়া হাড় নিয়ে যায়। এ সময় কারখানা এলাকা স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে। ২/৩জন নারী মুর্ছা যায়।

জানা গেছে, নিখোঁজদের তালিকা তৈরিতে প্রথম দফায় ফায়ার সার্ভিস, দ্বিতীয় দফায় পুলিশ ও ছাত্র-ছাত্রী কাজ করেন। তৃতীয় দফায় তদন্ত কমিটি নিখোঁজদের নাম লিপিবদ্ধ শুরু করলে তাদের সন্ধানের দাবিতে স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। দুপুর ১২টায় তারা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপসী এলাকা অবরোধ করে। এ সময় সড়কের উভয় দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। তাতে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ে। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা নিখোঁজদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এ প্রতিবেদন তৈরি করার সময়ও উত্তেজিত আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনীর সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তরা প্রথমে নিখোঁজদের ১৭৬ জনের নাম পরিচয় লিপিবদ্ধ করেন। পরে অজ্ঞাত কারনে ফায়ার সার্ভিস নিখোঁজদের নাম, ঠিকানা ও পরিচয় লিপিবদ্ধ করার বিষয়টি অস্বীকার করেন। এর পরে দ্বিতীয় দফায় পুলিশ ও ছাত্র-ছাত্রীরা নিখোঁজ ১২৮ জনের নাম, ঠিকানা ও পরিচয় লিপিবদ্ধ করেন। তৃতীয় দফায় তদন্ত কমিটি এ গণশুনানির আয়োজন করে। গণ শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন তদন্ত কমিটি আহবায়ক নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হামিদুর রহমান, রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান মাহমুদ রাসেলসহ আরো অনেকে।

তদন্ত কমিটি নিখোঁজ ৮০জনের আত্মীয়-স্বজনের বক্তব্য গ্রহণ করেন। গতকাল রবিবার প্রাথমিকভাবে তাদের তালিকা তৈরির কাজ বন্ধ করে দেন। তাতে নিখোঁজদের স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পরে নিখোঁজদের সন্ধানে আগুনে পুড়ে যাওয়া গাজী টায়ার কারখানার ভেতরে বেশ ক’জন ঢুকে পড়েন। সেখান থেকে তারা আগুনে পুড়ে যাওয়া মানুষের মাথার খুলি ও হাড় উদ্ধার করে নিয়ে আসে। রূপসী গ্রামের আতিকউল্লাহ তার নিখোঁজ হওয়া স্ত্রী রুমা আক্তারের খোঁজে দুর্ঘটনা কবলিত ভবনের তৃতীয় তলায় ওঠে পড়েন। সেখানে অনেক মানুষের দেহাবশেষ দেখতে পাওয়া যায় বলে তিনি জানিয়েছেন।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, গাজী টায়ার কারখানায় আগুনের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী ও নিখোঁজদের নাম পরিচয়ের তালিকা তৈরি করতে স্বজনদের নিয়ে গণশুনানি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি বিষয়টি দেখছেন। গণশুনানিতে গতকাল নিখোঁজ ৮০ জনের আত্মীয়-স্বজনের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমান বলেন, গাজী টায়ার কারখানায় আগুনের ঘটনার দিন কি ঘটেছিল, লুটপাট ও আগুন দেওয়ার ঘটনায় কারা জড়িত ও নিখোঁজদের নামের তালিকা যাচাই বাছাই করতে তদন্তের অংশ হিসেবে গণশুনানীর আয়োজন করা হয়েছে। গত ২৮ তারিখ থেকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

উল্লেখ্য গত ৫আগষ্ট সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর মালিকানাধীন গাজী টায়ার ও কর্নগোপ এলাকার গাজী পাইপ-গাজী ট্যাংক কারখানায় দুর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। এ সময় আশপাশের বিভিন্ন শ্রেণির পেশার মানুষ লুটপাটে অংশ নেয়। সেই লোভেই গত ২৫ আগস্ট রূপসী গাজী টায়ার কারখানায় অবাধে লুটপাট চলে। লুটপাট করতে গিয়ে ভবনের ভেতরেই অনেক মানুষ আটকে পড়েন। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট ২১ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।