ভবিষ্যৎ সম্পর্কের রূপরেখা ঘোষণা হবে মোদির সঙ্গে বৈঠকে ক্রাইম পেট্রোল ক্রাইম পেট্রোল News প্রকাশিত: ৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ, জুন ২২, ২০২৪ নিজস্ব প্রতিনিধি নিকটতম প্রতিবেশী দুই দেশ বাংলাদেশ ও ভারত আগামী দিনগুলোতে সম্পর্ক কিভাবে এগিয়ে নিতে চায়, তার রূপরেখা সম্পর্কিত একটি ঘোষণা আসছে আজ শনিবার। নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এই রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এবারের বৈঠক শেষে ‘জয়েন্ট স্টেটমেন্ট’ বা যৌথ বিবৃতি নয়, বরং ‘ভিশন স্টেটমেন্ট’ (রূপকল্প বা রূপরেখা সম্পর্কিত বিবৃতি) আসতে পারে। সে লক্ষ্যেই গতকাল শুক্রবার প্রস্তুতি চলছিল নয়াদিল্লিতে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার জানানো হবে। এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে এই অঙ্গীকারকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সফর ঘিরে প্রায় ১৪টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক নিয়ে দুই দেশ কাজ করছিল। শেষ পর্যন্ত কতটি স্বাক্ষর হয়, তার জন্য বৈঠক পর্যন্ত সাংবাদিকদের অপেক্ষা করতে বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। তবে পুরনো চুক্তি নবায়নসহ ১৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। নবায়নের চেয়ে নতুন চুক্তি-সমঝোতার সংখ্যাই বেশি হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দিনের দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফরে গতকাল বিকেলে নয়াদিল্লিতে পৌঁছেন। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক বার্তায় বলেন, বাংলাদেশ ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ও বিশ্বস্ত প্রতিবেশী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিতে বড় ধরনের গতি আনবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বিশেষ একটি সম্পর্ক। ভারত এই সম্পর্ক আরো গভীর ও শক্তিশালী করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। শেখ হাসিনার ভারত সফর সম্পর্কে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সফর। উভয় পক্ষের অনেক প্রত্যাশা আছে। কারণ এই সম্পর্ক খুবই বিশেষ এবং অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ।’ এদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর গতকাল সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। ওই সাক্ষাতের পর এক এক্স বার্তায় জয়শঙ্কর লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমি আনন্দিত। ভারতে তাঁর রাষ্ট্রীয় সফর আমাদের ঘনিষ্ঠ ও চিরস্থায়ী সম্পর্কের নির্দেশক। আমাদের বিশেষ অংশীদারির আরো উন্নতিতে তাঁর দিকনির্দেশনার আমি প্রশংসা করি।’ যুক্ত হবে নতুন ভিশন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গতকাল সন্ধ্যায় ভারতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলও সাক্ষাৎ করেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রমে বাংলাদেশ ও ভারত যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, তা দূর করতে সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে তিনি ওই গুরুত্বারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমরা যে চ্যালেঞ্জগুলো অনুভব করছি, সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারি।’ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাতের সময় আলোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, এই সাক্ষাতে দুই দেশে নতুন সরকার গঠনের পর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যকার অংশীদারি আরো এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মুখ্য সচিব বলেন, দুই নতুন সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। তাই দুই দেশে নতুন ভিশন (রূপকল্প) যুক্ত হবে। বাণিজ্যে নতুন অধ্যায় শুরুর আশা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এমন উচ্চতায় পৌঁছেছে যে এই সম্পর্ক এখন নতুন অধ্যায়ে নেওয়া যেতে পারে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, এই নতুন অধ্যায় বাণিজ্যক্ষেত্রে সূচনা করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে লজিস্টিক, জ্বালানি ও কানেক্টিভিটি খাতে গভীরভাবে কাজ করতে চায়। আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের হীরক জয়ন্তী উদযাপনের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। শেখ হাসিনাকে বিমসটেকের (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) জন্য একটি নতুন ভূমিকা নেওয়ার আহবান জানান ড. এস জয়শঙ্কর। আগামী সেপ্টেম্বরে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় বিমসটেকের পরবর্তী বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। শেখ হাসিনা ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একমত হন যে বিমসটেক শক্তিশালী হলে তা অর্থনৈতিক, বাণিজ্য, কানেক্টিভিটি ও ডিজিটাইজেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে। সাক্ষাতে ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে কর ও রাজস্ব সংগ্রহ এবং জনগণকে সেবা দেওয়ার উন্নয়ন করাসহ ডিজিটাল কর্মসূচির উন্নয়নে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী দুই প্রতিবেশী দেশের প্রকল্প দ্রুত ও সহজে শেষ করার ওপর জোর দেন। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও একমত হন। মিয়ানমারের কারণে ভারতও ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, মিয়ানমার সরকার ও বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান সংঘাতের কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেছেন, প্রয়োজনে বিমসটেক থেকে মিয়ানমারকে বাদ দিয়ে অন্য সদস্য দেশগুলো পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যাবে। কারণ মিয়ানমারের কারণে ভারতও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রথম দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফর তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গত ৮ থেকে ১০ জুন নয়াদিল্লি সফর করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মোদির আমন্ত্রণে ১০ দিন পর এবার দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফর করছেন তিনি। এ মাসে ভারতে বর্তমান সরকার গঠিত হওয়ার পর বিদেশ থেকে এটিই প্রথম দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফর। অন্যদিকে গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনার এটিই প্রথম বিদেশে দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফর। রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা সফরসূচি অনুযায়ী, আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে লাল গালিচা বিছানো হবে। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাবেন এবং দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হবে। শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে এবং তিনি গার্ড পরিদর্শনও করবেন। এরপর তিনি রাজঘাটে ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সেখানে পরিদর্শন বইয়ে তিনি স্বাক্ষর করবেন। আলোচনায় যেসব বিষয় গুরুত্ব পেতে পারে শেখ হাসিনা আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্ত বৈঠক এবং প্রতিনিধি পর্যায়ে আলোচনার জন্য হায়দরাবাদ হাউসে যাবেন। সেখানে বৈঠক শেষে দুই নেতা সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করবেন। এরপর দুই প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি দেবেন। হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আয়োজিত ভোজসভায় যোগ দেবেন তিনি। সূত্র জানায়, বৈঠকে বেশি গুরুত্ব পাবে নিরাপত্তা ইস্যু। মিয়ানমার পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সংকট, ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য মণিপুরে সংকটসহ সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। এ ছাড়া শীর্ষ বৈঠকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য, জ্বালানি, নতুন প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া মহাকাশ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ডিজিটাল অর্থনীতির মতো বিষয়গুলো সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সীমান্ত হত্যা, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ও ঋণ সহায়তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হবে। ভারতের ঋণচুক্তি বাস্তবায়নে নতুন রূপরেখা চুক্তি বা বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সমঝোতা স্মারক সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত্সূচি সফরসূচি অনুযায়ী, আজ বিকেলে শেখ হাসিনা ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে তাঁর সচিবালয়ে সাক্ষাৎ করবেন। এরপর আজ সন্ধ্যায় তিনি নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করবেন। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা) প্রধানমন্ত্রী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে পালাম বিমানবন্দর থেকে ভারতের রাজধানী ত্যাগ করবেন। আজ রাত ৯টায় ফ্লাইটটির ঢাকায় অবতরণ করার কথা। SHARES জাতীয় বিষয়: মোদি
নিকটতম প্রতিবেশী দুই দেশ বাংলাদেশ ও ভারত আগামী দিনগুলোতে সম্পর্ক কিভাবে এগিয়ে নিতে চায়, তার রূপরেখা সম্পর্কিত একটি ঘোষণা আসছে আজ শনিবার। নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এই রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এবারের বৈঠক শেষে ‘জয়েন্ট স্টেটমেন্ট’ বা যৌথ বিবৃতি নয়, বরং ‘ভিশন স্টেটমেন্ট’ (রূপকল্প বা রূপরেখা সম্পর্কিত বিবৃতি) আসতে পারে। সে লক্ষ্যেই গতকাল শুক্রবার প্রস্তুতি চলছিল নয়াদিল্লিতে।
নিকটতম প্রতিবেশী দুই দেশ বাংলাদেশ ও ভারত আগামী দিনগুলোতে সম্পর্ক কিভাবে এগিয়ে নিতে চায়, তার রূপরেখা সম্পর্কিত একটি ঘোষণা আসছে আজ শনিবার। নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এই রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এবারের বৈঠক শেষে ‘জয়েন্ট স্টেটমেন্ট’ বা যৌথ বিবৃতি নয়, বরং ‘ভিশন স্টেটমেন্ট’ (রূপকল্প বা রূপরেখা সম্পর্কিত বিবৃতি) আসতে পারে। সে লক্ষ্যেই গতকাল শুক্রবার প্রস্তুতি চলছিল নয়াদিল্লিতে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার জানানো হবে। এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে এই অঙ্গীকারকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সফর ঘিরে প্রায় ১৪টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক নিয়ে দুই দেশ কাজ করছিল। শেষ পর্যন্ত কতটি স্বাক্ষর হয়, তার জন্য বৈঠক পর্যন্ত সাংবাদিকদের অপেক্ষা করতে বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার জানানো হবে। এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে এই অঙ্গীকারকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সফর ঘিরে প্রায় ১৪টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক নিয়ে দুই দেশ কাজ করছিল। শেষ পর্যন্ত কতটি স্বাক্ষর হয়, তার জন্য বৈঠক পর্যন্ত সাংবাদিকদের অপেক্ষা করতে বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।
তবে পুরনো চুক্তি নবায়নসহ ১৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। নবায়নের চেয়ে নতুন চুক্তি-সমঝোতার সংখ্যাই বেশি হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দিনের দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফরে গতকাল বিকেলে নয়াদিল্লিতে পৌঁছেন। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং।
তবে পুরনো চুক্তি নবায়নসহ ১৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। নবায়নের চেয়ে নতুন চুক্তি-সমঝোতার সংখ্যাই বেশি হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দিনের দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফরে গতকাল বিকেলে নয়াদিল্লিতে পৌঁছেন। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক বার্তায় বলেন, বাংলাদেশ ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ও বিশ্বস্ত প্রতিবেশী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিতে বড় ধরনের গতি আনবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বিশেষ একটি সম্পর্ক। ভারত এই সম্পর্ক আরো গভীর ও শক্তিশালী করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক বার্তায় বলেন, বাংলাদেশ ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ও বিশ্বস্ত প্রতিবেশী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিতে বড় ধরনের গতি আনবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বিশেষ একটি সম্পর্ক। ভারত এই সম্পর্ক আরো গভীর ও শক্তিশালী করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
শেখ হাসিনার ভারত সফর সম্পর্কে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সফর। উভয় পক্ষের অনেক প্রত্যাশা আছে। কারণ এই সম্পর্ক খুবই বিশেষ এবং অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ।’ এদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর গতকাল সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। ওই সাক্ষাতের পর এক এক্স বার্তায় জয়শঙ্কর লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমি আনন্দিত। ভারতে তাঁর রাষ্ট্রীয় সফর আমাদের ঘনিষ্ঠ ও চিরস্থায়ী সম্পর্কের নির্দেশক। আমাদের বিশেষ অংশীদারির আরো উন্নতিতে তাঁর দিকনির্দেশনার আমি প্রশংসা করি।’ যুক্ত হবে নতুন ভিশন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গতকাল সন্ধ্যায় ভারতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলও সাক্ষাৎ করেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রমে বাংলাদেশ ও ভারত যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, তা দূর করতে সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে তিনি ওই গুরুত্বারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমরা যে চ্যালেঞ্জগুলো অনুভব করছি, সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারি।’ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাতের সময় আলোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, এই সাক্ষাতে দুই দেশে নতুন সরকার গঠনের পর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যকার অংশীদারি আরো এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মুখ্য সচিব বলেন, দুই নতুন সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। তাই দুই দেশে নতুন ভিশন (রূপকল্প) যুক্ত হবে। বাণিজ্যে নতুন অধ্যায় শুরুর আশা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এমন উচ্চতায় পৌঁছেছে যে এই সম্পর্ক এখন নতুন অধ্যায়ে নেওয়া যেতে পারে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, এই নতুন অধ্যায় বাণিজ্যক্ষেত্রে সূচনা করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে লজিস্টিক, জ্বালানি ও কানেক্টিভিটি খাতে গভীরভাবে কাজ করতে চায়। আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের হীরক জয়ন্তী উদযাপনের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। শেখ হাসিনাকে বিমসটেকের (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) জন্য একটি নতুন ভূমিকা নেওয়ার আহবান জানান ড. এস জয়শঙ্কর। আগামী সেপ্টেম্বরে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় বিমসটেকের পরবর্তী বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। শেখ হাসিনা ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একমত হন যে বিমসটেক শক্তিশালী হলে তা অর্থনৈতিক, বাণিজ্য, কানেক্টিভিটি ও ডিজিটাইজেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে। সাক্ষাতে ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে কর ও রাজস্ব সংগ্রহ এবং জনগণকে সেবা দেওয়ার উন্নয়ন করাসহ ডিজিটাল কর্মসূচির উন্নয়নে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী দুই প্রতিবেশী দেশের প্রকল্প দ্রুত ও সহজে শেষ করার ওপর জোর দেন। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও একমত হন। মিয়ানমারের কারণে ভারতও ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, মিয়ানমার সরকার ও বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান সংঘাতের কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেছেন, প্রয়োজনে বিমসটেক থেকে মিয়ানমারকে বাদ দিয়ে অন্য সদস্য দেশগুলো পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যাবে। কারণ মিয়ানমারের কারণে ভারতও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রথম দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফর তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গত ৮ থেকে ১০ জুন নয়াদিল্লি সফর করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মোদির আমন্ত্রণে ১০ দিন পর এবার দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফর করছেন তিনি। এ মাসে ভারতে বর্তমান সরকার গঠিত হওয়ার পর বিদেশ থেকে এটিই প্রথম দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফর। অন্যদিকে গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনার এটিই প্রথম বিদেশে দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফর। রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা সফরসূচি অনুযায়ী, আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে লাল গালিচা বিছানো হবে। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাবেন এবং দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হবে। শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে এবং তিনি গার্ড পরিদর্শনও করবেন। এরপর তিনি রাজঘাটে ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সেখানে পরিদর্শন বইয়ে তিনি স্বাক্ষর করবেন। আলোচনায় যেসব বিষয় গুরুত্ব পেতে পারে শেখ হাসিনা আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্ত বৈঠক এবং প্রতিনিধি পর্যায়ে আলোচনার জন্য হায়দরাবাদ হাউসে যাবেন। সেখানে বৈঠক শেষে দুই নেতা সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করবেন। এরপর দুই প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি দেবেন। হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আয়োজিত ভোজসভায় যোগ দেবেন তিনি। সূত্র জানায়, বৈঠকে বেশি গুরুত্ব পাবে নিরাপত্তা ইস্যু। মিয়ানমার পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সংকট, ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য মণিপুরে সংকটসহ সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। এ ছাড়া শীর্ষ বৈঠকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য, জ্বালানি, নতুন প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া মহাকাশ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ডিজিটাল অর্থনীতির মতো বিষয়গুলো সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সীমান্ত হত্যা, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ও ঋণ সহায়তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হবে। ভারতের ঋণচুক্তি বাস্তবায়নে নতুন রূপরেখা চুক্তি বা বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সমঝোতা স্মারক সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত্সূচি সফরসূচি অনুযায়ী, আজ বিকেলে শেখ হাসিনা ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে তাঁর সচিবালয়ে সাক্ষাৎ করবেন। এরপর আজ সন্ধ্যায় তিনি নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করবেন। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা) প্রধানমন্ত্রী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে পালাম বিমানবন্দর থেকে ভারতের রাজধানী ত্যাগ করবেন। আজ রাত ৯টায় ফ্লাইটটির ঢাকায় অবতরণ করার কথা।
শেখ হাসিনার ভারত সফর সম্পর্কে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সফর। উভয় পক্ষের অনেক প্রত্যাশা আছে। কারণ এই সম্পর্ক খুবই বিশেষ এবং অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ।’ এদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর গতকাল সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। ওই সাক্ষাতের পর এক এক্স বার্তায় জয়শঙ্কর লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমি আনন্দিত। ভারতে তাঁর রাষ্ট্রীয় সফর আমাদের ঘনিষ্ঠ ও চিরস্থায়ী সম্পর্কের নির্দেশক। আমাদের বিশেষ অংশীদারির আরো উন্নতিতে তাঁর দিকনির্দেশনার আমি প্রশংসা করি।’ যুক্ত হবে নতুন ভিশন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গতকাল সন্ধ্যায় ভারতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলও সাক্ষাৎ করেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রমে বাংলাদেশ ও ভারত যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, তা দূর করতে সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে তিনি ওই গুরুত্বারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমরা যে চ্যালেঞ্জগুলো অনুভব করছি, সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারি।’ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাতের সময় আলোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, এই সাক্ষাতে দুই দেশে নতুন সরকার গঠনের পর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যকার অংশীদারি আরো এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মুখ্য সচিব বলেন, দুই নতুন সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। তাই দুই দেশে নতুন ভিশন (রূপকল্প) যুক্ত হবে। বাণিজ্যে নতুন অধ্যায় শুরুর আশা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এমন উচ্চতায় পৌঁছেছে যে এই সম্পর্ক এখন নতুন অধ্যায়ে নেওয়া যেতে পারে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, এই নতুন অধ্যায় বাণিজ্যক্ষেত্রে সূচনা করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে লজিস্টিক, জ্বালানি ও কানেক্টিভিটি খাতে গভীরভাবে কাজ করতে চায়। আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের হীরক জয়ন্তী উদযাপনের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। শেখ হাসিনাকে বিমসটেকের (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) জন্য একটি নতুন ভূমিকা নেওয়ার আহবান জানান ড. এস জয়শঙ্কর। আগামী সেপ্টেম্বরে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় বিমসটেকের পরবর্তী বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। শেখ হাসিনা ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একমত হন যে বিমসটেক শক্তিশালী হলে তা অর্থনৈতিক, বাণিজ্য, কানেক্টিভিটি ও ডিজিটাইজেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে। সাক্ষাতে ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে কর ও রাজস্ব সংগ্রহ এবং জনগণকে সেবা দেওয়ার উন্নয়ন করাসহ ডিজিটাল কর্মসূচির উন্নয়নে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী দুই প্রতিবেশী দেশের প্রকল্প দ্রুত ও সহজে শেষ করার ওপর জোর দেন। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও একমত হন। মিয়ানমারের কারণে ভারতও ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, মিয়ানমার সরকার ও বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান সংঘাতের কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেছেন, প্রয়োজনে বিমসটেক থেকে মিয়ানমারকে বাদ দিয়ে অন্য সদস্য দেশগুলো পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যাবে। কারণ মিয়ানমারের কারণে ভারতও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রথম দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফর তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গত ৮ থেকে ১০ জুন নয়াদিল্লি সফর করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মোদির আমন্ত্রণে ১০ দিন পর এবার দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফর করছেন তিনি। এ মাসে ভারতে বর্তমান সরকার গঠিত হওয়ার পর বিদেশ থেকে এটিই প্রথম দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফর। অন্যদিকে গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনার এটিই প্রথম বিদেশে দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফর। রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা সফরসূচি অনুযায়ী, আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে লাল গালিচা বিছানো হবে। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাবেন এবং দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হবে। শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে এবং তিনি গার্ড পরিদর্শনও করবেন। এরপর তিনি রাজঘাটে ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সেখানে পরিদর্শন বইয়ে তিনি স্বাক্ষর করবেন। আলোচনায় যেসব বিষয় গুরুত্ব পেতে পারে শেখ হাসিনা আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্ত বৈঠক এবং প্রতিনিধি পর্যায়ে আলোচনার জন্য হায়দরাবাদ হাউসে যাবেন। সেখানে বৈঠক শেষে দুই নেতা সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করবেন। এরপর দুই প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি দেবেন। হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আয়োজিত ভোজসভায় যোগ দেবেন তিনি। সূত্র জানায়, বৈঠকে বেশি গুরুত্ব পাবে নিরাপত্তা ইস্যু। মিয়ানমার পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সংকট, ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য মণিপুরে সংকটসহ সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। এ ছাড়া শীর্ষ বৈঠকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য, জ্বালানি, নতুন প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া মহাকাশ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ডিজিটাল অর্থনীতির মতো বিষয়গুলো সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সীমান্ত হত্যা, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ও ঋণ সহায়তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হবে। ভারতের ঋণচুক্তি বাস্তবায়নে নতুন রূপরেখা চুক্তি বা বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সমঝোতা স্মারক সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত্সূচি সফরসূচি অনুযায়ী, আজ বিকেলে শেখ হাসিনা ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে তাঁর সচিবালয়ে সাক্ষাৎ করবেন। এরপর আজ সন্ধ্যায় তিনি নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করবেন। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা) প্রধানমন্ত্রী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে পালাম বিমানবন্দর থেকে ভারতের রাজধানী ত্যাগ করবেন। আজ রাত ৯টায় ফ্লাইটটির ঢাকায় অবতরণ করার কথা।