উদীচীসহ ৩১টি সংগঠনের পদযাত্রা

’প্রতিবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ’-এর ব্যানারে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত

প্রকাশিত: ১০:৪৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩০, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক :প্রতিবাদমুখর শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা বলেছেন, ছাত্র ও জনসাধারণকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করায় এই সরকার নৈতিকভাবে ক্ষমতায় থাকার অধিকার হারিয়েছে। অবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। একই সঙ্গে এই সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে ‘ছাত্র-জনতাকে হত্যার প্রতিবাদে প্রতিবাদী গানের মিছিল’ শিরোনামে  সমাবেশ ও পদযাত্রা থেকে এসব দাবি জানায়। ‘প্রতিবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ’-এর ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয়।

উদীচীসহ ৩১টি সংগঠনের এই জোট বেলা তিনটায় জিপিএর সামনে শহীদ নূর হোসেন চত্বরে সমাবেশের আয়োজন করে। প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে কবি, শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা লাল রঙের পোশাক পরে মাথায় লাল ফিতে বা গলায় লাল স্কার্ফ বেঁধে সমাবেশে অংশ নেন। তাঁদের হাতে ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিতে নিহত আবু সাঈদসহ অনেকের ছবি ও প্রতিবাদী স্লোগান-সংবলিত প্ল্যাকার্ড, জাতীয় পতাকা ও লাল পতাকা। আরও ছিল হাতে লেখা পোস্টার ও ব্যঙ্গচিত্র, ছাপচিত্র ও হাতে আঁকা ছবি-সংবলিত ফেস্টুন।

হত্যাকারীদের বিচার, সরকারের পদত্যাগ, আটক ছাত্রনেতাসহ সবার মুক্তি, মামলা-হয়রানি বন্ধের দাবি নিয়ে স্লোগানে স্লোগানে শহীদ নূর হোসেন চত্বর মুখর করে তোলেন প্রতিবাদী শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীরা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, তাঁরা বেলা সাড়ে তিনটার দিকে এখান থেকে প্রতিবাদী গানে গানে পুরান ঢাকার বাহাদুরশাহ পার্কের উদ্দেশে পদযাত্রা করেন। সেখানে তাঁদের সমাবেশ করার কথা ছিল। তবে তাঁরা বেশি এগোতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে প্রবেশের মুখেই পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। একপর্যায়ে শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীদের অনেক পথের ওপরেই বসে পড়েন। মাইকে গান আর স্লোগান চলতে থাকে। এ সময় গোলচত্বর থেকে সদরঘাটমুখী সড়কটি বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশের দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তবে পুলিশ তাঁদের ওপরে বল প্রয়োগ করেনি।

উদীচীর শিল্পীরাসহ শিল্পী সায়ান, কৃষ্ণকলি, আমিরুন নুজহাত, শাওন, মীর সাখাওয়াতেরা ‘আমার প্রতিবাদের ভাষা’,  ‘পূর্ব দিগন্ত সূর্য উঠেছে’, ‘মা গো ভাবনা কেন’, ‘দুর্গমগিরি’সহ একের পর এক উদ্দীপনাময় গান গেয়েছেন। উদীচীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপনের সঞ্চালনায় এই প্রতিবাদী আয়োজনে গানের মাঝে মাঝে ছিল কবিতা আবৃত্তি, স্লোগান ও বক্তৃতা। আবৃত্তি করেন কবি হাসান ফকরী, দীপক সুমন।

উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানাতে এসেছি। এটা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু আমাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। এতে আবারও প্রমাণিত হলো, দেশে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই।’

সরকার নিরীহ ছাত্রদের ন্যায়সংগত অধিকার আন্দোলনকে নির্মমভাবে দমন করছে উল্লেখ করে অমিত বলেন, তাঁদের (বিক্ষোভকারী) ওপর পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে বর্বরভাবে হত্যা করেছে। এর মধ্য দিয়ে সরকার ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। তিনি বলেন, এই আন্দোলন এখন নিরীহ মানুষের হত্যার বিচার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। ছাত্রদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে তাঁরা সরকারের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

আরও বক্তব্য দিয়েছেন বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মুফিজুর রহমান, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, সমাজ চিন্তা ফোরামের প্রতিনিধি লেখক কামাল হোসেন, গণসংস্কৃতি ফ্রন্টের প্রতিনিধি লেখক জাকির হোসেন ও চারণ শিল্পী সংস্থার সুস্মিতা রায়।

বক্তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনের নামে যে অমূল্য জীবনগুলো কেড়ে নেওয়া হয়েছে, সেই ঘটনায় দেশের সব বিবেকবান মানুষের মনে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কোনো স্থাপনা, কোনো ভবনের বিনিময়েই একটি জীবন ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। বহু মায়ের বুক খালি হয়েছে। এখনো কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের আটকে রেখে তাঁদের বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে। এসব বন্ধ করতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, দেশ আজ লুটতরাজ, দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় লুটেরারা বিদেশে পাচার করছে। তাদের কিছুই করা হচ্ছে না। অথচ যাঁরা এর প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের ওপর নেমে আসছে নির্যাতন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে ঐক্যবদ্ধভাবে সরকার পতনের আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে সড়কের ওপর এই প্রতিবাদী আয়োজনের পর সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীরা আগামী শুক্রবার বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদী সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। পরে তাঁরা ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে, কত প্রাণ হলো বলিদান’ গানটি গেয়ে পুরানা পল্টন মোড়ে এসে পদযাত্রা শেষ করেন।