দেশে প্রথম মরণোত্তর কিডনি প্রতিস্থাপন।

প্রকাশিত: ২:১০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২০, ২০২৩

২০ জানুয়ারি ২০২৩

নিজস্ব প্রতিনিধি

দেশে প্রথমবারের মতো ব্রেনডেথ রোগীর শরীর থেকে নেওয়া দুটি কিডনি দুজনের শরীরে সফলভাবে প্রতিস্থাপন (ক্যাডাভেরিক অর্গান ডোনার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন) সম্পন্ন হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন পৃথকভাবে এ অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেছে। এর মাধ্যমে এক মৃতদেহ থেকেই জেগে উঠেছে দুই প্রাণ।

বৃহস্পতিবার বিএসএমএমইউ সংবাদ সম্মেলন করে এবং কিডনি ফাউন্ডেশন মোবাইল ফোনে

প্রতিবেদক কে এ তথ্য জানিয়েছে। কিডনি প্রতিস্থাপন করা দুই রোগী বর্তমানে ভালো আছেন। এছাড়া তার দুটি কর্নিয়া পৃথক দুই রোগীর চোখে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০ বছর বয়সি সারা ইসলাম নামের এক ব্রেনডেথ নারীর শরীর থেকে ওই দুটি কিডনি নেওয়া হয়েছে। বিএসএমএমইউ একটি কিডনি মিরপুরের বাসিন্দা ৩৪ বছর বয়সি শামীমা আক্তারের দেহে প্রতিস্থাপন করেছে। অন্যটি ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশনে চিকিৎসাধীন হাসিনা আক্তারের (৩৭) দেহে প্রতিস্থাপন করেছে।

বিএসএমএমইউ সূত্র জানায়, বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় বিএসএমএমইউ’র কেবিন ব্লকে অপারেশন থিয়েটারে একটি কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু হয়। ইউরোলোজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল এতে নেতৃত্ব দেন। জটিল অস্ত্রোপচার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় ভোর সাড়ে ৪টার দিকে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, কিডনি ও কর্নিয়া দানকারী সারা ইসলামকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় অঙ্গদানের কাজে দাতার পরিবারকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এ চেষ্টা করেন ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুজ্জামান সজীব। চিকিৎসাধীন ওই রোগীর অঙ্গদানে তার মা স্কুল শিক্ষিকা শবনম সুলতানা সম্মতি দেন।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ জানান, সারা ইসলাম ১০ মাস বয়সে দুরারোগ্য টিউমার স্কেলেলিস রোগে আক্রান্ত হন। এ রোগের সঙ্গে দীর্ঘদিন লড়াই করেন তিনি।

এ অবস্থায় অগ্রণী গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি এবং হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভে (ইউডা) ফাইন আর্টসে (চারুকলা) ভর্তি হন। তিনি ফাইন আর্টসের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় বিএসএমএমইউয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সারা ইসলামের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শরিক হন। এসময় উপাচার্য শারফুদ্দিন বলেন, ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্টের প্রথম অঙ্গদাতা সারা ইসলামের নাম বাংলাদেশের চিকিৎসাক্ষেত্রে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ  বলেন, বিএসএমএমই একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করে অন্যটি আমাদের কাছে পাঠায়। এখানে চিকিৎসাধীন হাসিনা আক্তারের দেহে সফলভাবে তা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

তিনি দীর্ঘমেয়াদি কিডনি জটিলতাসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। ৪ বছর থেকে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতেন। কিডনিদাতার সঙ্গে রক্তের গ্রুপ ও অন্যান্য বিষয় ম্যাচ করায় তাকে বেছে নেওয়া হয়। বুধবার রাত ২টায় অস্ত্রোপচার কার্যক্রম শুরুর পর ভোর ৫টায় শেষ হয়।

আমার নেতৃত্বে অস্ত্রোপচার টিমে ছিলেন-অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম, অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন রুবেল, সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু সাইদ ও অধ্যাপক ডা. ফজুলল হকসহ ইউরোলজি, অ্যানেস্থলজি ও নেফ্রোলজি বিভাগের চিকিৎসকরা।

এদিকে, সারা ইসলামের কর্নিয়া দুটির একটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজশ্রী দাশ প্রতিস্থাপন করেছেন সুজন (২৩-২৫) নামের এক যুবকের চোখে।

অপর কর্নিয়াটি ফেরদৌস আক্তার (৫৬) নামের এক নারীর চোখে প্রতিস্থাপন করেছেন ওই হাপাতালের কমিউনিটি অপথালমোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শীষ।