সক্রিয় সব ধরনের অপরাধচক্র। বেড়েছে খুন ছিনতাই দখল চাঁদাবাজি

প্রকাশিত: ৮:২৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০২৪

 

বিশেষ প্রতিনিধি

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা কমে যাওয়ার সুযোগে রাজধানীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। সাথে সাথে বেড়েছে খুন দখল বাজি ও ছিনতাই চাঁদাবাজির ঘটনা। আওয়ামী লীগ সরকার থাকাকালীন অভিযান চালিয়ে শত শত মাদক ব্যবসায়ী ও ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করার পরেও উকিলের মাধ্যমে জামিনে বের হয়ে আবার দ্বিগুণ উদ্যমে নিজ নিজ ব্যবসায় তৎপর ছিল তারা। বর্তমানে আন্তবর্তী কালীন সরকার এর পক্ষ হতে মাদকের বিরুদ্ধে জোরালো কোন অভিযান না থাকায় চক্রটির তৎপরতা বেড়েছে প্রায় ২০ গুণ। যুব সমাজ মাদকাসক্ত হয়ে মাদকের টাকা জোগাড় করার জন্য জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডে। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় তথ্য নিয়ে দেখা যায় মাদক ব্যবসা কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না বরং হয়েছে তার উল্টো। গত ৫ আগস্টের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আগের মত জোরালো না থাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের আনাগোনা অনেক গুণ বেড়েছে। যার সাথে বেশিরভাগই গত সরকারের দলীয় লোকজন জড়িত। যার বাস্তব উদাহরণ আওয়ামী লীগের শ্যামপুর থানার সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ তোফায়েল আহমেদ। তিনি সরকার পতনের পর আত্মগোপনে থেকেই এখন শ্যামপুর এলাকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে বেশ দাপটের সাথেই ছিলেন আওয়ামী লীগের শ্যামপুর সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ তোফায়েল আহমেদ। ক্ষমতার দাপটে পুরো এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।তার বিশাল বাহিনী দিয়ে শ্যামপুরের পোস্তগোলা কূলীবাগান এলাকায় মাদকের আস্তানা গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক মাদকবিরোধী অভিযান জোরালো না থাকার সুযোগে বেশি মাদক কেনাবেচা হচ্ছে বলে অনেকে অভিযোগ করেন। তোফায়েল আহমেদ আত্মগোপনে থাকার পর মাদকসম্রাট মোঃ মাসুম ও শাওন এ কাজের দায়িত্ব নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়া সহযোগী হিসেবে মাদক কেনাবেচায় মোঃ রাসেল, পিতা-বাদশা। মোঃ মনির,মো:শরিফ, পিতা-আলা মিয়া সহ অনেকেই তাকে সাহায্য করে থাকে। রফিক হোসেন নামের এক স্থানীয় বাসিন্দার বিলেন সহজলভ্য হওয়ায় যুব সমাজ মাদক সেবনে জড়িয়ে পড়ছে। আর মাদকের টাকা জোগাড় করতে জড়িয়ে পড়ছে ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডে। শ্যামপুর ছাড়াও রাজধানীর মোহাম্মদপুর, রামপুরা, খিলগাও, উত্তরা সহ মিরপুরে অস্বাভাবিকভাবে মাদকের কেনাবেচা চলছে বলে তথ্য পাওয়া যায়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক পালাবদলের কারণে নানান খাত দখলে নিতে মাফিয়া চক্র তৎপর। এ কারণে নিজেদের অধিপত্য জানান দিতে লিপ্ত হচ্ছে সংঘর্ষে। একে অপরের সাথে সংঘর্ষে প্রদর্শন করছে অবৈধ স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র সহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের সীমাবদ্ধতার সুযোগ নিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পেশাদার ছিনতাইকারী চক্র। যার সর্বশেষ উদাহরণ সম্প্রতি মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদিয়া হাউসিং লিমিটেড এলাকায় খাদ্য পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের গাড়ি থামিয়ে ১২ লাখ টাকা ও ব্যাংকের চেক বই ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারী চক্র। সিসিটিভি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় ৪ বাইকে মোট ১২ জন ছিনতাইকারী সশস্ত্র অবস্থায় নেসলের গাড়ির উপর হামলা করে এবং অর্থ ও কাগজ ছিনিয়ে নেয়। বাইকে থাকা ১২ জন ছিনতাইকারীর মধ্যে চারজনের পরিচয় সনাক্ত হয়েছে। যারা হলেন ময়লা জামাল,সাব্বির, জাকির ও মাসুদ। চারজনই মোহাম্মদপুরের সোসাইটিতে বসবাস করে। তারা এলাকায় পেশাদারী ছিনতাইকারী হিসেবে পরিচিত। জানা যায় এ ছিনতাইকারী দলটি এলাকায় “শাহীন ও আশিক” গ্রুপ নামে পরিচিত। এসবের পাশাপাশি বাড়ছে ডাকাতি। গত ১১ অক্টোবরে সেনাবাহিনী ও র‍্যাবের পোশাকে এক ব্যবসায়ীর বাসা থেকে ৭৫ লাখ টাকা ৭০ ভরি স্বর্ণ ডাকাতি করা হয়।এ ঘটনায় ১৯ জনকে আটক করে পুলিশ। অন্যদিকে বাড়ছে দখলের ঘটনা। যার বাস্তব উদাহরণ সম্প্রতি ফ্ল্যাট নিয়ে দ্বন্দ্বের জোরে রাজধানীর হাতিরঝিলে সম্প্রচার বিভাগের এক কর্মকর্তা খুন হয়েছেন। ফ্ল্যাট দখলে হাতিরঝিল থানার মহানগর প্রজেক্ট এলাকায় ঘরে ঢুকে তাকে হত্যা করা হয়। এছাড়া গত পাঁচ আগস্ট এর পর থেকে জন্তু শুধু মোহাম্মদপুর এই খুন হয়েছে দশ জন। এসব খুনের নেপথ্য কারণ হচ্ছে আধিপত্য বিস্তার, মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ ও বাজার দখল। প্রকাশ্যে আগ্নেয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া যেন এই এলাকায় নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ফলে নগরবাসীর মধ্যে রয়েছে আতঙ্ক। অন্তবর্তী কালীন সরকারের কাছে জনগণের দাবি, অতি দ্রুত নতুন উদ্যমে প্রশাসনকে নিজ নিজ থানা এলাকায় জোরালো অভিযান পরিচালনা করার আকুল আবেদন।