২০ হাজার র‍্যাব-পুলিশের সতর্ক পাহারা : ক্রাইম পেট্রোল নিউজ

ক্রাইম ক্রাইম

পেট্রোল

প্রকাশিত: ৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১০, ২০২২

নিজস্ব প্রতিনিধি

ঢাকায় আজ বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে নাশকতার আশঙ্কায় সমাবেশস্থল গোলাপবাগ মাঠ, নয়াপল্টন, বায়তুল মোকাররমসহ নগরের গলি, সড়কপথে অন্তত ২০ হাজার পুলিশ ও র‌্যাবের সশস্ত্র সতর্ক পাহারা বসানো হয়েছে। তাদের সহযোগিতা করতে গোয়েন্দা পুলিশের পাশাপাশি অন্তত পাঁচ হাজার আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। রাজধানীর প্রবেশপথসহ প্রধান সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে র‌্যাব ও পুলিশ।

এ ছাড়া বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়াতে না পারে, সে জন্য র‌্যাব-পুলিশ ছাড়াও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষজ্ঞ টিম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাইবার প্যাট্রলিং (নজরদারি) শুরু করেছে।
বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে সরকার ও পুলিশকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে—এ আশঙ্কাতেই এই সতর্কতা।
এসব তথ্য জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর বিএনপি সমাবেশকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করতে রাজধানীজুড়ে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ’

নিরাপত্তা প্রস্তুতি সম্পর্কে শীর্ষ এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি আওয়ামী লীগ সরকারকে বিপাকে ফেলতে নানা পরিকল্পনা নিয়েছে বলে তাদের কাছে আগাম গোয়েন্দা তথ্য আছে। বিশেষ করে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা যেভাবে অবস্থান নিয়েছিলেন তেমন পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। সে সময় তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে যে ধরনের নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল, বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সেই প্রস্তুতিও থাকবে পুলিশের।

ডিএমপির বিশেষ প্রস্তুতি : ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কর্মকর্তারা বলছেন, যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছেন তাঁরা। ডিএমপির পাশাপাশি ঢাকার বাইরে থেকেও কয়েক হাজার ফোর্স আনা হয়েছে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের টিমও বিভিন্ন পয়েন্টে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পুুলিশের বিশেষায়িত দল সোয়াটকেও সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে। হামলা দমনে পারদর্শী পুলিশ সদস্যদের সমাবেশস্থল ও আশপাশ ঘিরে মোতায়েন করা হয়েছে।
গতকাল নয়াপল্টনসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করছে পুলিশ। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, গাবতলী, পোস্তগোলা ব্রিজ, আবদুল্লাহপুর, তিনশ ফুট, কাঁচপুর ব্রিজ, বসিলা ব্রিজসহ ঢাকার সব প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, নাশকতামূলক যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গাজীপুর মহানগর পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

আবাসিক হোটেলে তল্লাশি : রাজধানীর কয়েকটি হোটেলে গিয়ে দেখা গেছে, হোটেলগুলোতে তেমন লোকজন নেই। যাঁরা আছেন তাঁরা সবাই রোগী এবং রোগীর সহযোগী। চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসেছেন। তোপখানা রোডের হোটেল এশিয়ায় গিয়ে দেখা যায়, গত বৃহস্পতিবার থেকে কোনো নতুন কেউ ওঠেনি। তোপখানা রোডের হোটেল কর্ণফুলীর ব্যবস্থাপক শিবু কান্তি দাস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হোটেল ব্যবস্থাপনা নিয়ে পুলিশের লিখিত বা মৌখিক কোনো নির্দেশই আমরা পাইনি। তবে বলতে গেলে এখন হোটেল বোর্ডার শূন্য। ’
মিরপুর ১ নম্বরের হোটেল গ্র্যান্ড প্রিন্সের ব্যবস্থাপক সেলিম উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের হোটেল খোলা, পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশনা আসেনি। ’ মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকার আবাসিক হোটেল রোজভ্যালির ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কোনো পুলিশি নির্দেশনা না থাকলেও আমরা কোনো ঝামেলায় জড়াতে চাই না বলে বৃহম্পতিবার থেকে কোনো কক্ষ ভাড়া দিইনি। ’

গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকার পীর ইয়ামেনি হোটেলের ব্যবস্থাপক আবু সালেহ বলেন, খদ্দের নেই। বিএনপির সমাবেশ কেন্দ্র করে ঝামেলা হতে পারে বলে হয় তো লোকজন আসেনি। এই হোটেলে থাকা কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাসিন্দা সাজ্জাদ আলমকে বলেন, ‘আমি হার্টের রোগী, আজ আমার ডাক্তার দেখানের সময় নেওয়া রয়েছে। তারিখ পরিবর্তন করলে আবার দুই মাস অপেক্ষা করতে হবে তাই ঝামেলা মাথায় নিয়েই চলে এসেছি। ’

নয়াপল্টনের অলিগলিতে ব্যারিকেড : গুলিস্তান ও নয়াপল্টনের বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। কাউকে সন্দেহভাজন মনে হলেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। চেক করা হচ্ছিল মোবাইল ফোনও। নয়াপল্টন থেকে ফকিরাপুল রাস্তা বন্ধ করে অবস্থান নেন বিপুলসংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। ব্যারিকেড দিয়ে অলিগলিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিএনপির কার্যালয়সংলগ্ন পুরো এলাকার দোকানপাট, মার্কেটও বন্ধ দেখা গেছে।

মহাসড়কে তল্লাশিচৌকি : গতকাল সকাল থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশিচৌকি বসায় জেলা ও হাইওয়ে পুলিশ। সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টেও টহল দিতে দেখা গেছে পুলিশের একাধিক টিমকে। ঢাকামুখী যানবাহন, বাসে তল্লাশি করেন পুলিশ সদস্যরা। যাত্রীদের কোথায় যাবেন, কেন যাবেন এবং ঢাকা যাওয়ার কারণ কী—জিজ্ঞাসা করা হয়। উত্তর সন্তোষজনক মনে হলেই ঢাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে।

নৌ পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা টহল : নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা, মেঘনাসহ বিভিন্ন নদীতে গতকাল বিশেষ নিরাপত্তা টহল দিয়েছে নৌ পুলিশ।