কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা আওয়ামী লীগের ‘কর্মী সমাবেশ’ স্থানীয় এমপি বিরোধী সমালোচনা সভায় পরিণত।

প্রকাশিত: ৬:৪২ অপরাহ্ণ, জুন ৪, ২০২৩
কুমিল্লা প্রতিনিধি : কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা আওয়ামী লীগের ‘কর্মী সমাবেশ’ স্থানীয় এমপি বিরোধী সমালোচনা সভায় পরিণত হয়। সমাবেশে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে বেশ কয়েকজন নেতা তাদের বক্তৃতার সিংহভাগ জুড়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে নিয়ে তুমুল সমালোচনা করতে দেখা গেছে।
শনিবার (৩ জুন) দুপুরে চান্দিনার কেরণখাল ইউনিয়নের দোতলা এলাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ টিটু’র ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে উপজেলা আওয়ামীলীগের কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সাংগঠনিক আলোচনার চেয়ে এমপি’র সমালোচনাই বেশি করা হয় বলে দাবী করেন একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা।
সভায় উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ টিটু স্থানীয় সংসদ সদস্যকে উদ্দেশ্য করে বলেন- ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা করা হয়েছে। আমাদের তৃণমূল নেতাকর্মীদের গত দুই বছর উনি বুইড়া (বৃদ্ধা) আঙ্গুল দেখাইছে। উনার সাথে আছে বিএনপি, জামায়াত, এলডিপি।’
উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আহমেদ আলম বক্তৃতায় কয়েকটি পত্রিকা হাতে নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের একটি বক্তৃতা ভুল দাবী করে এমপিকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে বলেন।
এদিকে সভায় মহিচাইল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আবু মুছা মজুমদার বক্তৃতায় গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এমপি নৌকার বিরোধীতা করে তাকে পরাজিত করেছেন বলে অভিযোগ তুলেন। তিনি বলেন- ‘এমপি সাহেব আমার কাছে প্রশাসন সহ বিভিন্ন জায়গায় দেওয়ার কথা বলে ২০ লাখ টাকা চায়। আমি এমপি’র এপিএস সমীর এর নিকট ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি।’
কর্মী সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন- উপজেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি আলাউদ্দিন আল আজাদ মমতাজ, শাহাদাত মজুমদার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ খালেদ, অধ্যাপক হোদায়েত উল্লাহ্, সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল ইসলাম তুহিন, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হাজী মো. শহীদুল ইসলাম, শিক্ষা ও মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক উপাধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, পৌর আওয়ামীলীগ সভাপতি মো. আবদুল জলিল, বরকরই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম মজুমদার শিপন, কেরনখাল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশিদ, বাড়েরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি মো. সেলিম ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ আলম, মাধাইয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. অহিদ উল্লাহ্, মহিচাইল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম, মাইজখার ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি ইমাম হোসেন ফরিদ, বাতাঘাসী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি এ্যাডভোকেট বিল্লাল হোসেন, শুহিলপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান ইমাম হোসেন সরকার, চান্দিনা পৌর যুবলীগ সভাপতি মো. জাকির হোসেন সরকার, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আশেকুল ইসলাম এলাহী, উপজেলা তাঁতীলীগ সদস্য সচিব মো. মোজাম্মেল হক, উপজেলা ছাত্রলীগ সাবেক সভাপতি কাজী ইয়াছিন অভি প্রমুখ। কর্মী সভায় বিভিন্ন ইউনিয়ন, পৌর আওয়ামীলীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের কর্মী সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত নৌকা প্রতীকে বিজয়ী এমপিকে নিয়ে সমালোচনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য মজিবুর রহমান বলেন, যে কোন কর্মী সভা হবে দলের সাংগঠনিক আলোচনা। কিন্তু চান্দিনা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আগামী নির্বাচনে নিজেই নৌকার মাঝি হওয়ার লক্ষ্যে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে স্থানীয় এমপির সম্মান ক্ষুন্ন করতে ওই কর্মী সভার আয়োজন করেছেন। যার প্রমাণ মহিচাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু মুছা মজুমদারের বক্তব্য। আবু মছু মজুমদার নির্বাচন চলাকালিন সময়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেই বলেছিলেন, ‘আমাদের এমপি কারও কাছ থেকে টাকা নেওয়ার মতো এমন মানুষই না। একটি কুচক্রি মহল আমাদের এমপি’র সম্মান ক্ষুন্ন করতে অপপ্রচার চালাচ্ছে’। আর সেই মুছা চেয়ারম্যান সুষ্ঠু ভোটে পরাজিত হয়ে টিটু’র ফাঁদে পা দিয়ে এখন নিজেই মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
তিনি বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘টিটু’র নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের কর্মী সভা আমাদের এমপি’র সমালোচনা সভায় পরিণত!’।