নতুন রাজনৈতিক দল বিএনএম-বিএসপি নিয়ে বিতর্কের মুখে নির্বাচন কমিশন ( ইসি)!

প্রকাশিত: ৭:২৩ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৪, ২০২৩

স্টাফ রিপোর্টার : নির্বাচনি রোডম্যাপ অনুযায়ী গত জুন মাসে নতুন দলের নিবন্ধন দেওয়ার কথা থাকলেও তা দিতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত ১৬ জুলাই বিএনএম ও বিএসপিকে নিবন্ধন দেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। দল দুটির বিরুদ্ধে কোনো আপত্তি থাকলে ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়। বিএনএমের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা রয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে।

প্রসঙ্গত, ইসির নিবন্ধন পেতে ৯৩টি রাজনৈতিক দল আবেদন করলেও তিন দফা যাচাই-বাছাই শেষে গত ১১ এপ্রিল প্রাথমিক বাছাইয়ে টিকে যাওয়া ১২টি দলের তালিকা প্রকাশ করেছিল কমিশন। এরপর গত সপ্তাহে রবিবার এক ডজন দল থেকে মাত্র দুটি দলের নাম প্রকাশ করে আউয়াল কমিশন।

নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য বেশ কিছু শর্ত মানতে হয়। নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী নতুন দল হিসেবে নিবন্ধিত হতে হলে একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক (২১) জেলায় কার্যকর কমিটি এবং সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মহানগর বা থানায় প্রতিটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সংবলিত দলিল থাকার শর্ত পূরণ করতে হবে।

ইসি সূত্র জানা গেছে, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তাদের বিএনএমের ব্যাপারে শর্ত শিথিল করে ইতিবাচক প্রতিবেদনের জন্য বলা হয়। অনেক জেলায় কমিটি না থাকলেও তাৎক্ষণিক কমিটি করার ব্যাপারেও ইসির কর্মকর্তাদের কাজ করতে হয়। উপজেলায় ২০০ ভোটারের সমর্থন সংবলিত দলিল প্রস্তুত করার জন্য ইসির কর্মকর্তাদের চাপ দেওয়া হয়।

এদিকে নির্বাচন কমিশনে বিএনএমের বিরুদ্ধে করা লিখিত অভিযোগে আইনজীবী আবু নাসের খান জানান, মাঠ পর্যায়ের যাচাই-বাছাইয়ে বিএনএম দলটির ৮০টি উপজেলার তথ্য সম্পূর্ণ ঠিক পাওয়া গেছে এবং ১৮টি উপজেলায় সম্পূর্ণ সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তা যাচাইবাছাই না করেই কমিশন এই দলকে ‘সকল শর্ত পূরণ করেছে’ বলে নিবন্ধনের জন্য বাছাই করেছে। এই পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্তের জন্য পুরো প্রক্রিয়াটি প্রশ্নবিদ্ধ। এই ভুলের জন্য ভবিষ্যতে কমিশনকে মারাত্মক আইনি চ্যালেঞ্জ এমনকি বিচারের মুখোমুখি করা হতে পারে। দলটি একটি কার্যকর রাজনৈতিক দল নয়, বরং একটি ভুঁইফোড় অকার্যকর রাজনৈতিক সংগঠন। যার ফলে দলটিকে নিবন্ধন না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এই আইনজীবী। প্রসঙ্গত, অভিযোগকারী নিবন্ধন না পাওয়া দল এবি পার্টির সহযোগী সংগঠন এবি যুব পার্টির আহ্বায়ক কমিটির অফিস সমন্বয়ক।

আপত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনএমের যুগ্ম-আহ্বায়ক ব্যারিস্টার সারওয়ার হোসেন বলেন, আইন, বিধি মেনে নিবন্ধনের যোগ্য হয়েছি। যে আইনজীবী আমাদের বিরুদ্ধে আপত্তির আবেদন দিয়েছেন, তিনি কোনো দলের হয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তা করেছেন।

অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএসপির বিষয়ে ভুক্তভোগীরা বলেন, পারিবারিক বসবাসের জায়গা জবরদখলে নিয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) কেন্দ্রীয় কার্যালয় বানানো হয়েছে। এ অবস্থায় পারিবারিক সম্পত্তি ফিরে পেতে এবং বিএসপিকে নিবন্ধন না দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শাহজাদা সৈয়দ সহিদ উদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারী।

এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, এখনো আমরা তো চূড়ান্তভাবে কাউকে নিবন্ধন দিইনি। যেসব অভিযোগ আসছে বা আরও আসবে, সেগুলো আমরা গণশুনানি করব। শুনানিতে যদি দেখা যায় শর্ত পূরণ করেনি বা অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে তো নিবন্ধন পাবে না।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সাল সেনাসমর্থিত শাসনামলে এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন নবম সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করে। বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪২। নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধন দিলে দ্বাদশ ভোটের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা আরও বাড়বে।