তিন কারণে ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি বাংলাদেশে ক্রাইম পেট্রোল ক্রাইম পেট্রোল News প্রকাশিত: ৭:০৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৪, ২০২৩ নিজস্ব প্রতিনিধি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার দিক থেকে তৃতীয় স্থানে থাকলেও মৃত্যুর হারে বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিন কারণে বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার বেশি। ভবিষ্যতে ডেঙ্গুর ধরন পরিবর্তন হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। ওই তিন কারণ হলো—১. আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা অনুযায়ী মৃত্যুর হার নির্ণয় না করা, ২. প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করতে না পারা এবং ৩. মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বাইরে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসাব্যবস্থায় ঘাটতি থাকা। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা সরকারের দেওয়া হিসাবের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। যারা গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিয়েছে, তাদের গণনায় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে আবার সব হাসপাতালের তথ্য নেই। এতে মৃত্যুর হার অনেক বেশি দেখা গেছে। তিনি বলেন, চিকিৎসাব্যবস্থা দ্বিকেন্দ্রিক না হওয়ার কারণে মৃত্যু বেশি হয়েছে। অর্থাৎ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসায় ঘাটতি থাকায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের যদি প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যেত তাহলে মৃত্যু আরো অনেক কম হতো। গুরুতর রোগীর সংখ্যাও কম হতো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোলের (ইসিডিসি) তথ্য মতে, চলতি বছরের ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত ১০টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৫ লাখ ৬৯ হাজার ৭৪৬ জন আক্রান্ত হয়েছে ব্রাজিলে, মৃত্যু হয়েছে ৯১২ জনের। মৃত্যুর হার ০.০৪ শতাংশ। এরপর পেরুতে আক্রান্ত দুই লাখ ৫৭ হাজার ৮৯ জন, মৃত্যু হয়েছে ৪২৪ জনের, মৃত্যু হার ০.২ শতাংশ। বাংলাদেশে আক্রান্ত দুই লাখ ৪০ হাজার ৯৭ জন, মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ২১৪ জন, মৃত্যু হার ০.৫ শতাংশ। বাংলাদেশের পর মৃত্যু হার বেশি ফিলিপাইনে; দেশটিতে আক্রান্ত ৮০ হাজার ৩১৮ জন, মৃত্যু হয়েছে ২৯৯ জনের, মৃত্যুর হার ০.৪ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতিবছর ১০০টি দেশে প্রায় ৪০ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশে ১৯৬৪ সাল থেকে ডেঙ্গু আক্রান্তের বিষয় রেকর্ড করা হলেও নিয়মিতভাবে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হয় ২০০০ সাল থেকে। মূলত ২০১৭ সাল থেকে ডেঙ্গুর ব্যাপকতা বাড়তে থাকে এবং ২০২৩ সালে এর ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় চারজন, ঢাকার বাইরে ছয়জন মারা গেছে। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৩৫৭ জন। ঢাকার ৩৫৫ জন, ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে এক হাজার দুজন। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই লাখ ৭৬ হাজার ১৬৩ জন। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হলো এক হাজার ৩৮০ জনের। মুশতাক হোসেন বলেন, এখন তো বৃষ্টি নেই, এ জন্য নতুন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমে এসেছে। তবে সামনের বছর যদি ডেঙ্গুর একই ধরন (সেরোটাইপ-২) দ্বারা আক্রান্ত হয়, তবে রোগী কমে যাবে। যদি বদলে যাওয়া ধরনে (সেরোটাইপ-১ অথবা ৪) আক্রান্ত হয়, তবে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি হবে। উপেক্ষিত সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত সমন্বিত ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ নির্দেশনায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিতভাবে চারটি পদ্ধতি প্রয়োগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জৈবিক ব্যবস্থাপনায়—ব্যাকটেরিয়া, উলবাকিয়া মশার মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণ করা। রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ—লার্ভিসাইড ও অ্যাডাল্টিসাইড প্রয়োগ। যান্ত্রিক পদ্ধতি—মশা মারার ট্রাপ প্রয়োগ এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনা—মশা প্রজননস্থল ধ্বংস করা। জানতে চাইলে কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবীরুল বাশার বলেন, আগামী বছরগুলোতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বাড়তে পারে। যদি বাড়ে সেটা খুবই ভয়াবহ হতে পারে। এ জন্য একটি টেকসই পরিকল্পনা করা জরুরি। মশক নিধনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রস্তাবিত কৌশল অনুসরণ করা জরুরি। সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ভূমিকা সুনির্দিষ্ট করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সমন্বিত কর্মকৌশল প্রণয়ন করতে হবে। তিনি বলেন, মশা জরিপ, হটস্পট চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়া, ডেঙ্গু সার্ভেইল্যান্স প্রক্রিয়া সম্পর্কিত নির্দেশনা আরো জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে সমন্বিত কর্মকৌশলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও বিশেষজ্ঞদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে। SHARES জাতীয় বিষয়: #ডেঙ্গু
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার দিক থেকে তৃতীয় স্থানে থাকলেও মৃত্যুর হারে বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিন কারণে বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার বেশি। ভবিষ্যতে ডেঙ্গুর ধরন পরিবর্তন হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। ওই তিন কারণ হলো—১. আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা অনুযায়ী মৃত্যুর হার নির্ণয় না করা, ২. প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করতে না পারা এবং ৩. মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বাইরে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসাব্যবস্থায় ঘাটতি থাকা।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা সরকারের দেওয়া হিসাবের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। যারা গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিয়েছে, তাদের গণনায় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে আবার সব হাসপাতালের তথ্য নেই। এতে মৃত্যুর হার অনেক বেশি দেখা গেছে।
তিনি বলেন, চিকিৎসাব্যবস্থা দ্বিকেন্দ্রিক না হওয়ার কারণে মৃত্যু বেশি হয়েছে। অর্থাৎ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসায় ঘাটতি থাকায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের যদি প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যেত তাহলে মৃত্যু আরো অনেক কম হতো। গুরুতর রোগীর সংখ্যাও কম হতো।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোলের (ইসিডিসি) তথ্য মতে, চলতি বছরের ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত ১০টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৫ লাখ ৬৯ হাজার ৭৪৬ জন আক্রান্ত হয়েছে ব্রাজিলে, মৃত্যু হয়েছে ৯১২ জনের। মৃত্যুর হার ০.০৪ শতাংশ। এরপর পেরুতে আক্রান্ত দুই লাখ ৫৭ হাজার ৮৯ জন, মৃত্যু হয়েছে ৪২৪ জনের, মৃত্যু হার ০.২ শতাংশ। বাংলাদেশে আক্রান্ত দুই লাখ ৪০ হাজার ৯৭ জন, মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ২১৪ জন, মৃত্যু হার ০.৫ শতাংশ। বাংলাদেশের পর মৃত্যু হার বেশি ফিলিপাইনে; দেশটিতে আক্রান্ত ৮০ হাজার ৩১৮ জন, মৃত্যু হয়েছে ২৯৯ জনের, মৃত্যুর হার ০.৪ শতাংশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতিবছর ১০০টি দেশে প্রায় ৪০ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশে ১৯৬৪ সাল থেকে ডেঙ্গু আক্রান্তের বিষয় রেকর্ড করা হলেও নিয়মিতভাবে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হয় ২০০০ সাল থেকে। মূলত ২০১৭ সাল থেকে ডেঙ্গুর ব্যাপকতা বাড়তে থাকে এবং ২০২৩ সালে এর ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় চারজন, ঢাকার বাইরে ছয়জন মারা গেছে। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৩৫৭ জন। ঢাকার ৩৫৫ জন, ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে এক হাজার দুজন। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই লাখ ৭৬ হাজার ১৬৩ জন। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হলো এক হাজার ৩৮০ জনের। মুশতাক হোসেন বলেন, এখন তো বৃষ্টি নেই, এ জন্য নতুন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমে এসেছে। তবে সামনের বছর যদি ডেঙ্গুর একই ধরন (সেরোটাইপ-২) দ্বারা আক্রান্ত হয়, তবে রোগী কমে যাবে। যদি বদলে যাওয়া ধরনে (সেরোটাইপ-১ অথবা ৪) আক্রান্ত হয়, তবে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি হবে। উপেক্ষিত সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত সমন্বিত ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ নির্দেশনায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিতভাবে চারটি পদ্ধতি প্রয়োগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জৈবিক ব্যবস্থাপনায়—ব্যাকটেরিয়া, উলবাকিয়া মশার মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণ করা। রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ—লার্ভিসাইড ও অ্যাডাল্টিসাইড প্রয়োগ। যান্ত্রিক পদ্ধতি—মশা মারার ট্রাপ প্রয়োগ এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনা—মশা প্রজননস্থল ধ্বংস করা। জানতে চাইলে কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবীরুল বাশার বলেন, আগামী বছরগুলোতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বাড়তে পারে। যদি বাড়ে সেটা খুবই ভয়াবহ হতে পারে। এ জন্য একটি টেকসই পরিকল্পনা করা জরুরি। মশক নিধনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রস্তাবিত কৌশল অনুসরণ করা জরুরি। সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ভূমিকা সুনির্দিষ্ট করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সমন্বিত কর্মকৌশল প্রণয়ন করতে হবে। তিনি বলেন, মশা জরিপ, হটস্পট চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়া, ডেঙ্গু সার্ভেইল্যান্স প্রক্রিয়া সম্পর্কিত নির্দেশনা আরো জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে সমন্বিত কর্মকৌশলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও বিশেষজ্ঞদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে।