মুদ্রা তহবিল ছোট করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২৩

 ০৪ জানুয়ারি ২০২৩

দেশীয় সংকটের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটি সীমায় ধরে রাখতে চায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে গঠিত বিভিন্ন তহবিলের ব্যবহার কমাচ্ছে।

ওইসব তহবিলের আকার ছোট করা হচ্ছে। যাতে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী বিভিন্ন তহবিলের বিনিয়াগ করা বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ থেকে সরিয়ে নিলেও এর পরিমাণ বেশি না কমে।

মদানির ক্ষেত্রেও নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপিত রয়েছে। এর বাইরে ব্যাংক জরুরি পণ্য ছাড়া এলসি খুলছে না।

বাণিজ্যিক ব্যাংক বড় অঙ্কের এলসি খুললেও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য না হলে তা স্থগিত করে রাখছে।

সূত্র জানায়, গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরের এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা বাবদ ১১২ কোটি ২০ লাখ ডলার একসঙ্গে পরিশোধ করতে হবে।

আজ বুধবার ওই দেনা পরিশোধের জন্য চিঠি পাঠানো হবে। বৃহস্পতিবার দেনা পরিশোধ করা হবে। আগামী সোমবার রিজার্ভ থেকে তা বাদ দেওয়া হবে।

এর মধ্যে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি খাতের যেসব বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসবে, সেগুলো দিয়ে এলসির দায় মিটিয়ে বাকি যেসব অর্থ থাকবে, সেগুলো রিজার্ভে জমা হবে।

এ হিসাবে রিজার্ভ কিছুটা বাড়তে পারে। গত রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ৩৭৪ কোটি ডলার।

আগামী রোববার পর্যন্ত তা বেড়ে ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের কিছু বেশি হতে পারে।

ওই রিজার্ভ থেকে আকুর দেনা শোধ করা হলে রিজার্ভ ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলারের ঘরে নেমে যেতে পারে।

এদিকে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা ৮০০ কোটি ডলার বাদ দিতে শর্ত আরোপ করেছে।

বর্তমানে রপ্তানি উন্নয়ন (ইডিএফ) তহবিলের বরাদ্দ আছে ৭০০ কোটি ডলার। ২০ কোটি ডলা

শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির বিষয়ে ডলারে আরও দুটি ফান্ড রয়েছে। এর মধ্যে ইডিএফ ফান্ডটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।

আইএমএফ ইডিএফ ফান্ডের আকার কমানোরও সুপারিশ করেছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত রোববার রপ্তানি খাতে কাঁচামাল আমদানিতে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করেছে।

এই তহবিল থেকে রপ্তানিকারকদের ঋণ দেওয়া হবে ৪ শতাংশ সুদে। এ থেকে ঋণ নিয়ে উদ্যোক্তারা ডলার কিনে ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলতে পারবেন।

এ তহবিলের ব্যবহার বাড়িয়ে ইডিএফ তহবিলের আকার ছোট করে ফেলা হবে। এছাড়া ডলার, ইউরো ফান্ডসহ অন্যান্য ফান্ড বাতিল বা আকার কমানো হবে।

এতে বিভিন্ন তহবিলে বিনিয়োগ করা অর্থ কমে যাবে। ফলে ৮০০ কোটি ডলার রিজার্ভ থেকে বাদ দিতে হবে না। আরও কম বাদ দিতে হবে।

সে পথেই হিসাবনিকাশ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া রিজার্ভ থেকে উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট নামে যে ফান্ড গঠন করা হয়েছিল, ওই ফান্ডে আপাতত কোনো ডলার রাখা হবে না।

ওই তহবিল থেকে পায়রা সমুদ্রবন্দরের ড্রেজিং কাজের জন্য একটি কোম্পানিকে ৫২ কোটি ইউরো ঋণের কিছু অংশ ছাড় করা হয়েছে। বাকি অর্থছাড় স্থগিত করা হয়েছে।

এ তহবিল থেকে অন্য প্রকল্পে ঋণ দেওয়াও বন্ধ রয়েছে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীসহ অর্থমন্ত্রী নিজেও রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন তহবিলে বরাদ্দ করা অর্থ বাদ দেওয়ার কথা বলেছেন।

তারা বলেছেন, রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার ধরে ৮০০ কোটি ডলার বাদ দিলে নিট থাকবে ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।

কিন্তু এবার আকুর দেনা শোধ করলে রিজার্ভ ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলারে নেমে আসবে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন তহবিলে বরাদ্দ বৈদেশিক মুদ্রা কমিয়ে রিজার্ভ থেকে বাদ দেওয়ার অংশও কমবে।

ফলে রিজার্ভ একটি মাত্রায় ধরে রাখা সম্ভব হবে। গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে আকুর দেনা বাবদ ১৩৬ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল।

নভেম্বরে দেনা বাবদ এসেছে ৫৬ কোটি ডলার। ডিসেম্বরেও সমপরিমাণ দেনা হয়েছে। ফলে একসঙ্গে ১১২ কোটি ২০ লাখ ডলার পরিশোধ করতে হচ্ছে।

আগে মাসে গড়ে প্রায় ৮০০ কোটি ডলার আমদানি ব্যয় হতো। এখন তা কমে ৬০০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। তারপরও রিজার্ভে চাপ কমেনি।

এদিকে বছরের প্রথম দিন গত ১ জানুয়ারি রপ্তানি বিল কেনার বিপরীতে ডলারের দাম ১ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

আগে রপ্তানি বিলের প্রতি ডলার ১০১ টাকা করে কিনত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ২ জানুয়ারি থেকে ১ টাকা বাড়িয়ে ১০২ টাকা করা হয়েছে।

আমদানি ব্যয় বা বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে আগে প্রতি ডলার বিক্রি করত ৯৯ টাকা করে।

মঙ্গলবার থেকে এর দর আরও ১ টাকা বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়েছে। এ দিন রিজার্ভ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৮ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে।

এসব খাতে ডলারের দাম বাড়ানোর ফলে অন্যান্য উপকরণেও এর দাম বাড়ছে। বিভিন্ন উপকরণের নামে ডলারের দামের বর্তমানে ৬ থেকে ৭ টাকা ব্যবধান রয়েছে।

এই ব্যবধান কমানোর জন্য ডলারের দাম বাড়ানো হচ্ছে। তবে রেমিট্যান্স কেনার ডলারের দাম এখনো সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা রয়েছে।

র আছে ডলার ফান্ডে, ইউরো ফান্ডে আছে ২০ কোটি ইউরো।