রফিকের ২৭০ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দুদকে অভিযোগ

প্রকাশিত: ৪:৫১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৯, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিনিধি

তথ্য গোপন করে বিক্রি করে দেওয়া জমির দলিল বন্ধক রেখে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণের নামে রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জনগণের ২৭০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ঘটনার তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন।

আজ বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা সুফি সাগর সামস্।

সুফি সাগর সামস্ বলেন, ‘এখন বাংলাদেশের উন্নয়নের তুলনা বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ একটি সফল অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে নব-আবির্ভূত একটি দেশ। কিন্তু এই অর্থনৈতিক সফলতা ধ্বংস করে দিচ্ছে কতিপয় অসৎ ব্যবসায়ী নামের প্রতারক চক্র। এই চক্রটি বিগত ১৬ বছরে ১১ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। এ কারণে বাংলাদেশ ডলার সংকটে পতিত হয়েছে।
এই প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে ব্যাংকিং খাত মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। এই প্রতারক চক্র ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের জন্য মারাত্মক জাল-জালিয়াতি করছে।’ 

ফাউন্ডেশেনের প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম এমনই একজন প্রতারক। গত জুন মাসে জালিয়াতির মাধ্যমে বিক্রিত জমির দলিল বন্ধক রেখে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, বসুন্ধরা শাখা থেকে ঋণ গ্রহণের নামে রফিকুল ইসলাম জনগণের ২৭০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

বিগত দিনের হলমার্ক, পিকে হালদার, বিসমিল্লাহ গ্রুপের কেলেঙ্কারিসহ ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনাগুলোর অবিকল রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের ঋণের নামে ব্যাংকের টাকা লুটের ঘটনা।’ 

রংধনু গ্রুপের কর্নধার রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ থাকলেও তাঁর অবৈধভাবে ঋণগ্রহণের বিষয়টি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে সুফি সাগর সামস বলেন, ‘রফিক ২০২২ সালের শেষ দিকে এসব জমি বিক্রি করে দিলেও ঋণ নেন চলতি বছরের জুন মাসে। ঋণের টাকা কোথায় বিনিয়োগ করা হয়েছে, তা কিছুই জানে না ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। একটি সংঘবদ্ধ চক্র অব্যাহতভাবে জনগণের রক্ষিত ব্যাংকের টাকা লুণ্ঠন করে যাচ্ছে। দেশবিরোধী এই অপকর্ম অনতিবিলম্বে বন্ধ হওয়া অত্যাবশ্যক।

অন্যথায় ১৮ কোটি মানুষের সম্ভাবনার বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়ে যাবে।’ 

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক সূত্রের বরাতে আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা জানান, চলতি বছরের ২২ জুন রংধুন গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, তাঁর ছেলে মেহেদী হাসান দীপু, কাউসার আহমেদ অপু ও দীপুর স্ত্রী মালিহা হোসেন রাজধানীর জোয়ার সাহারা, ভাটারা ও গুলশান মৌজার ৩৩৭ দশমিক ৫৯ ডেসিমেল জমি বন্ধক রেখে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বসুন্ধরা শাখা থেকে ২৭০ কোটি ঋণ নিয়েছেন। এর মধ্যে ভাটারা মৌজার চারটি প্লটে রফিকুল ইসলামের বিক্রি করে দেওয়া ৯৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ জমিও রয়েছে।

ব্যাংকে দেওয়া নথি থেকে জানা গেছে, রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ইস্টওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্টের কাছ থেকে এওয়াজবদল দলিল মূলে মালিক হয়েছিলেন। এর মধ্যে ভাটারা মৌজার ‘ই’ ব্লকের ৪৮২, ৪৮৩, ৪৮৪, ৪৮৭, ৪৮৮ ও ৪৮৯ প্লটের ২৮ দশমিক ১৩ শতাংশ, ৫০৭, ৫০৮, ৫১১ ও ৫১২ প্লটের ১৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ৫৩০, ৫৩১, ৫৩২, ৫৩৩, ৫৩৪ ও ৫৩৫ প্লটের ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ, ৫৫১, ৫৫২, ৫৫৬, ৫৫৭ ও ৫৫৮ প্লটের ২৭ দশমিক ৫১ শতাংশ জমি রয়েছে।

উল্লেখিত জমি ওই বছরের ১৮ এপ্রিল সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক বন্ধক রেখে ঋণ নিলেও রফিকুল ইসলাম তা পরিশোধ করে দেন ২০২২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। একই দিন এসব জমির মধ্যে ৪৮২, ৪৮৩, ৪৮৪, ৪৮৭, ৪৮৮ ও ৪৮৯ প্লটের ২৮ দশমিক ১৩ শতাংশ ও ৫৩০, ৫৩১, ৫৩২, ৫৩৩, ৫৩৪ ও ৫৩৫ প্লটের ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ আবুল কাশেম গংদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন রফিকুল ইসলাম। ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর ৫৫১, ৫৫২, ৫৫৬, ৫৫৭ ও ৫৫৮ প্লটের ২৭ দশমিক ৫১ শতাংশ জমি বিক্রি করেন ইমরান করিমের কাছে। এ ছাড়াও গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি তামান্না সুলতানার কাছে ৫০৭, ৫০৮, ৫১১ ও ৫১২ প্লটের ১৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ জমি বিক্রি করে দেন রফিক।

রফিক বিক্রি করে দেওয়ার পর ইস্টওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভলপমেন্ট কর্তৃপক্ষ ইমরান করিমের জমির মালিকানা পরিবর্তনের অনুমোদন দিয়েছেন গত বছরের ৮ ডিসেম্বর। আবুল কাশেম গংদের মালিকানাধীন ২৮ দশমিক ১৩ শতাংশ ও তামান্না ইসলামের ১৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ জমির মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি। এ ছাড়াও আবুল কাশেম গংদের মালিকানাধীন ২২ দশমিক ৭০ শতাংশের আরেকটি প্লটের মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে এ বছরের ১৯ মার্চে।

সুফি সাগর সামস্ বলেন, ‘এসব জমি রফিক এর আগে সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংকে বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণ পরিশোধের পরপরই জমিগুলো অন্যত্র বিক্রি করে দেন। কিন্তু বিক্রির তথ্য গোপন রেখেই ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে আবারও ২৭০ কোটি টাকা ঋণ নেন। ঋণের বিপুল পরিমান অর্থ কোথায়, কোনখাতে বিনিয়োগ করেছেন, সে বিষয়ে ব্যাংকের কাছে কোনো তথ্য নেই। তিন দফায় এসব অর্থ ছাড় করা হলেও প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির টাকা কোথায় বিনিয়োগ হয়েছে সেটা নিশ্চিত না হয়েই তৃতীয় কিস্তির অর্থছাড় করেছে ব্যাংক।’

সাগম সামস্ জানান, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক অবৈধভাবে ঋণ দেওয়া জমিতে বর্তমানে অন্য কম্পানির মালিকের সাইনবোর্ড ঝুলছে। ব্যাংকে রফিকুল ইসলামের বন্ধক দেওয়া চারটি প্লটের মালিকানার বিষয়ে গুলশান রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিশ্চিত করেছেন, বর্তমানে এসব জমি রফিকুল ইসলামের মালিকানায় নেই।