জীবনের গল্পে আলোচিত, প্রশংসিত ‘টুয়েলভথ ফেইল’

প্রকাশিত: ৮:৫১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩, ২০২৪
‘টুয়েলভথ ফেইল’
নিজস্ব প্রতিবেদন

তেমন কোনো বড় তারকা নেই। নেই কোনো অ্যাকশন, শরীর কাঁপানো মিউজিক। সিম্পল একটা গল্প, যা বাস্তব জীবন থেকে নেওয়া। আর পরিচালকের অপূর্ব নির্মাণ।

ব্যস, বছর শেষে বলিউডের সুন্দরতম বিনোদন প্যাকেজ ‘টুয়েলভথ ফেইল।’ 

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে রীতিমতো আলোড়ন তৈরি করেছেন বিক্রান্ত ম্যাসি অভিনীতি চলচ্চিত্র ‘টুয়েলভথ ফেইল।’ ফেসবুক, টুইটার কিংবা এক্স (টুইটার), প্রশংসার ফুলঝুড়ি যে চলচ্চিত্রকে ঘিরে, সেটি ‘টুয়েলভথ ফেইল।’ সিনেমাপ্রেমীদের পজিটিভ রিভিউ এবং সমালোচকদের তুমুল প্রশংসায় মনোমুগ্ধকর এক চলচ্চিত্র দিয়েই বছর শেষ করলো বলিউড।

গত বছর শাহরুখ খানের জওয়ান, পাঠান কিংবা সানি দেওলের অ্যাকশন ধামাকা ‘গাদার ২’ কিংবা অক্ষয় কুমারের সামাজিক বার্তামুলক চলচ্চিত্র ‘ও মাই গড ২’ অথবা রণবীর কাপুরের ধুন্ধুমার অ্যাকশন চলচ্চিত্র ‘অ্যানিমেল’- দর্শক মুগ্ধতায় সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে ‘টুয়েলভথ ফেইল’ তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর সিনেমাহলে মুক্তি পায় এটি। মাত্র ২০ কোটি বাজেটে নির্মিত সিনেমাটি বক্স অফিসে আয় করে ৬৬ কোটির বেশি। হলে দর্শকপ্রিয়তা পাওয়ায় ২৯ ডিসেম্বর মুক্তি দেওয়া হয় ওটিটি প্লাটফর্ম ডিজনি প্লাস হটস্টারে।
ব্যস, ওটিটির কল্যানে বিপুল পরিমাণে দর্শকের কাতারে পৌঁছে পায় ‘টুয়েলভথ ফেইল।’ এরপর থেকেই সবার পছন্দের শীর্ষে। একেবারে ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষে ওঠে আসে এটি। 

1
‘টুয়েলভথ ফেইল’-এর একটি দৃশ্যে বিক্রান্ত ম্যাসি ও মেধা শঙ্কর

‘টুয়েলভথ ফেইল’ ভারতের চম্বলে বসবাসকারী মনোজ শর্মার গল্প নিয়ে নির্মিত, যিনি বর্তমানে ভারতের একজন সম্মানিত আইপিএস অফিসার। মনোজ ছিলেন অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান।

বাবা সৎ ব্যক্তি বিধায় দুর্নীতিবাজদের গ্যারাকলে পড়ে চাকরি হারান। বাড়ির আর্থিক অবস্থা দিন দিন খারাপের পথে যায়। মনোজ ১২তম ক্লাসে ফেল করে কারণ একজন সৎ পুলিশ অফিসারের কারণে সেই বছর তাদের স্কুলে টুকলি (নকল) হয় না। কোনো এক ঘটনায় মনোজ সেই সৎ পুলিশ অফিসারের দ্বারা এতটাই প্রভাবিত হয় যে মনোজ নিজের ভবিষ্যত লক্ষ স্থির করে ফেলে। সেই অফিসারের মতো সৎ পুলিশ কর্মকর্তা হতে চায় মনোজ। আর সেই নীতিবান অফিসার তাকে বলে যে তুমি যদি আমার মতো হতে চাও তাহলে নকল করা ছেড়ে দাও। ব্যস, মনোজ নকল করা ছেড়ে দেয়। জীবনে সব ধরনের অসৎ রাস্তা থেকেও মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারপর তাঁর যাত্রা শুরু হয় প্রশাসনের একজন হওয়ার। ভারতের এক নিম্নবর্তী অঞ্চল থেকে গ্রামের ছেলে মনোজ কি পারবে ভারতের সবচেয়ে সম্মানজনক পদমর্যাদা আইপিএস কর্মকর্তা হতে? পারবে কি ‘ইউপিএসসি’র মতো সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষায় সফল হতে? পারবে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে? পারবে কি দেশের সবচেয়ে সম্মানিত একজন নীতিবান প্রশাসনিক কর্তা হতে? সামনে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে এক মরুভূমির মতো কঠিন যাত্রা। এই যাত্রা নিয়েই নির্মিত ‘টুয়েলভথ ফেইল।’ 

ওটিটির জনপ্রিয় মুখ বিক্রান্ত ম্যাসি এই সিনেমার মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে তাকে এখন পর্যন্ত কতটা অবমুল্যায়ন করা হয়েছে। সুযোগ পেলে তিনি কি জাদু দেখাতে পারেন, তার এক দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেছেন সিনেমাটির মধ্য দিয়ে। চরিত্রটির সঙ্গে তিনি নিজেকে এতটাই মিশিয়ে নিয়েছেন যে বাস্তব জীবনের মনোজকেও টেক্কা দিয়েছেন শতভাগ। সিনেমায় অন্যান্য সবার অভিনয়ও ছিল নজরকারা। অভিনেত্রী মেধা শঙ্কর ছিলেন শ্রদ্ধা জোশির চরিত্রে দারুণ মানানসই। নিজের অভিনয় জাদুতে মুগ্ধ করেছেন বলা চলে। এছাড়াও অনন্ত জোশি, আংশুমান পুস্কার, প্রিয়ানসু চ্যাটার্জি সবাই নিজেদের সর্বোচ্চ অভিনয়শৈলী দেখিয়েছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

1
‘টুয়েলভথ ফেইল’-এর দৃশ্যে বিক্রান্ত ম্যাসি

‘টুয়েলভথ ফেইল’-এর  অন্যতম প্রধান কারিগর, গুণী নির্মাতা বিধু বিনোদ চোপড়া এটি পরিচালনা করেছেন। কাকে কতটা ব্যবহার করে, কোথায় কতটা কাজ তাকে দিয়ে করাতে হবে, প্রতিটি ধাপে তিনি খুব যত্ন নিয়েই নির্মাণ করেছেন এটি। একজন দরিদ্র ছাত্রের শুন্য থেকে শিকড়ে যাওয়ার লড়াইয়ের মাঝে প্রেমের যে এঙ্গেল তিনি রেখেছেন এবং তা সম্পূর্ণরুপে বাস্তবায়ন করেছেন, তা এক কথায় অনবদ্য। বলতে গেলে বিধু বিনোদ চোপড়ার সেরা সিনেমাগুলির মধ্যেঅন্যতম হয়ে থাকবে ‘টুয়েলভথ ফেইল।’

সিনেমার সবচেয়ে সফল আরেকটি দিক হলো শান্তনু মৈত্রের সংগীত। গল্পের সঙ্গে মানানসই এবং মন ছুঁয়ে যাওয়া ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। সাউন্ড এবং এডিটিংও ছিল দশে দশ পাওয়ার মতো। আর এটির স্টোরিটেলিং, সেটিও পরিচালকের নিখুঁত কাজের মধ্যে অন্যতম। চমৎকারভাবে গল্পটি উপস্থাপন করেছেন বিধু বিনোদ চোপড়া।

সর্বোপরি ২০২৩ সালের সবচেয়ে দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্র এবং বিগত সময়গুলোতে বলিউডে নির্মিত বায়োপিকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নন্দিত একটি বায়োপিক হিসেবেই জায়গা করে নিয়েছে ‘টুয়েলভথ ফেইল।’ ছাত্রজীবন ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বলিউডে নির্মিত ‘থ্রি ইডিয়টস’ কিংবা ‘ছিচোড়ে’র মতো সিনেমাগুলো কোটি কোটি শিক্ষার্থীর জন্য অনুপ্রেরণার অন্যতম দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। তাই ছাত্রজীবনে নতুন বছরে আপনার মোটিভেশন প্রয়োজন হলে দেখতে পারেন ‘টুয়েলভথ ফেইল।’ সংগ্রাম, কঠোর পরিশ্রম ও মিষ্টি ভালোবাসার গল্পে তৈরী ‘টুয়েলভথ ফেইল’ আপনাকে জীবনপথে উজ্জীবিত করার পাশাপাশি এক বুক প্রশান্তি এনে দেবে, তা বলাই যায়।