‘থ্রি অফ আস’, মন ছুঁয়ে যাওয়া গল্পে একরাশ মুগ্ধতা

প্রকাশিত: ৮:২৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৫, ২০২৪
‘থ্রি অফ আস’

বিনোদন প্রতিবেদক

সাধারণত আমরা সবাই প্রেমে পড়ি বা কোনো না কোনো সময় প্রেম করেছি। অনেকে প্রেমে সফল হয়, অনেকে ব্যর্থ! তবে দিনশেষে কি আমরা সেই প্রেমের মুহুর্ত বা ভালোবাসার মানুষটাকে পুরোপুরি ভুলতে পারি? চাইলেও কিন্তু পুরোপুরিভাবে সেই মুহুর্ত এবং ভালোবাসার মানুষটাকে আমাদের হৃদয় থেকে মুছে দিতে পারি না। কিছুটা হলেও সেই মানুষটার ছায়া থেকে যায় আমাদের জীবনে। তেমনই এক গল্পে বলিউডের আরেকটি চমৎকার নির্মাণ ‘থ্রি অফ আস।’

‘থ্রি অফ আস’ অদ্ভুত এক ভালোলাগা, তারচেয়েও বেশি পূর্ণতায় মন ভরে যাওয়ার মতো ছবি। বলিউডে বর্তমান সময়ে যে ধরণের ছবি রিলিজ হচ্ছে তার থেকে অনেকটাই আলাদা ‘থ্রি অফ আস।’ আলাদা হলেও এই ছবি অনেক বেশী ভালোলাগার এবং হৃদয়স্পর্শী।

ছবির গল্পে দেখা যায়, শৈলজা মুম্বাইয়ে স্বামী নিয়ে বসবাসকারী এক মধ্যবয়সী নারী।

ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত শৈলজা, ধীরে ধীরে সবকিছু ভুলে যাচ্ছেন। স্বামীর সঙ্গে ছোটবেলাটাকে খুঁজতে তিনি আসেন তার এলাকায়। ছোটবেলায় যেখানে থাকতেন কোঙ্কনের সেই গ্রামে। পুরনো স্কুল, পুরনো বাড়ি, সমুদ্রতট, পুরনো বন্ধু – আর এইসবের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাওয়া এই নিয়েই ‘থ্রি অফ আস।
’ 

1

ছবিটির পরিচালক অবিনাশ অরুণ, যিনি ছবিটির সহ-লেখকও। বাকি দুজন লেখক হলেন ওঙ্কার অচ্যুত বার্ভে এবং অর্পিতা চ্যাটার্জি। নির্মাতা অদ্ভুত এক মায়া তৈরি করেছে ছবির মধ্যে। ছবির আবহ দর্শকদের এক মায়ায় আবদ্ধ করে ফেলবে। নির্মাতা একটা সুতায় বেঁধেছেন গল্পটাকে।

শেফালি শাহ, জয়দীপ আহলাওয়াত, স্বানন্দ কিরকিরে সেই সুতার এক একটি রত্ন। অপরূপ এবং দারুণ! ছবিতে নির্মাতা যে ছোট ছোট মুহুর্ত তৈরি করেছে সেগুলো সত্যি অসাধারণ। ছবিশেষ হলেও যেন রেশ রয়ে যায় সেই মুহুর্তগুলোর। শুরু থেকে চিত্রনাট্য যেভাবে সাজানো হয়েছে তাতে একটুর জন্যও মনে হবে না ছবি তার নিজস্বতা থেকে হারিয়ে যেতে পারে। এত দারুণভাবে এক্সিকিউশন করা হয়েছে। এক কথায় অনবদ্য। 

অবিনাশ অরুণ একজন নির্মাতার পাশাপাশি চিত্রগ্রাহক হিসেবেও বেশ দক্ষ। দৃশ্যম, মাসান, কারবা এবং হিচকি’র মতো ছবির চিত্রগ্রাহক ছিলেন অবিনাশ অরুণ। সেকারণেই হয়ত এই ছবিয় ছবিটোগ্রাফি পুরোপুরি নিজের মতো করে করেছেন নির্মাতা। ছবিটোগ্রাফির জাদুও যেন গল্পের সাথে চলেছে সমান্তরালভাবে। বরুণ গ্রোভার এবং শোয়াইব জুলফি নাজির ছবির সংলাপ লিখেছেন। কি দারুণ সব সংলাপ! প্রত্যেকটা সংলাপ যেন একেকটা কবিতা। কিছু কিছু সংলাপ হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। সংযুক্তা কাজার সম্পাদনা বেশ ভালো। এক দৃশ্য থেকে আরেক দৃশ্যের ছুটে চলার আবহ সম্পাদক ধরে রাখতে পেরেছেন। অলকানন্দা দাসগুপ্তের সংগীত যেন ছবিকে দিয়েছে অন্য মাত্রা। মনকে শান্ত করে দেওয়ার মতো সংগীতায়োজন করেছেন অলকানন্দা দাসগুপ্ত।

1

ছবিতে খারাপ লাগার মতো কোনো কিছুই খুঁজে পাবে না দর্শক। তবে যাদের গতানুগতিক ছবির প্রতি ঝোঁক তাদের জন্য এই ছবি নয়, সেটা বলা যায়। ড্রামা জনরা দেখার প্রতি যাদের আগ্রহ আছে তাদের জন্য ‘থ্রি অফ আস’ সেরা একটা ছবি হতে পারে। ছবিটি নিঃসন্দেহে ২০২৩ এর সেরা ছবিগুলোর একটি।

সবশেষে বলতে চাই শেফালি শাহ, জয়দীপ আহলাওয়াত এবং স্বানন্দ কিরকিরে- এই তিনজনকে নিয়ে। কি দারুণ অভিনয় করেছেন তারা। বিশেষ করে শেফালি শাহ এবং জয়দীপ আহলাওয়াত নিজেদের চরিত্রে ছিলেন দুর্দান্ত। পুরোটা সময়জুড়ে মনে হবে বাস্তব জীবনেরই প্রতিচ্ছবি দেখছেন দর্শকরা। একজন অভিনয়শিল্পীর সেরা অভিনয় বলতে গেলে একেই বলে।

নিউ ইয়র্ক ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে ‘থ্রি অফ আস’ দুটি পুরস্কার জিতেছে। এর বাইরেও দেশ ও দেশের বাইরের বহু আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে কুড়িয়েছে সমালোচকদের বাহবা। ডিজিটাল রিলিজের পর ভারতে সাধারণ দর্শকদের মাঝেও বেশ আলোচনা হচ্ছে ছবিটি নিয়ে। সময় থাকলে দেখে নিতে পারেন ছবিটি। এর ড্রামা, ইমোশন, গল্প আর নির্মাণ- আপনাকে হতাশ করবে না।