অন্যের ওপর হিংস্রতার গ্লানি নিজ পরিবারেও

প্রকাশিত: ৫:৫৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিনিধি

এক কিশোর খুন করে আরেক কিশোরকে। এক পরিবার চিরতরে হারিয়ে ফেলে আদরের সন্তানকে। অন্য পরিবার বয়ে বেড়ায় সন্তানের খুনের মামলার গ্লানি। এতে উভয় পরিবারেই নেমে আসে অন্ধকার, ঘোর অনিশ্চয়তা।

দেশজুড়ে সংঘটিত কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধমূলক নানা কর্মকাণ্ডের পরিণাম এমনই ভয়ংকর। অল্প বয়সী কিশোর গ্যাং সদস্যরা হিংস্র হয়ে নিজের ও অন্যের পরিবারগুলোর দেখা স্বপ্ন নিমিষে ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। 

সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, “‘কিশোর গ্যাং’ শব্দটি দেশ থেকে বিলুপ্ত না করতে পারলে সমাজের চরম অবক্ষয় ঘটবে। কারণ এটি এমন এক শব্দ, যার সঙ্গে জড়িত আমাদের স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ, আমাদের অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানরা।

যারা বড় হয়ে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে হাল ধরার কথা, তারাই অল্প বয়সে অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের অপরাধের শিকার পরিবারগুলো যেমন ভুক্তভোগী, তেমনি নিজেদের পরিবারও। কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারীদের পাশাপাশি সমাজের রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিদের বেশি ভূমিকা রাখার তাগিদ তাদের।” 

জানা গেছে, গত ৯ ফেব্রুয়ারি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে ছাত্রীদের উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করার কারণে গাজী বিল হোসেন নিরব (১৭) নামে একাদশ শ্রেণির এক স্কুলছাত্র খুন হয়।

নিরবের বাবা মারা যান ২০১০ সালে। এরপর থেকে নিরব ও তার ছোট ভাই নাজমুল হাসান নিবিড়কে নিয়ে বেঁচে ছিলেন মা দিলারা বেগম। স্থানীয় একটি কিন্ডার গার্টেনে শিক্ষকতা করে কোনো মতে দুই সন্তানকে বড় করছিলেন। কিন্তু কিশোর গ্যাং কেড়ে নেয় মায়ের স্বপ্নকে। 

নিরবের মা দিলারা বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত ৮ ফেব্রুয়ারি কাজী ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান ছিল।

অনুষ্ঠান চলাকালে বাঘড়া ইউনিয়নের মাগডাল এলাকার আরেফিনের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকজন সদস্য স্কুলের ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। তখন নিরব প্রতিবাদ করে।’ 

তিনি বলেন, ‘পরের দিন শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নিরব নামাজ শেষে বাইরে হাঁটতে বের হয়। এর কিছুক্ষণ পর শুনি আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। কামারগাঁও চৌধুরীবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাশের খাল থেকে নিরবের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধারের পর শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন সে মারা গেছে।’