ইউজিসির নির্দেশনা বারবার অমান্য করেন বেরোবি’র ভিসি

প্রকাশিত: ৮:০৭ অপরাহ্ণ, মে ৩১, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের কিছু কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (৪র্থ গ্রেড) ও সমপর্যায়ের পদে পদোন্নতি দিতে মরিয়া উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হাসিবুর রশীদ। কয়েক বার বাছাই বোর্ডের আয়োজন করলেও ইউজিসির নিষেধাজ্ঞায় সফল হননি তিনি।

এবার একটু ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আবার অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ও সমমর্যাদার কিছু পদে পদোন্নতি দিতে শুক্রবার বাছাই বোর্ডের আয়োজন করা হয়েছে। নজিরবিহীন গোপনীয়তার মধ্যে এই আয়োজন করে প্রার্থীদের মোবাইলে কল করে বোর্ডে উপস্থিত হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।বাছাইবোর্ডে উপস্থিত হতে ডাক পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন একাধিক প্রার্থী।
জানা যায়,বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ও সমমর্যাদার চতুর্থ গ্রেড এর পদসমূহে কর্মকর্তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী উম্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দিতে হবে। এ বিষয়ে ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর সকল বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য জন্য একটি নির্দেশনা প্রদান করে ইউজিসি। যাতে বলা হয়েছে প্রত্যেক  রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অর্থ ও হিসাব এবং লাইব্রেরি এই চার দপ্তরে ৪র্থ গ্রেডভুক্ত অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার বা সমমানের পদ থাকবে। এই পদসমূহে ইউজিসি’র অনুমোদন সাপেক্ষে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ দিতে হবে, পদোন্নতি/আপগ্রেডেশন/পর্যায়োন্নয়ন দেয়া যাবে না।

ইউজিসির এই নির্দেশনা অমান্য করে বেরোবি’র ভিসি অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার/সমমানের পদে পদোন্নতির জন্য গত ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে প্রথম বার কর্মকর্তাদের ৪র্থ গ্রেডে পদোন্নতি দেয়ার জন্য বাছাই বোর্ড এর আয়োজন করেছিলেন। বিষয়টি ইউজিসি’র নজরে আসলে ১১ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে পদোন্নতি বা আপগ্রেডেশন কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ প্রদান করে এবং দুই কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা তলব করেছিল।

এরপর ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর তারিখে পুনরায় একই পদে আপগ্রেডেশনের জন্য বাছাই বোর্ডের সভা আহ্বান করা হলে কমিশন আবারো ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে পুনরায় এ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দুই কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনকে লিখিতভাবে জানাতে বলে। ফলে দি¦তীয় দফায় বোর্ডের কার্যক্রম ভেস্তে যায়।

ইউজিসির নিষেজ্ঞার কারনে উপাচার্য অধ্যাপক হাসিবুর রশীদ বাছাই বোর্ডের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের আপগ্রেডেশন দিতে না পেরে সরকারি ‘‘চাকরি এবং [রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ] (বেতন ভাতাদি) আদেশ ২০১৫ এর অনুচ্ছেদ ১২’’ এর ভুল ব্যাখাপূর্বক বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাগণকে ৪র্থ গ্রেড প্রদানের কার্যক্রম গ্রহণ করলে কমিশন দুই দফা চিঠি দিয়ে সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিলে এই প্রক্রিয়াটিও বাতিল হয়ে যায়।

ইউজিসির এত আপত্তির পরেও তাদের নির্দেশনা অমান্য করে নতুনভাবে নানা কৌশলে কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে  ৩১ মে ২০২৪ শুক্রবার বিকেল ৩টায় ৪র্থ গ্রেডে পদোন্নতি দেয়ার জন্য বাছাইবোর্ডের আয়োজন করা হয়েছে। একই সাথে এই নিয়োগ দ্রুত অনুমোদনের জন্য পরের দিন ১ জুন শনিবার দুপুর ১২টায় সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়েছে। এর আগের উদ্যোগগুলো ভেস্তে যাওয়ায় এবার যাতে নিয়োগ কার্যক্রমের খবর ইউজিসি জানতে না পারে সেজন্য নজিরবিহীন এই গোপনীয়তা করছেন ভিসি। বাছাই বোর্ডের জন্য প্রার্থীদের কোন কার্ড ইস্যু করা হয়নি, দেওয়া হয়নি এসএমএস। সংস্থাপন শাখার অফিসিয়াল মোবাইল থেকে উপ-রেজিস্ট্রার শামীমা সুলতানা বুধবার বিকেল ৫টার পর থেকে ২৫ জন প্রার্থীকে মোবাইলে কল করে ৩১ মে শুক্রবার বিকেল ৩টায় প্রশাসনিক ভবনে উপস্থিত হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থাপন শাখা বাছাইবোর্ড আয়োজনের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে উক্ত বাছাইবোর্ডে উপাচার্যের সভাপতিত্বে ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোঃ মজিব উদ্দিন আহমেদ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার উপস্থিত থাকবেন।
ইউজিসির নির্দেশনা উপেক্ষা করে বার বার এভাবে বাছাইবোর্ড আয়োজনের বিষয়ে উপাচার্য প্রফেসর হাসিবুর রশীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি এবং ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান তাকে পাওয়া যায়নি।