প্রশ্ন ফাঁস কেলেংকারীতে পিএসসির আরো ১৫ কর্মকর্তা নজরদারিতে

প্রকাশিত: ৮:৪৩ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৪, ২০২৪

 

মোঃ আহসানউল্লাহ হাসানঃ
অন্তত ৩০টি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেপ্তারের পর চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। সেই সাথে বিভিন্ন সময়ে কারা প্রশ্নফাঁসে জড়িত ছিল এবং কীভাবে এই প্রশ্নফাঁস করা হতো, নানা তথ্য দিচ্ছেন গ্রেপ্তারকারীরা । এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে ঘুরে ফিরে পিএসসির কয়েকজন কর্মকর্তার নাম আসছে। তাদেরকেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যেকোনো সময় তারা গ্রেপ্তার হতে পারেন এমনটাই জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ের পরীক্ষাসহ আরও প্রায় ৩০টি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে পিএসসির দুই উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক ও দুইজন অফিস সহায়কসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা মূলহোতাদের চিহ্নিত করতে নানা তথ্য সংগ্রহ করছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মোবাইলফোনে পাওয়া তথ্য ও টাকা লেনদেনের প্রমাণাদির ভিত্তিতে বিপিএসসির কয়েকজন কর্মকর্তার নাম ঘুরেফিরে আসছে। এ সংখ্যা সব মিলে প্রায় ১৫ জনের মতো। এছাড়াও যারা তাদের কাছ থেকে প্রশ্ন কিনেছেন তাদের নামও এসেছে। তাদের সংশ্লিষ্টতা মিললে এসব ব্যক্তি চাকরি হারাতে পারেন। পাশাপাশি তাদের গ্রেপ্তার করবে সিআইডি। ফেঁসে যেতে পারেন পিএসসির ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তাও।
সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় পিএসসির অন্তত ছয় কর্মকর্তা নজরদারিতে রয়েছেন। এর বাইরে আরও নয়জনের তথ্য পেয়েছে সিআইডি। সেই ছয় কর্মকর্তা যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন। কারণ তাদের ব্যাপারে আবেদ আলী থেকে শুরু করে বাকি সবাই তথ্য দিয়েছেন।
সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে পিএসসির ডেসপাস রাইটার খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তারা জবানবন্দিতে পিএসসির পরীক্ষা-শাখা (নন- ক্যাডার), তথ্য-প্রযুক্তি শাখা, ইউনিট-১২ ও পিএসসি সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ের বেশকিছু কর্মকর্তা- কর্মচারীর নাম বলেছেন। যেগুলো এখন তদন্তে সামনে এসেছে। ফলে এসব শাখার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যেকোনো সময় গ্রেপ্তারে অভিযান চালাবে সিআইডি।
সিআইডির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে ছয়জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নাম এসেছে তারা বিভিন্ন সময় ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত ছিলেন। তাদের মধ্যে মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাও আছেন। আবার অফিস সহায়ক ও গাড়িচালকও আছেন।
সুত্রে জানা গেছে, পিএসসির পরিচালক এনামুল বশির, সহকারী পরিচালক আবদুর রউফ, সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়, অফিস সহায়ক ডন কুমার ও গাড়িচালক আতাউর রহমানের নাম জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে এই পাঁচজনই ইতোমধ্যে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। এদের মধ্যে পরে এনামুল বশির ও আবদুর রউফ প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল ও আদালতের মাধ্যমে চাকরি ফিরে পান। অফিস সহায়ক ডন কুমার ও গাড়িচালক আতাউর রহমান চাকরিচ্যুত হন দুই বছর আগে। সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায় গত বছর অবসরে গেছেন।
সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা জানান, তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন। যাচাই-বাছাই করছেন। পুলিশ প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এদের মধ্য থেকে ছয়জনকে রিমান্ডে চায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কারণ এরা প্রশ্নফাঁসের অন্যতম হোতা। যাদের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে তারা হলেন, পিএসসির উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক এস এম আলমগীর কবির, উপপরিচালক আবু জাফর, প্রতিরক্ষা ও অর্থ বিভাগ এসিসিডিএফের (বিওএফ) অডিটর প্রিয়নাথ রায়, মিরপুরের পোশাক কারখানার ব্যবসায়ী নোমান সিদ্দিকী ও ব্যবসায়ী জাহেদুল ইসলাম।
সিআইডি ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদে নানা তথ্য জানতে চাইবে। এর মধ্যে নিয়োগ পরীক্ষার মূল প্রশ্ন তারা কীভাবে সংগ্রহ করতেন এবং তাদের কে সরবরাহ করতেন; প্রশ্নফাঁসের এই চক্রটির সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত; কীভাবে তারা প্রশ্নফাঁস করতেন; কারা কারা কীভাবে তাদের কাছ থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করতেন; কীভাবে নিয়োগপ্রার্থী পরীক্ষার্থীর কাছে ওই পদের প্রশ্ন এবং প্রশ্নের উত্তর বিতরণ করতেন এসব বিষয় জানতে চাওয়া হবে। এছাড়াও তারা নিয়োগ প্রার্থীদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র দিয়ে কীভাবে টাকা সংগ্রহ করতেন এবং সেই টাকা কীভাবে আদায় করা হতো; কারা কারা সেই টাকার ভাগ পেতেন; কে কত টাকা পেত এসব তথ্য পাওয়ার জন্য রিমান্ড আবেদন করেছে সিআইডি।
এ বিষয় সিআইডির সাইবার বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমরা প্রত্যেক আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। প্রত্যেকের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি। চক্রটির প্রত্যেক সদস্যকে আমরা গ্রেপ্তারে মাঠে নামব। এই ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।