মিয়ানমারে সংঘাত

সীমান্তের ওপার থেকে গুলি এসে পড়ছে টেকনাফের ঘরবাড়িতে

প্রকাশিত: ৫:০১ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৮, ২০২৪

টেকনাফ সীমান্তের মানুষের জন্য নতুন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি। গতকাল শনিবার ভোর চারটা থেকে থেমে থেমে ব্যাপক গুলিবর্ষণ ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটছে মংডু সীমান্তবর্তী এলাকায়। আজ রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৮ ঘণ্টায় অন্তত ১৮৮টি মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটেছে। সেই সঙ্গে টেকনাফের কয়েকটি গ্রামে ওপারের গুলি এসে পড়ছে। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা না ঘটলেও আতঙ্কে রয়েছেন মানুষ।

টেকনাফ সদর ও পাশের সাবরাং ইউনিয়নের বিপরীতে মংডু টাউনশিপ। মাঝখানে চার কিলোমিটার প্রস্থের নাফ নদ দুই দেশকে বিভক্ত করে রেখেছে। টানা পাঁচ মাস মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে লড়াই–সংঘাত চলছে।

দুই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান ও নুর হোসেন বলেন, টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর হঠাৎ গতকাল ভোর চারটা থেকে ওপারে বিকট শব্দে মর্টার শেল ও গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটছে। থেমে থেমে আজ রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত সীমান্তের ১০-১২টি গ্রামে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে ওপার থেকে ছোড়া রাইফেলের গুলি এপারে এসে পড়ছে। তাতে লোকজনের আতঙ্ক আরও বাড়ছে।

গত ২১ জুলাই সকাল ও বিকেলে ওপারের চারটি গুলি এসে পড়ে সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে। দুটি গুলি পড়েছে শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট এলাকার হোছন আলীর দোকানের সামনে। একটি পড়েছে শাহপরীর দ্বীপ বাজারপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইদ্রিসের বাড়ির আঙিনায় এবং আরেকটি পড়েছে একই পাড়ার মোহাম্মদ আয়াসের বসতবাড়ির সামনের পিলারে। তাতে পিলারটি ক্ষতিগ্রস্তও হয়।

এ বিষয়ে মোহাম্মদ ইদ্রিস ও মোহাম্মদ আয়াস বলেন, সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে গুলি দুটি এসে পড়েছে। তখন ঘটনাস্থলে কেউ থাকলে গায়ে লাগতে পারত। আরও গুলি এসে পড়ার ভয়ে ঘরের লোকজন বেরোতে সাহস পাচ্ছেন না।

শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ার জেলে আমির হোসেন (৫৫) বলেন, রাখাইনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই পল্লির অন্তত ৫০০ জেলে নাফ নদে মাছ শিকারে নামতে পারছেন না। আয়–রোজগারের বিকল্প ব্যবস্থাও নেই। রাখাইন যুদ্ধ আরও তীব্র হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে জেলেপল্লির মানুষ কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না। বেশির ভাগ গুলি পড়ছে নাফ নদের বাংলাদেশ জলসীমানা, পাশের চিংড়িঘের ও প্যারাবনে।

আগের দিন শাহপরীর দ্বীপ মিস্ত্রিপাড়া এলাকার বিভিন্ন স্থানে পড়েছে আরও চারটি গুলি। বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে গুলির খোসা উদ্ধার করেন। এলাকার মানুষজন স্বাভাবিকভাবে চলাফেলা করতে পারছেন না জানিয়ে সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমরা সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় বসবাস করি। সব সময় ভয়ের মধ্যেই থাকতে হচ্ছে। এপার থেকে সবকিছু দেখা যায়। এত দিন বোমার শব্দে এলাকার মানুষ আতঙ্কে ছিলেন, এখন নতুন আতঙ্ক হিসেবে যুক্ত হয়েছে ওপারের গুলি।’

মিয়ানমারের গুলি এপারে এসে পড়ার বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করেও সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশন কমান্ডারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে এই দুই বাহিনীর কর্মকর্তারা শুরু থেকে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন।

তবে টেকনাফে গুলি এসে পড়ার ঘটনা নিশ্চিত করেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী। তিনি বলেন, শাহপরীর দ্বীপের কয়েকটি স্থানে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি এসে পড়েছে বলে তিনি জানতে পারেন। রাখাইন রাজ্যে বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটছে। এ ব্যাপারে টেকনাফ সীমান্তের প্রতিটি গ্রামে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি নিরাপত্তা নিয়ে লোকজনকেও সতর্ক করা হচ্ছে।