কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনে বিএনপির তিন প্রার্থী মাঠে

প্রকাশিত: ৮:১৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৫, ২০২৫

 

 

ইলিয়াস হাওলাদার
সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার

আসন্ন সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট কোন রোড ম্যাপ ঘোষণা করা না হলেও অন্যান্য জায়গার ন্যায় কুমিল্লা -৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনেও বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী এখন পর্যন্ত তিন প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। তবে গ্রুপিং দ্বন্দ্বে দিশেহারা লাকসাম-মনোহরগঞ্জ বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। প্রভাব আর আধিপাত্য নিয়ে হরহামেশা ঘটছে সংঘর্ষের ঘটনা এমন অভিযোগ খোদ স্থানীয় বিএনপি’র অধিকাংশ নেতাকর্মীদের। আগামী সংসদ নির্বাচনে লাকসাম-মনোহরগঞ্জ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল অব. এম আনোয়ারুল আজিম, বিএনপির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম এবং যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় শিল্প বিষয়ক সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক সদস্য এবং নেকসাস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিল্পপতি ড. রশিদ আহমেদ হোসাইনী’র নাম। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে বিএনপির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম ও সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল অব. এম আনোয়ারুল আজিম গ্রুপিংয়ের আগুনে পুড়ে ছাই হচ্ছে লাকসাম- মনোহরগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নেতাদের ক্ষমতা আর নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে দিশেহারা তৃণমূলের ত্যাগী কর্মীরা, হতাশায় ডুবছে সমর্থক গোষ্ঠী। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিভিন্ন স্থানে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে এই দুই গ্রুপ।
অন্যদিকে এখন পর্যন্ত কোনো গ্রুপিং বা দ্বন্দ্বে না জড়িয়ে দলকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন ড. হোসাইনী।চাওর হয়েছেন এমন খবর।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,নিরবে-নিভৃতে সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন সাবেক এই ছাত্রনেতা।সম্প্রতি উপজেলা দুটি’র বিভিন্ন ইউনিয়নে জনসভা এবং তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে বিভিন্ন কর্মসূচি এবং জনসেবার মাধ্যমে অনেকেই তাকে আলোচনার তুঙ্গে রেখেছেন।পক্ষান্তরে,আজিম-কালাম গ্রুপের দ্বন্দ্বের জের ধরে লাকসাম মনোহরগঞ্জে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জানা যায় সম্প্রতি লাকাসামে আবুল কালাম গ্রুপের বিএনপির সাবেক আহবায়ক আবদুর রহমান বাদলের উপর হামলার ঘটনা ঘটে,এতে আবদুর রহমান বাদলকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। এছাড়া যুবদলের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের একটি সাংগঠনিক টিম লাকসামে প্রতিনিধি সভায় অংশগ্রহণ করার কথা জেনে অন্য গ্রুপও তাদের সভায় যোগদানের অনুরোধ করেন। দুপুরে জেলা যুবদলের সাংগঠনিক টিমের নেতৃত্বে আবুল কালাম গ্রুপের কার্যালয়ে যুবদলের প্রতিনিধি সভা শুরু হয়। এ সময় কর্নেল (অব.) এম. আনোয়ারুল আজিম গ্রুপের নেতাকর্মীরা দৌলতগঞ্জ বাজারে মিছিল বের করেন। মিছিলটি দৌলতগঞ্জ উত্তর বাজার প্রদক্ষিণকালে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া’র ঘটনা ঘটে। পরে সেনাবাহনী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয়পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।এছাড়াও মনোহরগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মণপুর বাজার, আশিরপাড় বাজারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, এতে বিএনপির উভয় গ্রুপের ১২ জন আহত হলেও কোনো গ্রুপই মামলা পর্যন্ত যায়নি। গত ২০ ডিসেম্বর উপজেলার সরসপুর ইউনিয়নের রুদ্রপুর গ্রামে উভয় গ্রুপের মধ্যে ঘটে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ পরে মনোহরগঞ্জ থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এছাড়া গত ২১ নভেম্বর মনোহরগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে জনসভার ডাক দেয় লাকসাম মনোহরগঞ্জ সাংগঠনিক দায়িত্ব প্রাপ্ত ও কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম গ্রুপ। জনসভায় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি আহ্বায়ক হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াসিনসহ জেলা নেতাদের অতিথি করা হয়। জনসভায় জেলা নেতাদের আগমনে তাদের স্বগত জানানোর নামে রাস্তার দুপাশে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেয় সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল অব. এম আনোয়ারুল আজিম গ্রুপ। এনিয়ে দুই গ্রুপের মাঝে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নিশ্চিত সংঘাতের ভয়ে আতংকিত হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। ওই কর্মসূচিতে নিশ্চিত সংঘাত হওয়ার আশংকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে আজিম গ্রুপ,এতে নিশ্চিন্তে জনসভা করে কালাম গ্রুপ। গত ২ জানুয়ারি মনোহরগঞ্জে যুবদলের সাংগঠনিক সভাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ককটেল বিস্ফোরণ এবং ৮ টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, ২০জন আহত হয়েছে।
মনোহরগঞ্জ সরকারি স্কুল এন্ড কলেজ অডিটোরিয়ামে উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সভার আয়োজন করে সাংগঠনিক দায়িত্ব প্রাপ্ত বিএনপির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম গ্রুপের উপজেলা যুবদল। সভা প্রতিহতের ঘোষণা দেন সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল অব. এম আনোয়ারুল আজিম গ্রুপ। এনিয়ে মিছিল, পাল্টা মিছিলে সাধারণ মানুষসহ ব্যবসায়ীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিকেলে সভা শেষ পর্যায়ে গেলে আজিম গ্রুপের কয়েকশ নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে অডিটোরিয়ামের দিকে আসলে উভয় গ্রুপে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। বৃষ্টির মতো ছুড়তে থাকা ইটপাটকেলের আঘাতে যুবদল নেতা মোঃ মমিন, ফয়েজ আহমেদ, জসিম উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে এবং তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। পরে সেনাবাহিনী,পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি’র একাধিক নেতাকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন দুই গ্রুপের এমন বিরোধ চলতে থাকলে আগামী সংসদ নির্বাচনে এ আসনটিতে বিএনপি জয়ী হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।তাই কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি তাদের আহ্বান ক্লিন ইমেজের লোক খ্যাত ড. হোসাইনীকেই বেছে নিলে হতে পারে দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের অবসান।তারা বলেন দুই গ্রুপের চরম দ্বন্দ্ব যখন তুঙ্গে ঠিক এমন পরিস্থিতিতে দলের হাল ধরে রেখেছেন।লাকসাম-মনোহরগঞ্জ আসনে বিএনপি’র দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ড. রশিদ আহমেদ হোসাইনী। ইতোমধ্যে ড. হোসাইনি লাকসাম মনোহরগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশ করে যাচ্ছেন। দ্বন্দ্ব সংঘাতে না জড়িয়ে তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মীদের হৃদয়ে জায়গা করে নিচ্ছেন হোসাইনী।নাম প্রকাশ না করার শর্তে আলাপকালে তৃণমূল বিএনপির অনেক নেতাকর্মী বলেন কর্নেল আজিম শারীরিকভাবে অসুস্থ, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা নিয়ে রয়েছে বিস্তর সন্দেহ। তাছাড়া আবুল কালামের বিরুদ্ধে রয়েছে দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কাজ করার নানান অভিযোগ।এসব নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ কর্মীবান্দব নেতা হিসেবে পরিচিত হোসাইনির দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। আগামী নির্বাচনে আজিম,কালামের পাশাপাশি ড. হোসাইনিও মনোনয়ন দৌড়ে শক্ত অবস্থানে থাকবেন বলে মনে করেন দ্বন্দ্ব সংঘাতে ত্যক্ত,বিরক্ত বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা। রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় আগামী দিনে দলীয় গ্রুপিং নিরসনের লক্ষে বিএনপির হাইকমান্ডের লক্ষ্য রাখার দাবি জানান তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা।এ তিনজনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ড. রশিদ আহমদ হোসাইনী জানান গত ৪০ বছর ধরে বিএনপি’র সাথে তিনি জড়িত।দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন লাকসাম এবং মনোরগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ তাকে চায় এবং ভালোবাসে,দল থেকে মনোনয়ন পেলে এই আসনটিতে ধানের শীষ বিজয়ী হবেন।একাধিকবার ফোন করা হলেও অপর দুজনের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।