হারাচ্ছে ঐতিহ্যের ডাকবাক্স, কমছে চিঠি।

প্রকাশিত: ৭:২২ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩

শিবব্রত (বিশেষ প্রতিনিধি)
***************************************

 

“চিঠি দিও প্রতিদিন, চিঠি দিও। নইলে থাকতে পারবো না”- একসময় গানে থাকা এ কথাগুলোই বুঝিয়ে দেয় চিঠির আবেদন জীবনের সঙ্গে ঠিক কতটা মিশে ছিল। প্রিয়জনের হাতে লেখা চিঠি কিংবা প্রিয়জনকে দেওয়া চিঠি দু’য়ের গুরুত্বই ছিল অনেক। কালের বিবর্তনে চিঠির আবেদন ফুরিয়েই গেছে। এখন আর লাল, হলুদ বাক্সে চিঠি জমা হয় না প্রিয়জনের জন্য। ম্যাসেজ, ই-মেইল কিংবা ভিডিও কলের ওপর এতটাই মানুষ মজেছে যে হাতে লেখা চিঠির আর দরকারই পড়ে না তেমন একটা।
নগর জীবনের ব্যস্ততায় হারিয়ে যেতে বসেছে চিঠির আবেদন। লাল রঙের ডাকবাক্সগুলো এখন পড়ে থাকে অবহেলায়। এই যেমন পরশুরাম উপজেলার ৩ নং চিথলিয়া ইউনিয়নের নোয়াপুর পরশুরাম পৌরসভার সলিয়া, গুথুমা এবং ১ নং মির্জানগর ইউনিয়নের পোস্ট অফিস।
অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে নামমাত্র টিকে আছে এই পুরাতন পোস্ট অফিসগুলো।
টিনের ঘরে লাল বোর্ডটি টিকে থাকলেও ডাকবাক্সের রঙ বিলিন হয়ে গেছে বেশ আগেই। সপ্তাহে দু-একবার খোলা হয় এই ডাকঘর। পোস্টমাস্টার ও পিয়ন নিয়ম করেই ডাকঘরে আসেন, তবে কাজ না থাকায় কাটাতে হয় অলস সময়। হবে না’ই বা কেন? কেউ এখানে আর চিঠি পাঠাতে আসে না, মানি অর্ডার করতেও আগমন ঘটে না কারও।
আজ থেকে ৪০ কিংবা ৫০ বছর আগের চিত্রটা কিন্তু এরকম ছিল না। তখন ইউনিয়ন ও গ্রামের প্রতিটি পোস্ট অফিসে ছিল মানুষের আনাগোনা ও ডাকপিয়নের খটখট শব্দ চলত সারাদিন। লাইন ধরে কেউবা টাকা জমা দিতেন, কেউবা আবার টাকা নিতেন। অনেকে আবার আসতেন প্রিয়জনের কাছে চিঠি পাঠাতে।
কিছু চিঠিপত্র অবশ্য এখনও আসে এসব ঠিকানায়। বিভিন্ন ধরনের গেজেট বা সরকারি প্রজ্ঞাপন, কখনও বা সরকারি চালান, চিঠিপত্র বিলি করে মাসিক কাজ টিকে আছে পুরনো এই ডাকঘরগুলো। একটি ডাকবাক্স নামমাত্র টিকে আছে, তবে তার ব্যবহার আর নেই।
বাংলাদেশে বর্তমানে ৯ হাজার ৮৮৬টি ডাকঘর রয়েছে। ডাকঘরগুলো টিকে আছে মানি ট্রান্সফার, সঞ্চয় গ্রহনসহ নানা বিকল্প সেবার মাধ্যমে। অযত্ন, অবহেলা আর অব্যবহৃত হয়ে দেশের অনেক ডাকঘরই অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে। মাসের পর মাস খোলা হয়নি এমন ডাকবাক্সের সংখ্যাও কম নয়।
ডাকসংশ্লিষ্টদের মতে, বেসরকারি কোম্পানিগুলো চিঠি আদান-প্রদানে আধুনিক পদ্ধতি নিয়ে এলেও ডাক বিভাগ এখনো পড়ে আছে সেই আগের যুগেই। আর এ কারণেই মানুষ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছে কুরিয়ার সার্ভিসকে। প্রতাশিত সেবা না পাওয়ার ফলে এই ডাকসেবা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন সবাই। তবে বর্তমানে ডাকঘরের সেবার মান আগের থেকে তুলনায় আধুনিক ও সন্তোষ জনক বলে মনে করেন অনেকে।
ডাকের পোস্টাল সার্ভিস বিভাগের এক হিসাবে দেখা গেছে, মোবাইল ফোনসহ যোগাযোগের নিত্যনতুন সব মাধ্যমের আধিপত্যের কারণে প্রতি বছর অন্তত ১ কোটি হারে কমছে ডাকের সাধারণ চিঠিপত্র লেনদেনের সংখ্যা। এছাড়াও উল্লেখযোগ্যহারে কমছে রেজিস্টার্ড চিঠি ও পার্সেলের সংখ্যা।
আমাদের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাকসেবারও উন্নতি ও আধুনিকায়ন করা উচিত। তবেই ঐতিহ্য আর বর্তমান চাহিদা মিলে আবারও প্রাণ ফিরে পাবে এই লাল বাক্সগুলো।