রাতের ঢাকায় লেজার লাইট আতঙ্কে পন্যবাহী পরিবহন। ক্রাইম পেট্রোল ক্রাইম পেট্রোল News প্রকাশিত: ৫:৫০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩ শিবব্রত( বিশেষ প্রতিনিধি) *************************************** রাতের ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজদের নৈরাজ্য চলছে। রীতিমত পুলিশ স্টাইলের লেজার লাইটে মেরে থামানো হয় পরিবহন।এরপর সন্ত্রাসী স্টাইলের পন্যবাহীসহ বিভিন্ন পরিবহন চালকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় চাঁদার টাকা। এসব চাঁদা বৈধ না অবৈধ,তা জানেন না পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।তবে নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে তারা মুখ বুজে সহ্য করেন।ঢাকার বাইরে থেকে আসা ট্রাকচালকরা বলছেন, রাজধানীর গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী,ওয়ারী, ধোলাইপাড় এলাকার অন্তত ১০-১২ স্হানে দিতে হয় চাঁদা। চাহিদামতো টাকা না দিলে আটকে দেয়া হয় মালামাল।এসব পয়েন্টে সব মিলিয়ে একেকটি গাড়ী অন্তত ১ হাজার টাকার বাড়তি চাঁদা গুনতে হয় তাদের। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সড়কে চলছে চাঁদাবাজি। বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক ও শ্রমিক সংগঠন কতৃপক্ষ সুত্র জানায়, পন্যবাহী গাড়ী থেকে চাঁদাবাজি বন্ধের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের কাছে দৌড় ঝাঁপ করেও কোন লাভ হচ্ছে না। ওই সুত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়,স্হানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং ডিএসসিসি কতৃপক্ষকে একাধিকবার চাঁদাবাজির বিষয়ে জানিয়েছে। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে কিন্তু চাঁদাবাজি বন্ধ করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি সুত্র গনমাধ্যমে কে জানায়,লেজার লাইট মেরে কাভার্ডভ্যান আটকিয়ে চাঁদাবাজি একটি অপরাধ। শুধু এই চাঁদাবাজিই নয়, দেশের প্রতিটি সিটি কর্পোরেশনের এলাকা অতিক্রম করতে সিটি করপোরেশনের নামে টোল আদায় করা হয়।এসব টোল আদায় বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। এরপর ও তা কার্যকর হচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কমিশনার বলেন, চাঁদাবাজি সহ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছে। এধরনের চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অতীতে ও ব্যবস্হা নেয়া হয়েছে।এখনো নজরদারি চলমান রয়েছে। তাছাড়া পরিবহন চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে পুলিশের উর্ধ্বতন পর্যায় থেকে। টাঙ্গাইলের ট্রাকচালক হাবিবুর রহমান বলেন, ২০ শে ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া তিনটায় গাড়ি নিয়ে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় পৌঁছেন তিনি। এ সময় গাড়িতে একজন লেজার লাইট মারেন। পুলিশ মনে করে গাড়ি একটু ধীরগতি করতেই এগিয়ে আসে তিনজন। একজন লাঠি উঁচিয়ে বলল ট্রাক ব্রেক কর, ব্রেক কর বলছি। নইলে গ্লাসে একট বারি দিয়ে গুঁড়া করে ফেলবো।ওই চালক বলেন, ট্রাক থামিয়ে ১০০ টাকা ধরিয়ে দিলাম। ওরা কারা, কেন টাকা চাইছে তা জানতে চাননি বলে জানান ওই চালক। ওই চালক হাবীবুর রহমান জানান, এদের কাছে এক ধরনের ব্লেড থাকে।সেটা দিয়ে আঘাত করতে পারে। এছাড়া গাড়ি ভাঙচুর করলেতো বিরাট ক্ষতি হবে। শেরপুর থেকে সবজি নিয়ে গত ১১ ই ফ্রেব্রুয়ারি রাতে ঢাকায় আসেন চালক হুমায়ূন। গাবতলী এলাকায় কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান ,মূলত সাভারের কালিয়াকৈর থেকে চাঁদাবাজি শুরু হয়। কাওরান বাজার পর্যন্ত পৌছাতে বেশ কয়েকটি স্থানে লেজার লাইট মেরে গাড়ি থামানো হয়। তাদের চাঁদা দিয়েই আমাদের গাড়ি চালাতে হয়।কোথাও সিটি কর্পোরেশনের ইজারাদার টাকা নিচ্ছে, আবার কোথাও রসিদ ছাড়াও টাকা নেয়। কালিয়াকৈর, সাভার আশুলিয়া পৌরসভার ইজারাদারের লোক পরিচয় দিয়ে নেয় ১০০ টাকা করে।আমিন বাজারের লাঠি বাহিনি নেয় ৩০০ টাকা। গাবতলী থেকে মিরপুর-১নম্বর কাঁচাবাজারের দিকে প্রবেশ করলে ট্রাক থেকে গাবতলী টার্মিনালের ইজারাদার পরিচয় দিয়ে নেয় ৫০ টাকা। মিরপুর কাঁচাবাজারে দেড়শ টাকা করে চাঁদা নেয়া হয়। এদিকে ফার্মগেট খেজুর বাগান এলাকায় ট্রাফিক পুলিশকেও চাঁদা দিতে হয়।আর কাওরান বাজারে পাকিংএর নামে চাঁদা দিতে হয় ৮০০ টাকা। অপর একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়,যাত্রাবাড়ীর স্বামীবাগ এলাকায় প্রতিদিন মধ্যরাতে ট্রাক থামিয়ে চাঁদা তোলা হয়।ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টারের আবুল মজিদ মার্কেটের সামনের রাস্তা থেকে যানবাহনের চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। ওই এলাকা থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অনেককে হাতেনাতে ও ধরেছে। র্্যবের একটি সূত্র জানায়, ইজারাদারদের কতিপয় লোক তাদের সীমানার বাইরে সিটি টোল আদায়ের নামে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে টাকা আদায় করে।এরা বেশ কিছু দিন ধরে যাত্রাবাড়ী গোলচত্বরের আশপাশের বিভিন্ন রাস্তায় বিভিন্ন পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় করে। বেশীরভাগ সময় ই ওইসব চাঁদাবাজ র্যাব অথবা সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে বলে ও জানায় ওই সুত্র। গত ৪ ঠা ফেব্রুয়ারি র্যাব ১০ এর একটি দল রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী দোলাই পাড় চৌরাস্তায় অভিযান চালিয়ে রনি,লিটন ও সাকিব নামে তিনজনকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে নগদ বেশ কিছু টাকা ও উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা র্যাবকে জানায়,তারা বেশ কিছু দিন যাবৎ দোলাই পাডসহ আশেপাশের এলাকায় বিভিন্ন রাস্তায় ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও পিক আপ থেকে চালক- হেলপারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অবৈধ ভাবে চাঁদা আদায় করে আসছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়,গত বছর পরিবহন চাঁদাবাজদের ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।এ বছর ও বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা করা হয়েছে।পুরান ঢাকার আলুবাজারে প্রতি গাড়ি থেকে ৮০ থেকে ১৭০ টাকা নিচ্ছে চাঁদাবাজরা। বাবুবাজার ব্রিজের নিচে গাড়ি থেকে ওইসব চাঁদা তোলা হয়। কোর্ট কাছারি ফ্লাইওভারের নিচে এবং মিটফোর্ড ঘাটের সামনে গাড়ি থামিয়ে চাঁদা তোলা হয়। বংশাল থেকে তাঁতীবাজার পর্যন্ত বেশ কয়েকটি স্থানে গাড়ি থামিয়ে চাঁদা আদায় করা হয়।টাকা না দিলে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ চালকদের।চালকরা বলেন,এসব এলাকায় কিছু চাঁদাবাজ আছে প্রভাবশালী। তাদের সাথে কোন কথা বলা যায়না। অভিযোগ রয়েছে,ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় সিটি টোল আদায়ের নামে জোরজবরদস্তি করে বিভিন্ন পরিবহনের চালকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অর্থ ও সংস্হাপন সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির একটি সূত্র জানায়, আমরা বিভিন্ন বাস ও ট্রাক টার্মিনালে ইজারার অনুমোদন দিয়েছি।এর বাইরে কারও টোল আদায়ের অনুমতি নেই। ইজারাদার দের কেউ যদি চাঁদাবাজির মত কাজ করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া অন্য কেউ চাঁদাবাজি করলে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। (চলবে) —————-পর্ব-০১ —————– SHARES অপরাধ/দূর্নীতি বিষয়: