কাঞ্চন সেতুর টোল আদায় ১২-১৩ লাখ টাকা আবিরের তত্তাবদানে ভাগবাটোয়ারা

প্রকাশিত: ৬:২৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৯, ২০২৩
মোঃআবু কাওছার মিঠু 
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে কাঞ্চন সেতুর টোল প্লাজায় প্রতিদিন পরিবহনগুলো থেকে কমপক্ষে ১২ – ১৩ লাখ টাকার টোল আদায় করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে ইঞ্জিনিয়ার আবির  টোলের আদায়কৃত টাকার সিংহভাগ স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিচ্ছে।
সওজের দাবি, সরকারের সিদ্ধান্তেই টোল আদায় করা হয় সেতু থেকে।
অনিয়ম, দুর্নীতি আর স্থানীয় সরকারদলীয় ব্যক্তিবর্গকে চাঁদা দিয়ে অব্যাহত রাখা হয়েছে টোল আদায় । এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা জানান, সেতু থেকে স্থানীয় ৮/১০ জন নেতা মাসিক হারে টাকা পেয়ে থাকেন। সেতু ও সেতুসংলগ্ন রাস্তাঘাট মেরামতে নেই যথাযথ উদ্যোগ। ব্যস্তবহুল ঢাকা-বাইপাস রুটে যানবাহনের বাড়তি চাপ আর টোল আদায়ে ধীরগতির কারণে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন পণ্যবাহী পরিবহনের চালকসহ যাত্রী সাধারণ।
রূপগঞ্জের শীতলক্ষা নদীর ওপর নির্মিত কাঞ্চন সেতুতে টোল আদায়ের কারণে যানজট সব সময় লেগেই থাকে। ধীর গতির এ টোল আদায়ের কারণে যানজটে জনদূ্র্ভোগ চরমে পৌছেছে। শীতলক্ষা নদীর কাঞ্চন সেতুর কাছাকাছি রয়েছে আরও ৩টি সেতু। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে মুড়াপাড়া এলাকায় গাজী সেতু, তারাব এলাকায় সুলতানা কামাল সেতু ও কাচঁপুর এলাকায় কাচঁপুর সেতু। এসব সেতুতে কোন টোল আদায় না হলেও শুধু কাঞ্চন সেতুতে টোল আদায় করা হচ্ছে গত ১৩ বছর ধরে।
আর এ কারণে স্থানীয় লোকজন এ টোল আদায় বন্ধ করতে সরকারের কাছে আবেদন, প্রতিবাদে মানববন্ধন করলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। কাঞ্চন সেতুর এ টোল আদায় বর্তমানে পাবলিক প্রাইভেট পারটনাশীপ (পিপিপি) প্রকল্পে ন্যাস্ত হওয়ায় টোল আদায়ে ধীরগতি ও জন দূরভোগ চরমে পৌছেছে। টোল আদায়ের কারনে সেতুর উভয়পাশে যানজট ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলে যায়। সব থেকে বেশী দূর্ভোগে পরতে হয় এম্বুলেন্স, স্কুলগামী পরিবহন ও জরুরী কাজে বের হওয়া লোকজনের। জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের মদনপুর থেকে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ঢাকা-বাইপাস সড়ক নামে ৪৮ কিলোমিটার রাস্তাকে কাঞ্চন সেতুর মাধ্যমে যুক্ত করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর ও সিলেটের সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের সরাসরি সংযোগ স্থাপনের জন্য সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ২০০৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সেতুটি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় ১০ বছর পর্যন্ত টোল আদায় করার কথা বলা হয়েছিল বলে সওজের একটি সূত্র থেকে জানা গেছে।
সে অনুযায়ী ২০১৬ সালে সেতুটির টোল আদায়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও টোল আদায় এখনও চলছে। উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে উদ্বোধনকালীন সময় থেকে বর্তমানে এ রুটে যান চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০ গুণ। দিনে অন্তত ১৬/১৭ হাজার যানবাহন এ রুটে চলাচল করে বলে জানা যায়। এরমধ্যে ট্রাক, বড় ট্রেইলর, কাভার্ডভ্যান এর সংখ্যা বেশী।
শীতলক্ষ্মা নদীর ওপর রাজধানী ঢাকায় প্রবেশের জন্য চারটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুলো হল মুড়াপাড়া এলাকায় গাজী সেতু, তারাব এলাকায় সুলতানা কামাল সেতু, কাঞ্চন এলাকায় কাঞ্চন সেতু ও কাচঁপুর এলাকায় কাচঁপুর সেতু। এসব সেতুর মধ্যে শুধু কাঞ্চন সেতুতেই মেয়াদ উত্তীর্ণ্যের পরও টোল আদায় করা হচ্ছে। টোলের নির্ধারিত সময়সীমা পার হলেও বন্ধ হয়নি টোল আদায় প্রথা। প্রতিদিন বড় ট্রেইলার থেকে ৩২৫ টাকা, ট্রাক থেকে ১৩০ টাকা, বাস থেকে ১২৫ টাকা হারে ১১টি ক্যাটাগরির পরিবহণ থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে।
 রূপগঞ্জের ভূলতা এলাকার রবিউল ইসলাম বলেন, তারা রোজ কাঞ্চন সেতুর টোল পার হয়ে বসুন্ধারায় যেতে হয়। টোল প্লাজার এ জ্যাম এর কারণে প্রতিদিন ২/৩ ঘন্টা নষ্ট হয়। এ ব্যাপারে পিপিপি প্রজেক্টের কাঞ্চন সেতুর টোল আদায় প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী আবিরের মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। ওনি সাংবাদিকদের নাম্বার জানতে পারলে ফোন কেটে দেন।
পুলিশের এএসআইব নাজমুল  বলেন বাস্তব হলো গাড়ির চাপ বেশি।
ধীর গতিতে টোল আদায় করা ছাড়াও টোল প্লাজার উভয় পাশের সরু রাস্তার কারণ। এদিকে নির্মাণ কাজ চলমান। ঢাকা-বাইপাশ এক্সপ্রেসওয়ে সড়কটি নির্মাণ হলে এ যানজট আর থাকবে না। কাঞ্চন সেতু এলাকার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জুলহাস বলেন, প্রায় সময়ই কাঞ্চন সেতু এলাকা থেকে যানজট সৃষ্টি হয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। যা নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়।
এ ব্যাপারে নারায়নগঞ্জ সড়ক বিভাগের নিরবাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌন বলেন, দশ বছর টোল আদায়ের পর আর টোল আদায় না করার কথা সঠিক নয়। সরকারের সিদ্ধান্তেই টোল আদায় করা হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত টোলের বাইরে বাড়তি টোল নেয়ার কোনো সুযোগ নেই সুতরাং কাউকে চাঁদা দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কাঞ্চন সেতুর টোল আদায় পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ (পিপিপি) প্রকল্পের আওতায় তাদের লোকবল দিয়ে আদায় করে তা শতভাগ সরকারী রাজস্ব খাতে জমা হচ্ছে।
২০২৫ সালে হাইওয়ে রাস্তার কাজ শেষ হলে এখানে টোল আদায় থাকবে না, তবে ঢাকা বাইপাস রোডের টোল আদায় হবে।
তাং ২৯/৪/২৩ইং
 নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি