বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ঠ কুমিল্লার চার উপজেলাার জনজীবন।

প্রকাশিত: ৩:২৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৮, ২০২৩

স্টাফ রিপোর্টার : বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ কুমিল্লার চার উপজেলা। কি দিন আর কি রাত, সমান তালে লোডশেডিংয়ের ফলে ঘন্টার পর পর ঘন্টা বিদ্যুৎহীন থাকছে জেলার চান্দিনা, বরুড়া, মুরাদনগর ও দেবীদ্বার উপজেলার প্রায় ৬ লাখ গ্রাহক। বিদ্যুৎ বিভ্রাটে নাভিশ্বাস জনজীবন।
তীব্র দাবদাহে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে চরম বিপাকে পড়েছে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধীনস্থ চার উপজেলার বাসিন্দারা। গ্রামাঞ্চলের ফিডার গুলোতে লোডশেডিংয়ের ভয়াবহতা প্রবল বলে মনে করেন ভূক্তভোগী গ্রাহকরা। মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অসুস্থ্য রোগীরা। ব্যহত হচ্ছে শিল্প কারখানার উৎপাদন।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর একাধিক সূত্র জানায়, কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধীনে রয়েছে চান্দিনা, বরুড়া, দেবীদ্বার ও মুরাদনগর উপজেলা। এই চার উপজেলায় আবাসিক গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৫ লাখ ৩০ হাজার, বাণিজ্যিক গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার ও শিল্প গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৫ হাজার। ওইসব গ্রাহকের প্রতিদিন পিক আওয়ারে গড়ে চাহিদা রয়েছে ১৫০ মেগাওয়াট এবং অফ পিক আওয়ারে গড়ে ৯৫ থেকে ১০০ মেগাওয়াট। ওই চাহিদার বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ৭০ থেকে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। যার মধ্যে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ‘সামিট পাওয়ার’ থেকে প্রতিদিন ২০ মেগাওয়াট, দেবপুর গ্রীড থেকে ৪০ মেগাওয়াট, জাঙ্গালিয়া গ্রীড থেকে ৭ মেগাওয়াট, তিতাস গ্রীড থেকে ৩ মেগাওয়াট ও পাশ্ববর্তী জেলা চাঁদপুরের কচুয়া গ্রীড থেকে ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। যার ফলে প্রতিদিন ৫৫ থেকে ৬০ মেগাওয়াট লোডশেডিং দিয়ে দিন পার করছে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১।
এদিকে, ওই চার উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামঞ্চলের গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা যায় দিন ও রাতে ৮-১০ ঘন্টা লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের। জেলার মুরাদনগর উপজেলার হাটাশ গ্রামের পলাশ দত্ত, দেবীদ্বার উপজেলা সদরের বাসিন্দা আতিকুর রহমানসহ একাধিক গ্রাহকদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, ‘বিদ্যুৎ আসলে এক ঘন্টা, আর গেলে দুই ঘন্টা’! এই ভাবেই চলে বিদ্যুতের আসা যাওয়ার খেলা।
চান্দিনার বেলাশহর এলাকায় অবস্থিত ডেনিম প্রসেসিং প্লান্ট এর পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন জানান,  আমাদের কাজ চলাকালীন সময়ে বিদ্যুৎ ছাড়া এক মিনিটও চলে না। বিদ্যুৎ না থাকলে জেনারেটর দিয়ে চালিয়ে রাখতে হয় প্রতিষ্ঠানটি। আগে প্রতি মাসে ডিজেল খরচ ১ লক্ষ টাকা লাগতো। এখন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গড়ে প্রায় ৪ ঘন্টা লোডশেডিং থাকায় প্রতিদিনের ডিজেল খরচ দাঁড়ায় প্রায় ৭০ হাজার টাকা! যারফলে পণ্য উৎপাদনে অনেক খরচ বাড়ছে। শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানের বিকল্প নেই বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী।
চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান জানান, অতিরিক্ত লোডশেডিং তীব্র তাপদাহে শিশু থেকে শুরু করে যে কোন বয়সের মানুষ হিট ষ্ট্রোক করতে পারে। হৃদরোগ এবং উচ্চরক্তচাপ ঘটারও সম্ভাবনা থাকে। ঘামাচির মতো চামড়ায় চুলকানি এবং এক ধরণের চর্ম রোগ হিট র?্যাশ হতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত গরমে শিশুদের এলার্জি জনিত ঠান্ডা-কাশি থেকে শুরু করে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। এসব উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে রোগী বাড়ছে। ভর্তি রোগীদের আমরা চিকিৎসা দিলেও বিদ্যুৎ বিভ্রাটে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মো. আবু রায়হান জানান, এখন যে পরিমান বিদ্যুৎ পাচ্ছি তাতেও মোটামুটি চালিয়ে নেয়া যাচ্ছে। তারচেয়ে কম পেলে সমস্যা আরও প্রকট হবে।