বাংলাদেশে শীঘ্রই ‘ভূমি ব্যবহার স্বত্ব আইন’ এবং ‘ভূমি অপরাধ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ প্রণীত হতে যাচ্ছে। ক্রাইম পেট্রোল ক্রাইম পেট্রোল News প্রকাশিত: ৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩ নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে শীঘ্রই ‘ভূমি ব্যবহার স্বত্ব আইন’ এবং ‘ভূমি অপরাধ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ প্রণীত হতে যাচ্ছে। এই নতুন আইনে যে ৭ ধরনের নথি বাতিল হতে চলেছে তা আজকের আলোচনার প্রধান বিষয়। প্রথমে, অনিবন্ধিত দলিল সম্পর্কে একটু কথা বলি। সাধারণত যেসব নথিতে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসারের বৈধ সীল ও স্বাক্ষর নেই, সেসব নথিতে সরকার কোনো রেজিস্ট্রি ফি পায় না, নতুন আইনে এসব নথি বাতিল হয়ে যাচ্ছে। আলোচনার শুরুতে দলিল নিবন্ধনের পদ্ধতি সম্পর্কে আমাদের ভালো ধারণা অর্জন করতে হবে। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে দলিল অবশ্যই নিবন্ধিত হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, বিক্রয় দলিল অবশ্যই নিবন্ধিত হতে হবে। জমি কেনার আগে, বায়না দলিল অবশ্যই ৩০ দিনের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য জমা দিতে হবে। রেজিস্ট্রি ছাড়া দলিলের কোনো আইনি মূল্য নেই। বায়না দলিল নিবন্ধনের তারিখ থেকে এক বছরের মধ্যে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বিক্রয় দলিল দাখিল করতে হবে। হেবা বা দানকৃত সম্পত্তির দলিলও রেজিস্ট্রি করতে হবে। বন্ধকী জমির দলিল রেজিস্ট্রি করতে হবে। জমিদার সম্পত্তির মালিকের মৃত্যুতে, তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি অবশ্যই তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ভাগ করতে হবে এবং পার্টিশন বা আপোস পার্টিশন নিবন্ধিত করতে হবে। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুসারে, জমি রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজনীয়তার মধ্যে একটি হল বিক্রি করা জমির সম্পূর্ণ বিবরণ, দলিলপত্রে দাতা-গ্রহীতার পিতামাতার নাম, সম্পূর্ণ ঠিকানা এবং একটি সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি। যে ব্যক্তি জমি বিক্রি করবে তার নামে উত্তরাধিকার ছাড়াই একটি দলিল থাকতে হবে। দলিলটিতে বিগত ২৫ বছরের মালিকানার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ থাকতে হবে এবং কে কার কাছ থেকে সম্পত্তি কিনেছে। সম্পত্তির প্রকৃত মূল্য, সম্পত্তির চারপাশে সীমানা, নকশা নথিতে থাকা উচিত। একটি হলফনামা থাকতে হবে যে জমিটি ক্রয়কারী ছাড়া অন্য কারো কাছে বিক্রি করা হয়নি। জমির দলিলের মালিকানার সিএস, সিএ, আরএস ধারাবাহিকতা থাকা উচিত (কার পরে কে মালিক ছিলো) এবং প্রয়োজনে দলিলের মাধ্যমে সংযুক্ত করা উচিত। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী রেজিস্ট্রি আইন এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি সম্পর্কে একটু আলোচনা করা প্রয়োজন। রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট, স্ট্যাম্প অ্যাক্ট, ইনকাম ট্যাক্স অ্যাক্ট, ফিনান্স অ্যাক্ট এবং রাজস্ব বিধি ও প্রবিধানের আলোকে নথিগুলি সাধারণত নিবন্ধিত হয়। সব নথির রেজিস্ট্রি ফি সমান নয়। সরকার সমসাময়িক বিবেচনায় সময়ে সময়ে রেজিস্ট্রি ফি নির্ধারণ করে থাকে। কর আরোপের জন্যও সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। উৎসে ভ্যাট এবং ট্যাক্স সর্বদা জমি বিক্রেতা দ্বারা প্রদান করা হবে। আয়কর আইন অনুযায়ী, এই দুই ধরনের করের পরিমাণ নির্ভর করবে বিক্রেতার আয়ের ওপর। এই কর বিক্রেতার নামে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়। উইথহোল্ডিং ট্যাক্স এবং ভ্যাট ছাড়া অন্য সব কর জমির ক্রেতাকে দিতে হবে। নতুন ভূমি আইন প্রণীত হলে অনিবন্ধিত দলিল বাতিল হয়ে যায়। একই সঙ্গে জাল সার্টিফিকেট ও নথি তৈরি করলে সেটিও বাতিল বলে গণ্য হবে। অনেক সময় আমরা দেখতে পাই সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, ভূমি অফিসের সংগ্রহ করা দলিল পুড়ে গেছে। এরপর কিছু সুবিধাবাদী লোক ভূমি অফিসের অসাধু ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ ও ভোগ করতে জাল সনদ ও দলিল তৈরি করে। সেই দলিল কার্যকর হবে না। যদি কেউ অন্যের জমির মালিকানার উদ্দেশ্যে জাল দলিল তৈরি করে তবে জাল দলিল বাতিল হয়ে যাবে। চর, নদীর পাড়ের জমি অবৈধভাবে ব্যক্তিগত জমি দখল করে ভোগ করেছেন অনেকে। এখন থেকে এসব জাল জমির দলিল বাতিল করা হবে। আপনি যদি কারো কাছ থেকে জমি ক্রয় করে থাকেন, কিন্তু তার উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি যে অংশ পান তার চেয়ে বেশি লিখে থাকেন, তাহলে এ ধরনের জমির দলিল বৈধ হবে না। ভূমি আইন (খসড়া) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, প্রায় প্রতিটি মানুষই জমির সঙ্গে যুক্ত। জমির দলিল জাল করলে দ-বিধি আইন, ১৮৬০তেও শাস্তির বিধান রয়েছে। প্রস্তাবিত ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার’ আইনে নতুন শাস্তির বিধান আনা হয়েছে। খসড়া আইনে কারাদণ্ডের কথাও রাখা হয়েছে। ভূমি জালিয়াতি, অবৈধ দখল, প্রতারণা ও অপরাধ দমন, পেশিশক্তি বা অস্ত্র প্রতিরোধে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ নামে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধে শাস্তির বিধানের পাশাপাশি খসড়া আইনে শাস্তির বিধানও যুক্ত করা হয়েছে। খসড়া আইনে দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ার রয়েছে এমন বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট চালু করা হয়েছে। মনে রাখতে হবে যে কিছু ধরনের দলিল আছে, যেগুলো সম্পত্তি হস্তান্তরের দলিল নয়। একটি উদাহরণ উল্লেখ করা যেতে পারে – দলিলের দলিল, পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি (আমমোক্তারনামা) দলিল, উইল দলিল, প্রোবেট দলিল, চুক্তিপত্র দলিল, রেজিস্ট্রি অফিসে বাতিলকরণ দলিল – রেজিস্ট্রির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দলিলের পক্ষগণ সকলের সম্মতিতে একত্রে দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে বাতিল করতে পারেন। সম্পত্তি হস্তান্তরের বিভিন্ন দলিল যেমনযেমন- সাব-কবলা, দানপত্র, হেবার ঘোষণাপত্র, হেবাবিল এওয়াজ ইত্যাদি দলিল রেজিস্ট্রি অফিসে ‘বাতিলকরণ দলিল’ রেজিস্ট্রি করে বাতিল করা যায় না। আইনগত ও যৌক্তিক কারণে দলিল বাতিলের প্রয়োজন হলে আদালতে মামলা দায়ের করে বাতিলের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়। SHARES গণমাধ্যম বিষয়: