বদনজর থেকে বাঁচতে মহানবী (সা.) যে আমল করতে বলেছেন

প্রকাশিত: ১১:৩২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১০, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিনিধি

বদনজর হলো হিংসুকের বিষাক্ত দৃষ্টি। অন্যের অর্জনে জ্বলতে থাকা হিংসুকের বিষাক্ত দৃষ্টিতে অনেক সময় মানুষের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যায়। এ জন্য মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উম্মতদের বদনজর সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত যে রাসুল (সা.) বলেছেন, বদনজর লাগা একটি সত্য ব্যাপার।

(আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৭৯) 

অর্থাৎ মানুষের কুদৃষ্টি আসলেই প্রভাব ফেলে। তাই নিজেকে এবং নিজের সন্তান-সন্ততি ও সম্পদকে মন্দ লোকের কুদৃষ্টির আড়ালে রাখার চেষ্টা করতে হবে। সকাল-সন্ধ্যা মহান আল্লাহর কাছে মন্দ লোকের কুদৃষ্টি থেকে আশ্রয় চাইতে হবে।

অনেক সময় বদনজরের প্রভাবে কোমলমতি শিশুদেরও বিভিন্ন রকম রোগব্যাধি দেখা দেয়।

উম্মে সালামা (রা.) বলেন, (একদিন) মহানবী (সা.) তাঁর ঘরে এক মেয়েকে মলিন চেহারায় দেখলেন। তখন তিনি বলেন, তাকে ঝাড়ফুঁক করাও, কেননা তার ওপর (বদ) নজর লেগেছে। (বুখারি, হাদিস : ৫৭৩৯) 

উবায়দ ইবনে রিফাআ আজ-জুরাকি (রা.) থেকে বর্ণিত যে আসমা বিনতে উমায়স (রা.) বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, জাফরের সন্তানদের খুব তাড়াতাড়ি নজর লাগে। আমি কি তাদের ঝাড়ফুঁক করাতে পারি? তিনি বলেন, হ্যাঁ, কোনো জিনিস যদি তাকদিরকে অতিক্রম করার মতো হতো তবে বদনজর তা অবশ্যই অতিক্রম করতে পারত।

(তিরমিজি, হাদিস : ২০৫৯) 

বদনজর, জাদুটোনা ইত্যাদি থেকে বাঁচতে আমাদের নবীজি (সা.) বিভিন্ন কোরআনি আমল করতেন। পবিত্র কোরআনের আমলের মাধ্যমে বদনজর থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। পবিত্র কোরআনের দুটি সুরা আছে, তার ওপর নিয়মিত আমল করলে বদনজর থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হয়। সাহাবি আবু সাঈদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) মুআউওজাতাইন অর্থাৎ সুরা ফালাক ও সুরা নাস নাজিল না হওয়া পর্যন্ত জিন ও বদনজর থেকে পানাহ চাইতেন। পরে দুটি সুরা নাজিল হওয়ার পর এই দুটিকেই গ্রহণ করেন, তা ছাড়া অন্য সব ছেড়ে দেন।

(তিরমিজি, হাদিস : ২০৫৮) 

নবীজি (সা.) এই দুটি সুরা পড়ে বিশেষ পদ্ধতিতে পুরো শরীরে মুছে নিতেন। বিভিন্ন হাদিসে এই দুটি সুরার মাধ্যমে বদনজর থেকে বাঁচার আমলের পদ্ধতি পাওয়া যায়। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন আপন বিছানায় আসতেন, তখন তিনি তাঁর উভয় হাতের তালুতে সুরা ইখলাস ও মুআউওজাতাইন অর্থাৎ সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়ে ফুঁক দিতেন। তারপর উভয় তালু দ্বারা আপন চেহারা ও দুই হাত শরীরের যত দূর পৌঁছায় তত দূর পর্যন্ত মাসাহ করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, এরপর রাসুল (সা.) যখন অসুস্থ হন তখন তিনি আমাকে অনুরূপ করার নির্দেশ দিতেন। ইউনুস (রহ.) বলেন, আমি ইবনে শিহাব (রহ.)-কে, যখন তিনি তাঁর বিছানায় শুতে যেতেন, তখন অনুরূপ করতে দেখেছি। (বুখারি, হাদিস : ৫৭৪৮)

অন্য হাদিসে অবশ্য সুরা ইখলাস পড়ার বর্ণনাও পাওয়া যায়। অর্থাৎ নবীজি (সা.) সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়ে দুই হাতে ফুঁ দিয়ে পুরো শরীর মুছে নিতেন। আম্মাজান আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে নবী (সা.) প্রতি রাতেই যখন শয্যায় আশ্রয় নিতেন তখন তাঁর দুই অঞ্জলি একত্র করে তাতে ফুঁ দিতেন। সে সময় কুল হুয়াল্লাহু আহাদ, কুল আউজু বিরাব্বিল-ফালাক এবং কুল আউজু বিরাব্বিন-নাস পাঠ করতেন। তারপর উভয় হাতে যথাসম্ভব দেহে মাসেহ করতেন; মাথা, চেহারা ও শরীরের সামনের দিক থেকে তিনি তা শুরু করতেন। এভাবে তিনি তিনবার করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)

বদনজর থেকে বাঁচার আরেকটি চিকিৎসা হলো, যার বদনজর লেগে যায়, তাকে অজু করিয়ে অবশিষ্ট পানি দিয়ে বদনজরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অজু-গোসল করানো। রাসুল (সা.) নিজে এভাবে বদনজরে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা করেছেন। আবু উমামা ইবনে হুনাইফ (রা.) বলেন, আমের ইবনে রবিআ (রা.) সাহল ইবনে হুনাইফ (রা.)-এর কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তখন গোসল করছিলেন। আমের (রা.) বলেন, আমি এমন সুন্দর সুপুরুষ দেখিনি, এমনকি পর্দানশিন নারীকেও এরূপ সুন্দর দেখিনি, যেমন আজ দেখলাম। অতঃপর কিছুক্ষণের মধ্যেই সাহল (রা.) বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলেন। তাঁকে নবী (সা.)-এর কাছে নেওয়া হলো এবং তাঁকে বলা হলো, ধরাশায়ী সাহলকে রক্ষা করুন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কাকে অভিযুক্ত করছ? তারা বলল, আমের ইবনে রবিআকে। তিনি বলেন, তোমাদের কেউ বদনজর লাগিয়ে তার ভাইকে কেন হত্যা করতে চায়? তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের মনোমুগ্ধকর কিছু দেখলে যেন তার জন্য বরকতের দোয়া করে। অতঃপর তিনি পানি নিয়ে ডাকলেন, অতঃপর আমেরকে অজু করতে নির্দেশ দিলেন। তিনি তাঁর মুখমণ্ডল, দুই হাত কনুই পর্যন্ত, দুই পা গোছা পর্যন্ত এবং লজ্জাস্থান ধৌত করলেন। তিনি আমেরকে পাত্রের (অবশিষ্ট) পানি সাহেলের ওপর ঢেলে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। তিনি সাহলের পেছন দিক থেকে পানি ঢেলে দেওয়ার জন্য আমেরকে নির্দেশ দেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৫০৯)