মহানবী (সা.) যেভাবে কথা বলতেন

প্রকাশিত: ১১:৪৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১১, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিনিধি

মানুষের আচার-আচরণ, রুচি ও ভাষিক উৎকর্ষের মাধ্যমে ফুটে ওঠে তার ব্যক্তিত্ব ও স্বভাব। উন্নত রুচিবোধসম্পন্ন মানুষের ভাষা ও বাচনভঙ্গি পরিশুদ্ধ, পরিমিত, শালীন ও সুরুচিসম্পন্ন হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উন্নত সুরুচিবোধসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ভারসাম্যপূর্ণ মনোমুগ্ধকর ব্যক্তিত্ব ও অনুপম চরিত্রের পাশাপাশি তাঁর মুখের ভাষাও পরিশীলিত, মাধুরীময় ও ভারসাম্যপূর্ণ ছিল।

রাসুল (সা.) শুদ্ধভাষী, সুমার্জিত ও আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গির অধিকারী ছিলেন। তাঁর কথায় বাহুল্য, অতিশয়োক্তি, সীমালঙ্ঘন ও কদর্যতা ছিল না। নিম্নে রাসুল (সা.)-এর কথাবার্তা ও বাগভঙ্গির ১০ বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য  তুলে ধরা হলো— 

১. সত্যবাদিতা : রাসুল (সা.) যখনই কথা বলতেন তখন সত্য কথাই বলতেন, সত্যবাদী হিসেবে শৈশব থেকে তাঁর সুখ্যাতি ছিল। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি লিখে রাখ, সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! এ মুখ থেকে সর্বাবস্থায় সত্য ছাড়া আর কিছু বের হয় না।

’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩৬৪৬) 

২. স্পষ্টতা : রাসুল (সা.) সুস্পষ্টভাবে কথা বলতেন। স্পষ্টতা তাঁর কথার অন্যতম গুণ ছিল। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর কথা এত সুস্পষ্ট ছিল যে প্রত্যেক শ্রোতা তাঁর কথা বুঝত।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৩৯)

৩. ধীরস্থিরতা : রাসুল (সা.)-এর কথার অন্যতম গুণ ছিল ধীরস্থিরতা।

তিনি কথাবার্তায় ধীরস্থির ছিলেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) এমনভাবে কথা বলতেন, যদি কোনো গণনাকারীর গণনা করতে ইচ্ছা করে তবে সে গুনতে পারবে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৩৯৯) 

৪. মিষ্টতা : রাসুল (সা.) কথাবার্তায় ও আচার-আচরণে কোমলতা অবলম্বন করতেন। কর্কশ ও রূঢ় ভাষায় কারো সঙ্গে কথা বলতেন না এবং কাউকে সম্বোধনও করতেন না। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি যদি কঠোর হৃদয়ের হতেন, তবে মানুষ আপনার থেকে দূরে চলে যেত।

’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯) 

৫. শালীনতা : রাসুল (সা.)-এর কথাবার্তা শালীনতার ও  শ্লীলতায় সজ্জিত  ছিল। তিনি কখনো অশালীন কথা বলেননি। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) অশালীন, অভিশাপকারী ও গালিদাতা ছিলেন না। তিনি কাউকে তিরস্কার করার সময় শুধু এটুকু বলতেন—কী হলো তার? তার কপাল ধূলিমলিন হোক।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৬৪)

৬. বিশুদ্ধতা : রাসুল (সা.) সবচেয়ে বিশুদ্ধ ভাষার অধিকারী ছিলেন। তাঁর উচ্চারণ, শব্দ প্রয়োগ ও বাচনভঙ্গি সবই ছিল বিশুদ্ধতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেছি এবং সাদ গোত্রে প্রতিপালিত হয়ে তাদের বিশুদ্ধ ভাষা রপ্ত করেছি, এ জন্যই আমি তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বাগ্মী।’ (মুজামুল কাবীর, তাবরানী, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৩৫)

৭. হৃদয়গ্রাহিতা : রাসুল (সা.)-এর কথা অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ছিল। এমনভাবে কথা বলতেন শ্রোতাদের হৃদয়ে তা প্রভাব ফেলত। শ্রোতাদের কেউ বিরক্তি প্রকাশ করত না। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন, ‘নবীজি (সা.) মাঝেমধ্যে আমাদের উপদেশ দিতেন, যেন আমরা বিরক্ত না হই।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৮)

৮. বাহুল্যমুক্ত : রাসুল (সা.) কখনো প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতেন না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির ইসলাম পালনের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অনর্থক কথা ও কাজ ত্যাগ করা। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩১৮)

৯. মর্মসমৃদ্ধ : রাসুল (সা.) ব্যাপক অর্থবোধক বাক্যালাপ করতেন। কথা কম বলতেন এবং সংক্ষিপ্তভাবে বলতেন। এমন সংক্ষিপ্ত কথা বলতেন, যা শব্দ বা উচ্চারণের দিক থেকে হতো অল্প, কিন্তু ব্যাপক অর্থবোধক। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমাকে দান করা হয়েছে সর্বমর্মী বচন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫২৩)

১০.  সময়োপযোগী : রাসুল (সা.) পরিস্থিতি ও শ্রোতার স্তর বুঝে কথা বলতেন। প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ কথা তিনবার পুনরাবৃত্তি করতেন। পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে গলার স্বর উঁচু-নিচু করতেন। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) তাঁর কথাকে তিনবার পর্যন্ত পুনরাবৃত্তি করতেন, যেন তা ভালোভাবে বোঝা যায়।’ (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ২২২)

লেখক : শিক্ষক ও অনুবাদক