মিরপুর বিআরটিএ ঘুষ বানিজ্যের হোতা আনসার কাঞ্চন ও মিলন

প্রকাশিত: ৮:৩৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৪, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

রাজধানীর মিরপুর বিআরটিএ ঘুষ বানিজ্যের মুল হোতা নিরাপত্তার দ্বায়িত্বে থাকা আনসার কমান্ডার কাঞ্চন ও এপিসি মিলন। এই দুজনের নেতৃত্ব কয়েকজনের একটি সংঘবদ্ধ একটি চক্র গড়ে উঠেছে।

এদের বিরুদ্ধে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মিরপুর বিআরটিএ অফিসে ঘুষ বানিজ্যসহ সব অপকর্মে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি বিআরটিএ বহিরাগত দালালদের ও নিয়ন্ত্রণ করছে এই আনসার কমান্ডার।
জানা যায়, পিসি কাঞ্চন সপ্তাহে বহিরাগত দালালদের কাছ থেকে জন প্রতি ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা করে নেওয়া হয় যা মাস শেষে আড়াই লাখ টাকা । এছাড়া নিজস্ব আনসার সদস্যদের দিয়ে বিভিন্ন ধরনে গাড়ীর অবৈধ উপায়ে কাগজ – পত্র ঠিক করার মাধ্যমে সদস্যদের কাজ থেকে প্রতিদিন ১০ /১২ হাজার টাকা নেয় এই আনাসারা।

আকবর নামের একজন দালাল বলেন, আমরা ৮০থেকে ৯০ জন মিলে এখানে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কাজ করি। এই কাজের বিনিময়ে আনসার কমান্ডারকে মাসে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা দিতে হয়। এই টাকা গুলো আনসারের এপিসি মিলনের কাছে দিতে হয়। মিলন আমাদেরকে বলেন আমি পরে কমান্ডার কাঞ্চন স্যারের কাছে টাকা গুলো পৌছিয়ে দেই । টাকা না দিলে আমাদেরকে ভেতরে ঢুকতে বা কাজ করতে দেয় না। টাকা দিলে আবার কাজ করতে দেয়। তিনি আরও বলেন, আমাদের কাজের পাশাপাশি আনসার সদস্যরাও এইসব কাজে জড়িত। ৩০ থেকে ৩৫ জন আনসার সদস্য এখানে রয়েছে। এমনকি আনসার সদস্যরা প্রতিদিন কাজ করে। তারা হলেন, অন্তর, জাকিরুল,মো: আনিছ, শাহিন,আরিফ,শহিদুল, মো: রাজ্জাক, রবিউল ইসলাম, পবন, ইসমাইল, সহ আরো অনেক সদস্যরা। বিআরটিএ’র কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে একের পর এক কাজ করে যাচ্ছে। তাদের জন্য আমরা বেশী একটা কাজ করতে পারি না। তার পরও আনসার কমান্ডারকে সপ্তাহ হিসেবে বা মাস হিসেবে টাকা দিতে হচ্ছে। কাজ হক বা না হক টাকা পরিশোধ করতেই হবে।বিআরটিএ অফিসে সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়, বাধ্য হয়ে নিতে হয় দালাল বা আনসার সদস্যদের সহযোগিতা। বর্তমানে সাবেক অনসার সদস্য ৪০ থেকে ৫০ জন প্রতিদিন কাজ করে যাচ্ছে। এবং প্রতি সপ্তাহে জন প্রতি কমান্ডারকে দিচ্ছে ১ হাজার টাকা করে। বৃহস্পতিবার সকালে মিরপুর বিআরটিএ অফিসের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার সময় কথা হয় অনেকের সঙ্গে। এ সময় ভুক্তভুগী মমিনুল, আব্দুল হামিদ, কাসেম আলী ও আবু বকরের একই অভিযোগ করেন।

ভুক্তভুগীদের অভিযোগ, একদিকে আসতে হয় অনেক দূর থেকে, রাস্তায় থাকে যানজট শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ হওয়ায় কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ডিজিটাল নম্বর প্লেট লাগাতে হচ্ছে মোটরসাইকেলে। বিআরটিএ অফিসে পর্যাপ্ত লোকবল থাকার পরেও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এক সপ্তাহ যদি এভাবেই সময় যায় তাহলে পেটের চিন্তা করব না ডিজিটাল নম্বর প্লেট লাগাব? এমন অনেক ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ডিজিটাল নম্বর প্লেট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, এবং ট্যাক্সটোকের নিতে পড়তে হয় বিভিন্ন ভোগান্তিতে। দালাল ধরলে এ সব আগেই সুন্দর মতো এবং সঠিক সময়ে পাওয়া যায়। নিয়ম অনুযায়ী এ সব সেবা নিতে গেলে সময় ও কাজ দুটোই নষ্ট হচ্ছে। বিআরটিএ অফিসে গেলে দালালের খপ্পরে পড়তে হয় এবং নানা ধরনের জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। তার মধ্যে আবার পোশাকধারী আনসার সদস্যরাও নিরাপত্তা না দিয়ে তারা নিজেরাই দালালির কাজে নামিয়ে পড়েছে ।

তারা এই দালালি কাজে মজা পেয়ে অনেককেই আবার চাকরি অবসর নিয়ে পুরো দমে দালালির কাজে লাগিয়ে যায়। পেশাদার একজন ট্রাক চালক আমিনুল ইসলাম বলেন, বিআরটিএ-এর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালাল এবং আনসারদের মধ্যে যোগসাজশের কারণে সেবাগ্রহীতাদের এ সব ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।ভোক্তভুগীরা বলছেন, দালাল ছাড়া লাইসেন্স পাওয়ার চেষ্টা করাটাও যেন এক ধরনের পাপ। বিআরটি এর সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়ে নিতে হয় দালালের সহযোগিতা। দালাল আর টাকা ছাড়া এখানে কোনো কাজ হয় না।

মোহাম্মদপুরের বসিলা থেকে বিআরটিএ অফিসে ড্রাইভিং লাইসেন্স ডেলিভারি নিতে এসেছেন আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, প্রায় তিন ৪ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর নিয়ম অনুযায়ী লাইসেন্স হাতে পান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, অনেকেই টাকা দিয়ে আগেই নিয়েছেন। আর বিআরটিএ কাগজ সঠিক সময়ে না দিয়ে আরেক ভোগান্তিতে ফেলে।এদিকে দালাল, টাউট ও প্রতারক হতে সাবধান’। এমন সতর্কবার্তা সম্বলিত সাইনবোর্ড চোখে পড়বে রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ সড়ক পবিরবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) গেট দিয়ে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই। শুধু প্রবেশ ফটকেই নয়, এমন সতর্কবার্তা লেখা আরও অনেকগুলো সাইনবোর্ড সাঁটানো আছে মিরপুর বিআরটিএ এর বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে দেয়ালে।

কিন্তু এই সতর্কবার্তাকে ছাপিয়ে, বলা যায় বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দালালদের দৌরাত্ম্যই পুরো বিআরটিএ জুড়েই। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ চান ভুক্তভোগীরা।