দালালের সিন্ডিকেটের লিডার মোঃ উল্লাহর কাছে জিম্মি ফেনীর পরশুরাম ভুমি অফিস।

প্রকাশিত: ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৭, ২০২৩

————————————————————
শিবব্রত(বিশেষ প্রতিনিধি)
————————————————————–

ফেনীর পরশুরামে দালালদের হাতে কার্যত জিম্মি হয়ে পড়েছে উপজেলা ভূমি অফিস। নির্ধারিত সময় পর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বদলি হয়ে অন্যত্র গেলেও দালালরা রয়ে যায় বহাল তবিয়তে। কোনো কোনো কর্মকর্তা দালালদের বিষয়ে প্রথম দিকে লম্ফঝম্ফ করলেও কিছুদিনের মধ্যেই অদৃশ্য কারণে সব থেমে যায়। পরশুরাম উপজেলা ভূমি অফিসের এমন কোনো কাজ নেই যা দালালদের জন্য সম্ভব নয়। দালাল না ধরে সরাসরি অফিসে গেলে সাধারণ মানুষকে পোহাতে হয় নানা ভোগান্তি। এ কারণে কাজ উদ্ধারের স্বার্থে সাধারণ মানুষ দালালদের হাত ধরে উপজেলা ভূমি অফিসে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। আর এর মাধ্যমেই উপজেলা ভূমি অফিসে ধীরে ধীরে ডালপালা বাড়ছে দালালদের। উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে উপজেলা ভূমি অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। সরেজমিন এবং অনুসন্ধানে জানা গেছে, পরশুরাম উপজেলা ভূমি অফিসকে ঘিরে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেইট। দালালদের প্রধান কর্তা হলেন মোঃ উল্লাহ। যাকে ঘিরে সক্রিয় রয়েছে ২৫-৩০ জন দালাল। প্রায় প্রতিদিনই মোঃ উল্লাকে দেখা যায় ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের পাশে চেয়ারে বসে থাকতে। ভূমি অফিসের সব ধরনের কাজে তার কোনো বাধা নেই। মোঃ উল্লাহ’র বিরুদ্ধে রয়েছে ভুমি অফিসে ভুমি সংক্রান্ত দালালীর অসংখ্য অভিযোগ। প্রতিদিন সে নিয়ম করে ভুমি অফিসে হাজির থাকে। বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র জানায়,মোঃ উল্লাহ নিজেকে এ্যাসিল্যান্ড এবং ইউএনও’র কাছের লোক পরিচয় দিয়ে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। প্রতিদিনই তাকে ভুমি অফিসে দেখা যায় কারো না কারো হয়ে দালালী করতে। অভিযোগের ভিত্তিতে সে কেন প্রতিদিনই ভুমি অফিসে আসে এইপ্রশ্নের জবাবে মোঃ উল্লাহ জানায়,তার আত্মীযের একটা কাজ নিয়ে এসেছে। কিন্তু ধারাবাহিক ভাবে দীর্ঘ দিন ধরে তাকে ভুমি অফিসে দেখা যাচ্ছে এবং কতজন আত্মীয় আছে, এই কথার জবাবে মোঃ উল্লাহ পেশী শক্তি দেখিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে এই প্রতিবেদকের উপর তেড়ে আসে। অন্য একটি সূত্র জানায়, ভুমি সংক্রান্ত মামলার শুনানির সময়ে মোঃ উল্লাহ প্রায়ই এ্যাসিল্যান্ডের কক্ষে এ্যাসিল্যান্ডের সামনের চেয়ারে বসে থাকে।এতে মোঃ উল্লাহ বুঝাতে চায় যে এ্যাসিল্যান্ডের সাথে তার ভালো সম্পর্ক আছে। এটা মোঃ উল্লাহ’র দালালীর একটা অভিনব ফাঁদ পাতার কৌশল বলে জানায় ওই সুত্র। ওই সুত্র আরো জানায়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে মোঃ উল্লাহ’র মত দালালরা ভুমি অফিসে রাজত্ব কায়েম করেছে।
এছাড়া সাধারণ মানুষ উপজেলা ভূমি অফিসে সেবা নিতে গিয়ে অফিসার ও দালালদের আলাদা করতে না পেরে প্রতারণার শিকার হয়ে থাকেন। অন্যদিকে ভূমি অফিসের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর কাছে সেবাপ্রত্যাশী মানুষ সহযোগিতা চাইলে তারা দালালদের কাছে পাঠিয়ে দেন। দালালদের সঙ্গে চুক্তি না করে ভূমি অফিসের সেবা পাওয়া দুষ্কর। উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা দালালদের ব্যবহার করে নিজেদের পকেট ভারী করছেন বলে ভুক্তভোগী কয়েকজন অভিযোগে জানান। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ইউনিয়ন ও উপজেলা ভূমি অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে একই স্টেশনে কর্মরত আছেন। একই স্টেশনে দীর্ঘ সময় ধরে কাজের নজির রয়েছে কারো কারো বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন একই এলাকায় অবস্থানের কারণে স্থানীয় দালালদের সঙ্গে তাদের একটি নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ভূমি কর্মকর্তারা দালালদের ব্যবহার করছেন অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন দালালরা লাভবান হচ্ছে অন্যদিকে টাকার পাহাড় গড়ছেন ভূমি অফিসের কর্তারা। ভূমি অফিসের কর্তাদের আস্কারা পেয়ে দালালরা ধরাকে সরা জ্ঞান করছে এবং কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না। জমি খারিজের জন্য ১ হাজার ২৫০ টাকা গ্রহণের নিয়ম থাকলেও এ কাজের জন্য দলিলপ্রতি সর্বনিম্ন ১৫-২০ হাজার টাকা গ্রহণ করা হয় বলে ভুক্তভোগীরা জানান। এছাড়া খাজনা পরিশোধ, মিসকেস, খাস পুকুর ইজারা, হিয়ারিং ইত্যাদি বিষয়ে দালালরা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে উপজেলার ধনীকুন্ডা গ্রামের মোঃ আলী জানান, তিনি জমি খারিজের জন্য এক বছর পূর্বে আবেদন করেছেন। দালাল না ধরায় ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা আজ হবে কাল হবে বলে ঘোরাচ্ছেন। পরে দালাল ধরেও কাজ হয়নি। বেড়াবাড়িয়ার সঞ্জয় জানান, এক বছর আগে একটি মিসকেসের আবেদন করে এখনো কাজটি হয়নি। ভুমি অফিসে কয়েক বার যোগাযোগ করেছেন তার পর ও কাজ হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি জানান, এই জাতীয় আরো হাজারো অভিযোগ রয়েছে কিন্তু ক্ষতির আশঙ্কা করে অনেকেই স্বীকার করছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ভোক্তভোগী জানান, ভূমি অফিসের দেয়ালও ঘুষ খায়। ভূমি অফিসে ঘুষ-বাণিজ্যের বিষয়ে সবারই জানা তারপরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ভূমি অফিসে দালালি করে মোঃ উল্লাহ,সাদ্দাম, ইলিয়াস,নিজাম,মজল হক করিম ইউছুপ সহ অনেকেই। কয়েকজন দালাল কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে।। এই বিষয়ে পরশুরাম উপজেলা সহকারী ভুমি কমিশনার মং চিংনু মারমা বলেন, ‘আমারা সরকার নির্ধারিত মূল্যেই নামজারি করছি। আমি চেষ্টা করছি ভূমি অফিসকে দালালমুক্ত করতে। এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’ পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, ‘আমি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি।’