রাসুল (সা.)-এর তত্ত্বাবধানে তৈরি মদিনা সনদে যেসব ধারা ছিল ক্রাইম পেট্রোল ক্রাইম পেট্রোল News প্রকাশিত: ৬:৩৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২১, ২০২৩ পবিত্র মসজিদ-ই-নববী, মদিনা, সৌদি আরব। ছবি : সংগৃহীত নিজস্ব প্রতিবেদক মদিনাবাসীরা যে আশায় মুহাম্মদ (সা.)-কে মদিনায় আসার আমন্ত্রণ জানায়, হিজরত করার পর তা পূরণ করার জন্য তিনি সচেষ্ট হন। এ লক্ষ্যে তিনি মদিনার পৌত্তলিক ও ইহুদি নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ৪৭টি ধারা সংবলিত একটি সনদ প্রণয়ন করেন। তদানুসারে মদিনায় বসবাসরত ইহুদি, পৌত্তলিক ও মুসলমানদের মধ্য এই সনদ স্বাক্ষরিত হয়। এটি ইতিহাস বিখ্যাত ‘মদিনা সনদ’ (Charter of Medina) নামে পরিচিত। এ সনদের প্রধান ধারাগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো : ১. মদিনা সনদে স্বাক্ষরকারী ইহুদি, পৌত্তলিক ও মুসলমান সম্প্রদায় একটি সাধারণ জাতি গঠন করবে। ২. চুক্তিতে (মদিনা সনদে) স্বাক্ষরকারী কোনো সম্প্রদায় বাইরের শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে সবাই মিলিত শক্তি দিয়ে সে আক্রমণ প্রতিহত করবে। ৩. সব সম্প্রদায় স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে, কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। ৪. দুর্বল ও অসহায়কে রক্ষা ও সাহায্য করতে হবে। ৫. স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে মতানৈক্য ও বিরোধ দেখা দিলে হজরত মুহাম্মদ (সা.) তা মীমাংসা করে দেবেন। ৬. কেউ কুরাইশদের সঙ্গে কোনো প্রকার সন্ধি স্থাপন করতে পারবে না কিংবা মদিনাবাসীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে কুরাইশদের সাহায্য করতে পারবে না। ৭. স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়ের কোনো ব্যক্তি অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে, এর জন্য অপরাধীর সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না। ৮. সর্বপ্রকার পাপ ও অপরাধকে ঘৃণা করতে হবে। কোনোভাবেই পাপী ও অপরাধী ব্যক্তিকে রেহাই দেওয়া যাবে না। ৯. মদিনা শহরকে পবিত্র বলিয়া ঘোষণা করা হলো। এখন থেকে এখানে রক্তপাত ও হত্যা নিষিদ্ধ করা হলো। ১০. মুহাম্মদ (সা.)-এর বিনা অনুমতিতে মদিনাবাসীরা কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে না। ১১. মুহাম্মদ (সা.) নবগঠিত এই প্রজাতন্ত্রের সভাপতি (রাষ্ট্রপ্রধান) হবেন এবং পদাধিকার বলে তিনি সর্বোচ্চ বিচারালয়ের (Court of Appeal) সর্বময় কর্তা হবেন। ১২. ইহুদিদের মিত্ররাও সমান নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা ভোগ করবে। ১৩. বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করার নিজ নিজ যুদ্ধের ব্যয়ভার স্বাক্ষরকারী প্রত্যেক সম্প্রদায় বহন করবে। ১৪. সনদের শর্ত (ধারা) ভঙ্গকারীর ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষিত হবে। ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে প্রণীত এই মদিনা সনদ পৃথিবীর সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান। রাষ্ট্র গঠন ও রাষ্ট্র পরিচালনায় জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সবার প্রতি কল্যাণজনক এমন সর্বজনীন সনদ এর আগে আর কখনো প্রণীত হয়নি। মুহাম্মদ (সা.)-এর উদ্যোগে এই সনদের মাধ্যমে মদিনার পৌত্তলিক ও ইহুদিরা মুসলমানদের সঙ্গে একত্র হয়ে মদিনাভিত্তিক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। এই সনদের মাধ্যমে মদিনার সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সমর্থনে তথা মদিনার জনসাধারণের সমর্থনে মুহাম্মদ (সা.) এ রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাচিত হন। তিনি নির্বাচিত হওয়ার সময় মদিনায় মুসলমানদের সংখ্যা পৌত্তলিকদের চেয়ে অনেক কম ছিল; এমনকি ইহুদিদের চেয়েও। তদুপরি মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন মদিনায় বহিরাগত। এ অবস্থায় মদিনায় আগমনের মাত্র দেড় বছরের মধ্যে মুহাম্মদ (সা.)-এর মদিনাবাসীদের সমর্থনে নবগঠিত মদিনাভিত্তিক রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাচিত হওয়া এবং সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সর্বময় কর্তা হওয়া হচ্ছে ইতিহাসের নজিরবিহীন এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। এ ছাড়া সংখ্যালঘিষ্ঠ মুসলিম ও অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ অমুসলিমদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে মুহাম্মদ (সা.)-এর রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হওয়াটা হচ্ছে তিনি যে বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ তারই বহিঃপ্রকাশ। যে মানবীয় মহত্ত্বের ভিত্তিতে মদিনার অমুসলমানরা মুহাম্মদ (সা.)-কে সমর্থন করে মদিনাভিত্তিক রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত করেন, সেই মানবীয় মহত্ত্বের সম্পর্কে বলতে গিয়ে বিখ্যাত ফরাসি মনীষী আলফ্রেড দ্য ল্যামার্টিন মুহাম্মদ (সা.)-এর বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতুলনীয় অবদানে ও সাফল্যে মুগ্ধ হয়ে ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁর Histoire de la Turquie (History of Turks / তুর্কি জাতির ইতিহাস) বইতে লেখেন, ‘Philosopher, orator, apostle, legislator, worrior, conqueror of ideas, restorer of rational dogmas, of a cult without images; the founder of twenty terrestrial empires and one of spiritual empire, that is Muhammad, As regards all standards by which human greatness may be measured, we may well ask, is there any man greater than he?’ (দার্শনিক, বক্তা, ধর্মপ্রবর্তক, আইন প্রণেতা, যোদ্ধা, মতবাদ বিজয়ী, যুক্তিসিদ্ধ ধর্মমত ও প্রতিমাবিহীন উপাসনা পদ্ধতির পুনঃসংস্থাপক, ২০টি পার্থিব সাম্রাজ্যের এবং একটি আধ্যাত্মিক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন মুহাম্মদ। যে সব মানদণ্ড দ্বারা মানবীয় মহত্ত্ব মাপা হয়ে থাকে সেগুলো দ্বারা বিবেচনা করে আমরা সহজেই জিজ্ঞাসা করতে পারি তাঁর চেয়ে মহান কোনো ব্যক্তি আছে কি?) মদিনা সনদ প্রণয়নের ফলাফল মদিনা সনদের ফলে মদিনায় গৃহযুদ্ধ ও অন্তর্দ্বন্দ্বের স্থলে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বিধান হয়। এই সনদ জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে মদিনায় বসবাসকারী সব অধিবাসীকে সমানাধিকার প্রদান করে। এটা মদিনার মুসলমান ও অমুলমানদের মধ্যে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে তোলে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সম্পর্কে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। মুহাম্মদ (সা.)-এর উদ্যোগে মদিনার পৌত্তলিক, ইহুদি ও মুসলমানদের মধ্যে স্বাক্ষরিত বিশ্ববিখ্যাত মদিনা সনদ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে স্যার উইলিয়াম মুর তাঁর রচিত ‘The life of Muhammad’ বইতে বলেন, ‘It (Charter) reveals the Man in his real greatness-a master-mind, not only of his own age, but of all ages.Ó-W.Muir, The Life of Muhammad. [এটি (সনদ) মানুষটির সত্যিকার মহত্ত্ব ও অসাধারণ মননশীলতা, যা শুধু তৎকালীন যুগের জন্য নয়, বরং সর্বযুগের জন্য শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করে।] মূলত ইসলামী গণতন্ত্রের অন্যতম প্রতিচ্ছবি হচ্ছে মদিনা সনদ। এই মদিনা সনদ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ইতিহাসবিদ প্রফেসর ড. এ কে এম ইয়াকুব হোসাইন তাঁর ‘ইসলামের ইতিহাস’ বইতে বলেছেন, ‘আরবে এই সনদের (মদিনা সনদ) দ্বারা সর্বপ্রথম ইসলামী গণতন্ত্রের বীজ বপন করা হলো।’ (পৃষ্ঠা : ২২৫) অর্থাৎ এই রাষ্ট্র হচ্ছে ইসলামী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। লেখক : অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা SHARES ইসলাম বিষয়: মদিনা সনদ
মদিনাবাসীরা যে আশায় মুহাম্মদ (সা.)-কে মদিনায় আসার আমন্ত্রণ জানায়, হিজরত করার পর তা পূরণ করার জন্য তিনি সচেষ্ট হন। এ লক্ষ্যে তিনি মদিনার পৌত্তলিক ও ইহুদি নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ৪৭টি ধারা সংবলিত একটি সনদ প্রণয়ন করেন। তদানুসারে মদিনায় বসবাসরত ইহুদি, পৌত্তলিক ও মুসলমানদের মধ্য এই সনদ স্বাক্ষরিত হয়। এটি ইতিহাস বিখ্যাত ‘মদিনা সনদ’ (Charter of Medina) নামে পরিচিত।
এ সনদের প্রধান ধারাগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো : ১. মদিনা সনদে স্বাক্ষরকারী ইহুদি, পৌত্তলিক ও মুসলমান সম্প্রদায় একটি সাধারণ জাতি গঠন করবে। ২. চুক্তিতে (মদিনা সনদে) স্বাক্ষরকারী কোনো সম্প্রদায় বাইরের শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে সবাই মিলিত শক্তি দিয়ে সে আক্রমণ প্রতিহত করবে। ৩. সব সম্প্রদায় স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে, কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। ৪. দুর্বল ও অসহায়কে রক্ষা ও সাহায্য করতে হবে।
৬. কেউ কুরাইশদের সঙ্গে কোনো প্রকার সন্ধি স্থাপন করতে পারবে না কিংবা মদিনাবাসীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে কুরাইশদের সাহায্য করতে পারবে না। ৭. স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়ের কোনো ব্যক্তি অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে, এর জন্য অপরাধীর সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না। ৮. সর্বপ্রকার পাপ ও অপরাধকে ঘৃণা করতে হবে।
কোনোভাবেই পাপী ও অপরাধী ব্যক্তিকে রেহাই দেওয়া যাবে না। ৯. মদিনা শহরকে পবিত্র বলিয়া ঘোষণা করা হলো। এখন থেকে এখানে রক্তপাত ও হত্যা নিষিদ্ধ করা হলো। ১০. মুহাম্মদ (সা.)-এর বিনা অনুমতিতে মদিনাবাসীরা কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে না। ১১. মুহাম্মদ (সা.) নবগঠিত এই প্রজাতন্ত্রের সভাপতি (রাষ্ট্রপ্রধান) হবেন এবং পদাধিকার বলে তিনি সর্বোচ্চ বিচারালয়ের (Court of Appeal) সর্বময় কর্তা হবেন।
১৩. বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করার নিজ নিজ যুদ্ধের ব্যয়ভার স্বাক্ষরকারী প্রত্যেক সম্প্রদায় বহন করবে। ১৪. সনদের শর্ত (ধারা) ভঙ্গকারীর ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষিত হবে। ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে প্রণীত এই মদিনা সনদ পৃথিবীর সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান। রাষ্ট্র গঠন ও রাষ্ট্র পরিচালনায় জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সবার প্রতি কল্যাণজনক এমন সর্বজনীন সনদ এর আগে আর কখনো প্রণীত হয়নি। মুহাম্মদ (সা.)-এর উদ্যোগে এই সনদের মাধ্যমে মদিনার পৌত্তলিক ও ইহুদিরা মুসলমানদের সঙ্গে একত্র হয়ে মদিনাভিত্তিক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। এই সনদের মাধ্যমে মদিনার সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সমর্থনে তথা মদিনার জনসাধারণের সমর্থনে মুহাম্মদ (সা.) এ রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাচিত হন। তিনি নির্বাচিত হওয়ার সময় মদিনায় মুসলমানদের সংখ্যা পৌত্তলিকদের চেয়ে অনেক কম ছিল; এমনকি ইহুদিদের চেয়েও। তদুপরি মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন মদিনায় বহিরাগত। এ অবস্থায় মদিনায় আগমনের মাত্র দেড় বছরের মধ্যে মুহাম্মদ (সা.)-এর মদিনাবাসীদের সমর্থনে নবগঠিত মদিনাভিত্তিক রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাচিত হওয়া এবং সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সর্বময় কর্তা হওয়া হচ্ছে ইতিহাসের নজিরবিহীন এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। এ ছাড়া সংখ্যালঘিষ্ঠ মুসলিম ও অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ অমুসলিমদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে মুহাম্মদ (সা.)-এর রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হওয়াটা হচ্ছে তিনি যে বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ তারই বহিঃপ্রকাশ। যে মানবীয় মহত্ত্বের ভিত্তিতে মদিনার অমুসলমানরা মুহাম্মদ (সা.)-কে সমর্থন করে মদিনাভিত্তিক রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত করেন, সেই মানবীয় মহত্ত্বের সম্পর্কে বলতে গিয়ে বিখ্যাত ফরাসি মনীষী আলফ্রেড দ্য ল্যামার্টিন মুহাম্মদ (সা.)-এর বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতুলনীয় অবদানে ও সাফল্যে মুগ্ধ হয়ে ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁর Histoire de la Turquie (History of Turks / তুর্কি জাতির ইতিহাস) বইতে লেখেন, ‘Philosopher, orator, apostle, legislator, worrior, conqueror of ideas, restorer of rational dogmas, of a cult without images; the founder of twenty terrestrial empires and one of spiritual empire, that is Muhammad, As regards all standards by which human greatness may be measured, we may well ask, is there any man greater than he?’ (দার্শনিক, বক্তা, ধর্মপ্রবর্তক, আইন প্রণেতা, যোদ্ধা, মতবাদ বিজয়ী, যুক্তিসিদ্ধ ধর্মমত ও প্রতিমাবিহীন উপাসনা পদ্ধতির পুনঃসংস্থাপক, ২০টি পার্থিব সাম্রাজ্যের এবং একটি আধ্যাত্মিক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন মুহাম্মদ। যে সব মানদণ্ড দ্বারা মানবীয় মহত্ত্ব মাপা হয়ে থাকে সেগুলো দ্বারা বিবেচনা করে আমরা সহজেই জিজ্ঞাসা করতে পারি তাঁর চেয়ে মহান কোনো ব্যক্তি আছে কি?) মদিনা সনদ প্রণয়নের ফলাফল মদিনা সনদের ফলে মদিনায় গৃহযুদ্ধ ও অন্তর্দ্বন্দ্বের স্থলে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বিধান হয়। এই সনদ জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে মদিনায় বসবাসকারী সব অধিবাসীকে সমানাধিকার প্রদান করে। এটা মদিনার মুসলমান ও অমুলমানদের মধ্যে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে তোলে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সম্পর্কে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। মুহাম্মদ (সা.)-এর উদ্যোগে মদিনার পৌত্তলিক, ইহুদি ও মুসলমানদের মধ্যে স্বাক্ষরিত বিশ্ববিখ্যাত মদিনা সনদ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে স্যার উইলিয়াম মুর তাঁর রচিত ‘The life of Muhammad’ বইতে বলেন, ‘It (Charter) reveals the Man in his real greatness-a master-mind, not only of his own age, but of all ages.Ó-W.Muir, The Life of Muhammad. [এটি (সনদ) মানুষটির সত্যিকার মহত্ত্ব ও অসাধারণ মননশীলতা, যা শুধু তৎকালীন যুগের জন্য নয়, বরং সর্বযুগের জন্য শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করে।] মূলত ইসলামী গণতন্ত্রের অন্যতম প্রতিচ্ছবি হচ্ছে মদিনা সনদ। এই মদিনা সনদ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ইতিহাসবিদ প্রফেসর ড. এ কে এম ইয়াকুব হোসাইন তাঁর ‘ইসলামের ইতিহাস’ বইতে বলেছেন, ‘আরবে এই সনদের (মদিনা সনদ) দ্বারা সর্বপ্রথম ইসলামী গণতন্ত্রের বীজ বপন করা হলো।’ (পৃষ্ঠা : ২২৫) অর্থাৎ এই রাষ্ট্র হচ্ছে ইসলামী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। লেখক : অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা