বন্ধু পরিচয়ে প্রতারণা, লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিল যুবক

প্রকাশিত: ৬:৫৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিনিধি

রাজধানীর নর্দ্দা এলাকার বাসিন্দা আমিনুল  হক (৪৪)। তার কাছে ২০ ডিসেম্বর দুপুরে ফোন করেন মাহিরুল ইসলাম নামের তার এক বন্ধু। মাহিরুল জানান- তাদের আরেক বন্ধু আসাদের মা ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে মারা গেছেন। খবর পেয়ে আসাদ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় এসেছেন।

মায়ের চিকিৎসা বিল এবং মরদেহ নেওয়ার জন্য জরুরি ভিত্তিতে কিছু টাকা লাগবে তার। তখন আসাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে আমিনুলকে একটি মোবাইল নম্বর দেন মাহিরুল। 

আমিনুল সেই নম্বরে কল দিলে আসাদ জানান- তার এই মুহূর্তে কিছু টাকা দরকার। আসাদের কাছে ১০ হাজার ডলার রয়েছে।

পরে ডলার ভাঙিয়ে দুই-তিন ঘণ্টা পর আমিনুলকে টাকা ফেরত দেবেন আসাদ। মোবাইল ব্যাকিংয়ের মাধ্যমে আসাদকে দুইবারে মোট ৮০ হাজার টাকা পাঠান আমিনুল। তবে টাকা পাঠানোর তিন-চার ঘণ্টা পর সেই টাকা ফেরত চাইতে গেলে আমিনুল বুঝতে পারেন যে তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। কণ্ঠ একই রকম মনে হলেও সেই ব্যক্তি তার বন্ধু আসাদ নন।
 

একই দিন মাহিরুল তার আরেক বন্ধু আসাদুর রহমান নতুনকে (৪৬) কল দিয়ে একই কথা জানান। পরে একইভাবে ৬০ হাজার টাকা খুইয়েছেন আমিনুলের বন্ধু নতুন। ২০ ডিসেম্বর দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে। পরে ভুক্তভোগীরা রাজধানীর গুলশান ও পল্টন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ।

ঘটনার দিন রাতে আমিনুল ও নতুন দুই বন্ধুর মধ্যে যোগাযোগ হলে তারা বুঝতে পারেন যে দুজনই প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

এতে তাদের বন্ধু মাহিরুলের যোগসাজস থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। এ ছাড়া প্রবাসী বন্ধু আসাদ আমেরিকাতেই আছেন এবং তার মা গ্রামের বাড়িতে সুস্থ আছেন। তাদের সবার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায়। বর্তমানে আমিনুল ও নতুন ঢাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। 

গতকাল বুধবার পুলিশ, ভুক্তভোগী আমিনুল হক ও আসাদুর রহমার নতুন এসব তথ্য জানিয়েছেন।

মাহিরুল ইসলাম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি বলেন, আমি যখন ফোনটি পাই আসাদের কণ্ঠের মতো মনে হয়েছে। আসাদ ছাড়া অন্য কেউ হবে সেটি বুঝতে পারিনি। তাই ঢাকায় যেহেতু আমিনুল ও নতুন থাকে, তাই তাদের নম্বরটি দিয়ে সহযোগিতা করার কথা বলেছি। পরে সেদিনই জানতে পেরেছি আসাদের মা গ্রামের বাড়িতেই সুস্থ আছেন। এ ছাড়া আসাদ আমেরিকাতেই আছে।

ভুক্তভোগী আমিনুল হক বলেন, আমি একজন কিডনি রোগী। এই প্রতারণার শিকার হয়ে খুবই কষ্টে আছি। কারণ আসাদ নামের ওই লোকের সঙ্গে আলাপকালে মনে হয়নি অন্য কেউ, মনে হয়েছে প্রবাসী বন্ধু আসাদই। এখন মনে হচ্ছে, এই প্রতারণার সঙ্গে মাহিরুলের যোগসাজস রয়েছে।

এ বিষয়ে থানা পুলিশ জানায়, নম্বরগুলো যাছাই-বাছাই করে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে যে তারা একটি পেশাদার প্রতারক চক্র। এ ধরনের আরো একাধিক ঘটনা ঘটেছে। তারা কণ্ঠ নকল করে এসব ঘটনা ঘটাতে পারেন। তবে বিস্তারিত তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

গুলশান থানায় আমিনুলের জিডির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা বিষয়টি যাছাই-বাছাই করছি। আশা করি শিগগির তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসল রহস্য উদঘাটন হবে।

এসব বিষয়ে অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পরিচিত কেউ মোবাইল ফোনে কিংবা ফেসবুকে সহযোগিতা চাইতেই পারেন। তবে আর্থিক সহযোগিতা করার আগে যতটুকু সম্ভব যাছাই করে নেওয়া উচিত।