বর্ণমালা আদর্শ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির নির্বাচন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

প্রকাশিত: ১১:৩০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪
– নিউজ ডেস্ক 
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার দনিয়া বর্ণমালা আদর্শ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় গভর্নিং বডির নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আগের কমিটি বহাল রেখে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
অবিভাবক প্রতিনিধি ও শিক্ষক প্রতিনিধি পদে যারা নির্বাচন করছেন তাদের অভিযোগ, আগের কমিটির সভাপতি আব্দুস সালাম বাবু ও অধ্যক্ষ তাদের কোটি কোটি টাকার অনিয়ম, দুর্নীতি আড়াল করার জন্য নতুন কমিটিতে তাদের মনোনীতদের যে কোনো উপায়ে বিজয়ী করার জন্য নানা অপকৌশলসহ সব ধরণের অনিয়ম করে চলেছেন। এসব বিষয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে একাধিক লিখিত অভিযোগও দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ ১৮ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বরাবরে এক আবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনে শিক্ষক প্রতিনিধি পদে কলেজ ও স্কুল শাখায় শিক্ষকদের ভোটার তালিকায় কলেজ ও স্কুল শাখার শিক্ষকদের আলাদা করা হয়নি। এমনকি ভোটার তালিকায় অধ্যক্ষ, দুই জন সহকারী প্রধান শিক্ষক, একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও একজন সহকারি লাইব্রেরীয়ানের নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। অথচ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচন প্রবিধান-২০০৯ এবং সংশোধনী-২০১৭ ইং এর ২ এর (থ) ধারায় বলা হয়েছে, অধ্যক্ষ ও সহকারি প্রধান শিক্ষক ভোটার হতে বা ভোট দিতে পারবেন না। এ বিষয়ে অধ্যক্ষকে জানানোর পর কোনো প্রতিকার মেলে নি।
নির্বাচনে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হয় গত ১ জানুয়ারি ২০২৪। ২ জানুয়ারি চূড়ান্ত তালিকায় গভর্নিং বডির সভাপতি ও অধ্যক্ষ স্বাক্ষর করেন। অথচ ভোটার তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসে ভর্তি হয়েছে এমন শিক্ষার্থীর অবিভাবককেও ভোটার করা হয়েছে। যেমন, ৬৮২ নং ভোটারের পোষ্য বা সন্তান ভর্তি হয়েছে জানুয়ারির ২২ তারিখে। ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস, রোল ২২৬। সে ভর্তি হয়েছে জানুয়ারির ২ তারিখে। অথচ বর্তমান সভাপতির পক্ষের না হওয়ায় তার অবিভাবককে ভোটার করা হয়নি। পক্ষান্তরে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম (রোল ৩১৪) ৩ জানুয়ারি ভর্তি হওয়ার পরেও তার অবিভাবককে ভোটার বানানো হয়েছে। এমনিভাবে ৭ম শ্রেণির রোল ৩১০ থেকে ৩২৩ রোল পর্যন্ত সব শিক্ষার্থী জানুয়ারির ১৩ তারিখে ভর্তি হওয়ার পরেও তাদের অবিভাবকদের ভোটার বানানো হয়েছে। যাদের ভোটার নম্বর ক্রমানুসারে ৬৬৮  থেকে ৬৮২ পর্যন্ত।
যথাক্রমে ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ৯ম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি বা তারও পরে। অথচ এদের বেশিরভাগ অবিভাবককে ভোটার বানানো হয়েছে। অন্যদিকে, বর্তমান সভাপতির দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী মো. নাজিম উদ্দিন সরকার (পিন্টু) তার মেয়েকে জানুয়ারি মাসের ২৩ তারিখে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করানোর কারণে তার অবিভাবক প্রতিনিধি পদের মনোনয়ন বাতিল করেছেন ঢাকা জেলা প্রশাসন অফিসের সহকারী কমিশনার (শিক্ষা) ও প্রিজাইডিং অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম। অথচ জানুয়ারির ২৩ তারিখে বা তারও পরে ভর্তি হওয়ার অনেক অবিভাবকও ভোটার হয়েছেন। জানুয়ারির ২২ তারিখে সন্তানকে ভর্তি করে ভোটার হয়েছেন ৬৮২ নং ভোটার। শুধু তাই নয়, মৃত ব্যক্তি এবং একই শিক্ষার্থীর অবিভাবক হিসাবে একাধিক ভোটারের নাম স্থান পেয়েছে ভোটার তালিকায়। নুসরাত জাহান নামে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীর (রোল ৪৫৪) পিতা মৃত হারুন অর রশীদ। ভোটার তালিকায় এই মৃত ব্যক্তির নামও আছে। নাম আছে দশম শ্রেণির মাহবুবা স্বপ্নার মৃত পিতা মোস্তাফিজুর রহমানেরও। ভোটার তালিকায় ২৬০২ এবং ২৬০৩ নম্বরে একই অবিভাবকের নাম। একইভাবে ২৬০৪ ও ২৬০৫ নম্বর, ২৬০৮ ও ২৬০৯ নম্বর ভোটারও একই ব্যক্তি। নির্বাচনে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতাকারী অবিভাবক সদস্য ও শিক্ষক প্রতিনিধিদের আশঙ্কা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বর্তমান সভাপতি ও অধ্যক্ষের মনোনীত প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য এসবই ষড়যন্ত্র  ও দূরভিসন্ধিমূলক কূট-কৌশল। যে কৌশলে দুই যুগের বেশি সময় ধরে সভাপতি ও অধ্যক্ষ কোটি কোটি টাকা লোপাট করেও রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।