বনখেকো মোশাররফের ভোগে ১১২ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ৮:৩৩ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৪, ২০২৪

মোঃ আহসানউল্লাহ হাসানঃ
বন বিভাগের কর্মকর্তা মোশারফ হোসেনের ভোগে যাওয়া ১১২কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য-প্রমান উদ্ঘাটন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। তবে তার সম্পদের পরিমাণ ৫শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলেও ধারণা করেন অনেকে।
তিনি দুর্নীতির দায় থেকে নিজেকে আড়াল করতে নিয়েছেন নানা কৌশল। অবৈধ সম্পদের বেশির ভাগেরই মালিক বানিয়েছেন স্ত্রীকে। স্ত্রীর নামে খুলেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দুর্নীতির অভিযোগে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে। আর অবসরে গিয়ে মেঘনা বিল্ডার্স নামের একটি আবাসন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নিয়ে রয়েছেন মহাব্যস্ত।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মোশাররফ ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করেছে। তাদের ১১২ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। দুদক সূত্র জানায়, তাদের নামে ফ্ল্যাট, জমি, বিভিন্ন স্থাপনা, ব্যাংকে জমানো টাকা, মেয়াদি আমানত সহ নানা সম্পদ রয়েছে। সম্পদের উৎস গোপন করতে ও দুর্নীতির দায় থেকে নিজেকে আড়াল করতে অধিকাংশ সম্পদই স্ত্রী পারভীন সুলতানার নামে করেছেন। কালো টাকা সাদা করার উদ্দেশ্যে পারভীন সুলতানার নামে চালু করা হয় মেঘনা’স ফিটনেস সেন্টার। অপরাধলব্ধ অর্থ বৈধ দেখাতে মোশাররফ আবাসন খাতের ব্যবসায় নামেন।
বর্তমানে মোশাররফ মেঘনা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে আছেন। দুদক সূত্র জানায়, বন বিভাগে চাকরিকালে তিনি নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। নামে-বেনামে তাঁর শতকোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসতে পারে অনেক তথ্য। সন্তানের নামেও করেছেন সম্পদ।
এর আগে দুদক সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ওসমান গণির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করেছে। ‘বনের রাজা’ খ্যাতি পাওয়া ওসমান গণির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিটও দেওয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে জেলে আছেন। সূত্র বলছে, ওসমান গণির পথ অনুসরণ করে মোশাররফ হোসেন ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুই হাতে লুটেছেন।
তাদের সম্পদের মধ্যে রয়েছে– পারভীন সুলতানার নামে ধানমন্ডির ১১ নম্বর রোডে অজান্তা অ্যাপার্টমেন্টে ৪ কোটি টাকা মূল্যের ২ হাজার ৪০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ঢাকার মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে মেমোরো ভিলায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের ৪ হাজার ৮২০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিং সোসাইটির বি ব্লকে ১০ কোটি টাকা মূল্যের বহুতল বাড়ি, মানিকগঞ্জের রাখোরা মৌজায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের ২০ বিঘা জমি, ঢাকার বাড্ডার সাঁতারকুল মৌজায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের ৮ বিঘা জমি, রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা সিটির লেভেল-১, ব্লক সিতে ৪ কোটি টাকা মূল্যের ৪০০ বর্গফুটের দোকান, রাজধানীর ৫৩, বায়তুল মোকাররমে ১০ কোটি টাকার ৩০০ বর্গফুটের দোকান, কক্সবাজারের টেকনাফে ৫ কোটি টাকা মূল্যের স্থাপনাসহ ৩ বিঘা জমি, কক্সবাজার ইনানী সমুদ্রসৈকতে ১০ কোটি টাকা মূল্যের স্থাপনাসহ ১ বিঘা জমি ও চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ১০ কোটি টাকা মূল্যের ৬ কাঠা জমি।
মোশাররফের নামে আছে ঢাকার ধানমন্ডির ১৬ নম্বর রোডে (পুরোনো-২৭) ১৬ নম্বর প্লটে জেনেটিক প্লাজার চতুর্থ তলায় ৬ কোটি টাকা মূল্যের ৩ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট। এই ফ্ল্যাটেই তিনি বাস করেন। তাঁর নামে ঢাকার চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটে ২ কোটি টাকা মূল্যের ৩০০ বর্গফুটের দোকান, ঢাকার পূর্বাচলে ২০ কোটি টাকা মূল্যের স্থাপনাসহ ১০ কাঠা জমি, বাগেরহাটের গোপালকাঠি গ্রামে ২০ কোটি টাকা মূল্যের স্থাপনাসহ ১০ কাঠা জমি। এ ছাড়া বিভিন্ন জনকে ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে ১ কোটি টাকা। মোশাররফের মেয়ে মোহনা থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে ৫ কোটি টাকায় তাঁর নামে কেনা হয়েছে একটি ফ্ল্যাট