ড্রিম লাইভের আড়ালে শতকোটি টাকা পাচার

প্রকাশিত: ৭:৪৭ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৯, ২০২৪

 

ক্রাইম পেট্টোল ডেস্ক রিপোর্ট:
অনলাইনে ড্রিম লাইভ অ্যাপসে অশ্লীল ভিডিও লাইভ দেখানোর আড়ালে বাংলাদেশের এজেন্ট সিলেটের যুবক আবু মুসা ইমরান আহমেদ সানির নাম উঠে এসেছে সবার উপরে। সে অনলাইন ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ড্রিম লাইভ অ্যাপটির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে বিদেশে পাচার করেছে এই চক্রটি। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত থেকে এই চক্রটি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে । চক্রটি এই অ্যাপের মাধ্যমে পর্নো ভিডিও দেখিয়ে দেশ থেকে ৯৪ কোটি ৭ লাখ ৬৫ হাজার ১২৬ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ২০২২ সালের শেষ দিকে ইমরানসহ তাঁর চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলাও হয়েছিল। বর্তমানে সব আসামি জামিনে থাকলেও ইমরান পলাতক। সম্প্রতি ওই মামলায় ইমরানসহ তাঁর সাত সহযোগীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া ইমরানের বিরুদ্ধে সিআইডিকে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করতে চিঠি দিয়েছে তদন্ত সংস্থা ডিএমপির সিটিটিসি বিভাগ।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, ইমরানের চক্রে জড়িত বেশ কিছু লোকের নাম পাওয়া গেছে। ইমরানের এজেন্ট হিসেবে কাজ করত রাঙামাটিতে আবুশামা ফায়সাল, মুন্সীগঞ্জে সেলিম মিয়া, নোয়াখালীতে শাহ আরমান, রংপুরে আক্তার হোসেন সোহেল, গাইবান্ধায় ফাতেমা আক্তার, বরিশালে শায়লা আক্তার শিমুল ও বাগেরহাটে এইচ এম ঝলক ওরফে সাইফুল। তারা ছদ্মনামে ড্রিম লাইভ অ্যাপে আইডি খুলে বিভিন্ন মানুষের কাছে ভার্চুয়াল গেম কয়েন এবং ড্রিম লাইভ ডায়মন্ড কয়েন বিক্রি করত। গ্রেপ্তারের সময় চক্রের সদস্যদের তাদের কাছ থেকে ১১টি মোবাইল, ২টি ল্যাপটপ এবং অর্থ লেনদেনে ব্যবহৃত ১৭টি সিম জব্দ করা হয়।
জব্দ আলামত ফরেনসিক পরীক্ষার পর জানা যায়, ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই বছরে ইমরানের বিভিন্ন ব্যাংক, বিকাশ ও নগদ হিসাব নম্বরে লেনদেন হয়েছে ৯৪ কোটি ৭ লাখ ৬৫ হাজার ১২৬ টাকা। এই টাকা ইমরান পরে বিদেশে পাচার করেছেন। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো পেশা না থাকায় ইমরানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে।
তদন্ত সূত্র জানায়, ২০২০ সালে টপ ইনোভেশন লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন করেন ইমরান। ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তিনি নিজেই। প্রতিষ্ঠানটির এমডি ভারতীয় নাগরিক সুপ্রকাশ দিলীপ কুমার সাহা। প্রতিষ্ঠানের নামে ইস্টার্ন ব্যাংকে তাদের যৌথভাবে হিসাব নম্বর খোলা হয়। পর্নো ভিডিও দেখিয়ে নেওয়া টাকা সারাদেশ থেকে এজেন্টদের মাধ্যমে আসত ইমরানের সাতটি ব্যক্তিগত হিসাব নম্বরে। পরে সেখান থেকে ইমরান তাদের যৌথ হিসাব নম্বরে টাকা পাঠিয়ে দিতেন। সুপ্রকাশের মাধ্যমে হাতবদল হয়ে সে টাকা চলে যায় বিদেশে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলেন, টপ ইনোভেশনের আড়ালে ২০২০ সাল থেকে ‘টপ ক্লাস এন্টারটেইনমেন্ট’ নামে ড্রিম লাইভ অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে আসছিলেন ইমরান। এই প্ল্যাটফর্মে ভার্চুয়াল ডায়মন্ড বা ভার্চুয়াল গেম কয়েন বিক্রি করতে ইমরান সারাদেশে ৩০০ এজেন্ট নিয়োগ দেন। তাঁর সঙ্গে জড়িত ভারতীয় নাগরিক সুপ্রকাশ। তবে মামলার এজাহারে সুপ্রকাশের নাম ছিল না। পরে তদন্তে সুপ্রকাশের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। মামলা হওয়ার পর কয়েকটি অভিযানে সব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা গেছে, ড্রিম লাইভে যারা নিজেদের প্রদর্শন করে তাদের বলা হয় ইনফ্লুয়েন্সার। ইমরানের চক্রের সদস্যরা লাইভে এসে দর্শকদের সঙ্গে ভিডিও চ্যাটে কথা বলত। এ ছাড়া অশ্লীল গল্প ও ছবি শেয়ার করত। এই চক্রে ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে অন্তত দেড় হাজার তরুণী কাজ করেছে। এই ভিডিও চ্যাট ও জুয়া খেলার জন্য প্রয়োজন হয় ভার্চুয়াল কয়েন বা ডায়মন্ডের। এর আগে সেখানে ভার্চুয়াল কয়েনের বিনিময়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয় দর্শককে। এসব কয়েন টাকার বিনিময়ে ইমরানের নিয়োগ করা এজেন্সির মাধ্যমে সংগ্রহ করেন দর্শকরা। এজেন্টরা বিকাশের মাধ্যমে টাকা নিয়ে ভার্চুয়াল কয়েন দিতেন। পরে দর্শকদের দেওয়া কয়েন ইনফ্লুয়েন্সাররা বিক্রি করতেন ড্রিম লাইভ কর্তৃপক্ষের কাছেই। এতে ইমরান মাসে ১০ কোটি টাকার কয়েন বিক্রি করতেন। যার মধ্যে সহযোগীদের কমিশন হিসেবে দিতেন এক কোটি টাকা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিটি সাইবার ইউনিটের পরিদর্শক মতলুবর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ইমরানের টাকা পাচারের সত্যতা পাওয়া গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে সিআইডিতে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সিআইডি পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।