ঢাকা উত্তর সিটির ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাষ্টনের অপরাধ সাম্রাজ্য ক্রাইম পেট্রোল ক্রাইম পেট্রোল News প্রকাশিত: ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৯, ২০২৪ আবু নোহান শ্যামল: ঢাকা উত্তর সিটির ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নূর ইসলাম রাষ্টন। তিনি নিজেকে এই ওয়ার্ডের মালিক বলেও দাবি করেন । তার অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার দাপটের বিরুদ্ধে যারা কথা বলেন তাদেরকে রাখে একশ একশ দৌড়ের উপরে। মুক্তিযোদ্ধাদের বরাদ্দকৃত জমি দখল, ফুটপাতের দোকান, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও আবাসিক হোটেল থেকে মাসে প্রায় ৫০/৬০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন তার নিজস্ব বাহিণী দ্বারা। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে প্রতিদিন অন্তত ২৫-৩০ লাখ টাকার মাদক বিক্রি হয় এবং তা থেকে প্রতি সপ্তাহে ১০ লাখ টাকা মাসোয়ার পেয়ে থাকেন। বিভিন্ন জায়গায় চাঁদা তোলা ও মাদক বিক্রির টাকা সংগ্রহ, নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আলাদা আলাদা লোক নিয়োগ রয়েছে। তথ্য আনা-নেওয়া ও হামলা চালাতে গড়ে তুলেছেন মাদক সেবনকারী কিশোর গ্যাং।চাঁদাবাজি, দখলবাজি, মাদক কারবারের কমিশন নিয়ে স্বল্প সময়ে বনে গেছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। নিজের নামের পাশাপাশি স্ত্রী ও ছোট ভাইয়ের নামে গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদ। এলাকায় কেউ বাড়ি বা কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করলে তাকে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদাবাজির টাকা নগদ গ্রহণ করে থাকেন। জেনেভা ক্যাম্পে মাদক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। সন্ধ্যার পরই তার আস্তানায় নিজের বলয়ের লোকদের নিয়ে বসে মাদকের আসর। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, জেনেভা ক্যাম্পের মাদক কারবারিদের মধ্যে শীর্ষ মাদক কারবারি বুনিয়া সোহেল, বশির মোল্লা ও এস কে গোলাম জিলানী। তাদের নিয়ে মাদক বিক্রি এবং নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কাউন্সিলর তার পিএস রায়হান ও সোহেলের ছোট ভাই সহ মাদক বিক্রির জন্য আলাদা বাহিনী তৈরি করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে অমানবিক নির্যাতন করা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেনেভা ক্যাম্পের মাদক কারবারিদের ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখতে মোহাম্মদপুর থানার একজন পরিদর্শক সপ্তাহে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মাসোয়ারা দিয়ে থাকেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এই পরিদর্শকের পছন্দের আরও চারজন এসআই প্রতি সপ্তাহে ৮০ হাজার টাকা ভাগে পান। রাষ্টনের ডান হাত হয়ে কাজ করেন কাউন্সিলরের পিএস রায়হান। তিনি বিভিন্ন জায়গায় চাঁদা সংগ্রহ করে হিসাব বুঝিয়ে দেন কাউন্সিলরকে। বিহারি ক্যাম্পে চাঁদা (জেনেভা ক্যাম্প) নিয়ন্ত্রণ করেন রিয়াজ ও মোজাম্মেল। তাদের দুজনের মধ্যে রাষ্টনের খাস লোক রিয়াজ। তিনি ক্যাম্পে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাদক থেকে শুরু করে সব অবৈধ কাজে নেতৃত্ব দেন তারাই। সুত্র জানায়, বাবর রোড কাঁচাবাজার থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার টাকা চাঁদা তোলেন মো. শরিফ। এই টাকা কাউন্সিলরের হয়ে নেন হোসাইন মাসুম ও ওলিউল্লা লিটন। খিলজী রোড কাঁচাবাজারে অর্ধশতাধিক দোকান আছে। প্রতিটি দোকান থেকে দৈনিক ১৫০ টাকা করে চাঁদা তোলেন নূপুর, শাহীন ও পারভেজ। প্রতিদিন অন্তত ৩৫ হাজার টাকা চাঁদা তুলে রুস্তমের কাছে জেমা দেন তারা। শিশু পার্কের আশপাশে ফুটপাতের দোকান থেকে প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার টাকা চাঁদা তুলে আদু মিয়া আর কাউন্সিলরের অফিসে জমা দেন সালাউদ্দিন। নানক চত্বরের আশপাশে ফুটপাতের দোকান থেকে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা তোলেন আশরাফ, এ রহমান ও রুবেল। চাঁদা তুলে জমা দেন রাষ্টনের পিএস রায়হানের কাছে। জেনেভা ক্যাম্প টোল মার্কেট থেকে প্রতিদিন ১৫ হাজার করে চাঁদা নেন কোরবান। এ টাকা নেন কাউন্সিল নিজেই। নিউ কলোনি মাঠে বাজার ও ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তোলেন ফারুক, বড় স্বপন ও ছালাম। মনির প্রতিদিন প্রায় ৮ হাজার টাকা তোলে কাউন্সিলরের পিএসের কাছে জমা দেন। লালমাটিয়া কলোনি বয়েজ স্কুলের খেলার মাঠ দখল করে বিকেলের পরই দোকান বসান কাউন্সিলরের লোকজন। তারা ইউনিট আওয়ামী লীগের নেতা। তাদের মধ্যে মামুন ও মুন্না এই দোকানের চাঁদা তোলেন। এ ছাড়া র্যাংগস গলি লালমাটিয়া ফুটপাতের দোকান থেকে পানি হানিফ চাঁদা তোলেন প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার। টাকা জমা দেন মনিরের কাছে। শ্যামলী বাজার থেকে বিডিআর বাজার পর্যন্ত শতাধিক দোকান থেকে রায়হান টাকা নেন। কলেজগেট থেকে শ্যামলী পর্যন্ত যত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক আছে, সবগুলো থেকে বন্ধু রাজ্জাককে দিয়ে মাসে ১ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন কাউন্সিলর। আসাদগেট ও শ্যামলী এলাকায় প্রায় দুই ডজন আবাসিক হোটেল আছে। এসব আবাসিক হোটেলে অনৈতিক কাজ হয়। প্রতিটি হোটেল থেকে প্রতি মাসে লাখ টাকা চাঁদা নেন কাউন্সিলর। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের একাধিক অভিযোগ আছে। এমনকি এক ভুক্তভোগী থানায় তার নামে অভিযোগ দিতে গিয়েছিলেন বলে তাকে ঢাকা ছাড়তে বাধ্য করেছেন রাষ্টন। মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে মাদকের আখড়ায় পরিনত করেছে কাউন্সিলর রাষ্ট্রন। এ ক্যাম্পের মাদক সম্রাট এখন বুনিয়া সোহেল। তার ভাই রানা, টুনটুনসহ অন্যরা ক্যাম্পের মাদক বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করেন। এ ক্যাম্পের ৯টি সেক্টরের সবকটিতে মাদকের আলাদা ডিলার, ম্যানেজার, প্রশাসন ম্যানেজ করার লোক এবং বিক্রি করার জন্য আলাদা লোক আছে। ইয়াবা-গাঁজা ছাড়াও হেরোইন বিক্রি হয়। প্রতিদিন ২৫-৩০ লাখ টাকার মাদক বিক্রি হয় এ ক্যাম্পে। মাদক বিক্রি এবং মাদক নিয়ে কেউ প্রশাসনের হাতে ধরা খেলে তাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেন রাব্বানী। এ ক্যাম্পের মাদক কারবারিদের নিয়ে একটি ফান্ড তৈরি করা হয়েছে। প্রশাসনের কাছে থেকে মাদক কারবারিদের ছাড়ানোর জন্য আলাদা করে ফান্ড তৈরি করেছেন বুনিয়া সোহেল ও রাব্বানী। এসব কিছু জেনেও প্রশাসন নীরব ভূমিকায়। কারণ হিসেবে স্থানীয়না বলছেন মাদকের বিক্রির টাকার ভাগ পায় প্রশাসন। তাই জেনেশুনেও নীরব দর্শকের ভূমিকায় তারা। জেনেভা ক্যাম্পে সেক্টের-১-এর ইয়াবার ডিলার পিস্তল নাঈম। ইয়াবার ম্যানেজার নাদ ও বিপ্লব। এই সেক্টরে ইয়াবা বিক্রি করেন ডাবওয়ালা মাহতাব, জনি, সনু, রনি ও কালী ফারজানা। গাঁজার ডিলার ও পাইকারি বিক্রেতা চুয়া সেলিম। সেক্টর-২-এর হেরোইনের ডিলার ও বিক্রি করেন মাহবুব, ইমতিয়াজের বড় ভাই ও স্ত্রী রুমা। জনি ইমতিয়াজের ছোট ভাই ও স্ত্রী আবদা। ইয়াবার ডিলার পিচ্চি রাজা। তার ম্যানেজার সুমন, সুজন, আদিল ও ফারজান। আর বিক্রি করেন ব্যাটারি কামরান, জনি পারভলু, রুবেল আমিন নয়ন ও কান কামরান। সেক্টর-৩-এ গাঁজা বিক্রি করেন রসুল ওয়েস, ছোট ভাই মাসুম, জুয়েল, জয়া তার স্বামী মনসুর। এই সেক্টরের হেরোইন, ইয়াবা ও গাঁজার ডিলার গল্লি জাহিদ। হেরোইনের ডিলার ও বিক্রি করেন বমু আলতাফ এবং বাবু। সেক্টর-৪-এর ইয়াবা ও হেরোইনের ডিলার পিচ্চি রিয়াজ। তিনি পুলিশের সোর্স। পিচ্চি রিয়াজের সহযোগী বিজয়। আর বিক্রি করেন আরমান, সাব্বির বিত্তান, মানিক, হাসান ও ইসু। সেক্টর-৫-এর তালিব হেরোইন ডিলার। ইয়াবা বিক্রি করেন জহির তার ছেলে মুনির হাসিব। এ ছাড়া হিরা, মিঠু, তানিয়া ও তার স্বামী হ্নদয়। হেরোইন, ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি করেন নাদিম, সাজু ও চোর হিরা। সেক্টের-৬-এ মাদক বিক্রি করেন লাট্রি পাট্রি পারভেজ, ভান্ডরী শাকিল, তার ছেলে মাসুম তার স্ত্রী সাল্লু, মাহবুব কাটিং। সেক্টের-৭-এর হেরোইন, ইয়াবা, গাঁজা ডিলার ও পাইকারি বিক্রেতা, বুনিয়া সোহেল ভাই রানা, টেক্কা এসকে নাসিম তার ন্ত্রী শান্তা, এসকে রাব্বানী, আহমেদ আলী নাডিম, সীমা তার ছেলে ফরিদ। বিক্রি করেন রাজ, অনিল, ডরেমন, মিঠুন ও বাবলা মিলন। সেক্টর-৮-এর ইয়াবার ডিলার, গালকাটা মনু, ইমতিয়াজ, ফয়সাল। দ্বিতীয় গ্রুপের ডিলার টুনটুন ও প্রশাসনিক সহযোগিতা করেন সোনিয়া। আর বিক্রি করেন দুনারা, আকতার, হোসাইন, নাটু, কালোসীমা, পোড়া সানী, জুয়েল হ্নদয় ও আজাদ। সেক্টর-৯-এর ইয়াবার ডিলার আশ আলম, মনু ও মাসুদ রানা। গাঁজার ডিলার মুরাদ, সানা ও সাগর। এই সেক্টরের মাদকের টাকা প্রশাসনকে দেন পিচ্চি রিয়াজ। আর কাউন্সিলর টাকা নেন তার পিএস রায়হান। এই সেক্টর থেকে শুধু কালোবাবু কাউন্সিলরকে ১২ লাখ টাকা দেন। তবে মাদক, অস্ত্রসহ নানা মামলায় তাদের মধ্যে এখনো বেশ কয়েকজন জেলে আছেন। কাউন্সিলরের সম্পত্তি, তিনতলা একটি বাড়ি, নবীন সংঘ ক্লাবের পাশে একটি ফ্ল্যাটসহ একাধিক ফ্ল্যাট, অনুরাগ ফার্মেসি, অনুরাগ হোটেল, অনুরাগ সুপারশপ, স্ত্রীর বেনজীর নামে ১০ শতাংশের একটি ফ্ল্যাট আছে। এ ছাড়া একটি প্রাডো গাড়ি আছে। কাউন্সিলরের বেশিরভাগ সম্পত্তি অবশ্য তার ছোট ভাইয়ের নামে। এ বিষয়ে কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নূর ইসলাম রাষ্টন বলেন, জেনেভা ক্যাম্পের মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম বুনিয়া সোহেলে, বসির মোল্লা ও এস কে জিলানী। তবে এসকে জিলানীর বয়স হয়ে যাওয়া তার ছেলেরা এখন মাদক বিক্রি করে। বহুবার আমি চেষ্টা করেও এই ক্যাম্পে মাদক বিক্রি বন্ধ করতে পারিনি। প্রশাসন এসব বিষয় সবই জানে। আমি সৈয়দ পরিবারের সন্তান মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত না। যারা বলছে এসব মিথ্যা বলছে। চাঁদাবাজির কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি অস্বীকার করেন। জেনেভা ক্যাম্পের সাবেক চেয়ারম্যান সীমা ক্রোইসী বলেন, জেনেভা ক্যাম্পে মাদকের আখড়া কেউ বন্ধ করতে পারবে না, দিনদিন বেড়েই চলছে। এ ক্যাম্পে কী চলে তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। যারা বন্ধ করবো তারাই তো এটির সঙ্গে জড়িত। আমি কিছু বলতে পারব না। আমারও নিরাপত্তা দরকার আছে। SHARES অপরাধ/দূর্নীতি বিষয়: