পালিয়েছে ঠিকাদার : সাড়ে তিন বছর যাবৎ ঝুলে আছে ব্রিজের নির্মান কাজ

প্রকাশিত: ৭:২৫ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১০, ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টারঃ
কুষ্টিয়ায় ‘পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’ এর অধীনে সদর উপজেলার কুমার নদীর উপর প্রি-স্ট্রেসড গার্ডার ব্রিজটির নির্মাণ কাজ সাড়ে তিন বছরেও শেষ হয়নি। ৬ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয়ে ৮১ মিটার দৈর্ঘের ব্রিজটি নির্মাণ শুরু হয় ২০২১ সালের মার্চ মাসে। এর নির্মাণ কাজে সময় দেয়া হয় দুই বছর।
নির্ধারিত সময়কাল ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হলেও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর এলজিইডি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির নির্মানকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ ফেলে পালিয়ে যাওয়ায় ঝুলে গেছে প্রকল্পটি। এতে প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হয়েছে এই ব্রিজের সুবিধাভোগী কৃষি প্রধান অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ।
এছাড়াও হরিনাকুন্ডু ও আলমডাঙ্গা উপজেলার সাথে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার একমাত্র সংযোগ সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এলজিইডি ও ঠিকাদারের গাফিলতি ও যোগসাজশে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত ব্রিজটির নির্মাণ সম্পন্নের দাবি স্থানীয়দের। তবে অভিযোগ নাকচ করে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জানালেন, খুব শীঘ্রই ব্রিজটির নির্মাণকাজ শেষ করে চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগ ও কৃষিপণ্য বহন করা কষ্ট হয়ে পড়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্রিজটির নির্মাণ শেষ করে দুই পাশের চলাচলের রাস্তাটিও মেরামতের দাবি তাদের। ব্রিজ সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দা জরিনা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, সেই ৩-৪ বছর আগে এই কাজ শুরু হয়ছে। এখনও শেষ হয় নাই। এতদিন সহ্য করে ছিলাম যে শেষ হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এখন দেখতেছি শেষই হয় না। সরকার যেন কাজটা তাড়াতাড়ি শেষ করে দেয় এটাই আমাদের আবেদন।
উজানগ্রাম এলাকার বাসিন্দা কৃষক রব্বানী প্রামাণিক বলেন, গ্রামের মানুষের কষ্ট দেখার কেউ নাই। এই ব্রিজটা আজ প্রায় চার বছর ধরে শেষ করতে পারছে না। এর কোনো সমাধান নেই। আমরা জমি থেকে ফসল আনেতে পারছি না। ভ্যান চালক নশের আলী বলেন, অর্ধেক কাজ করে চলে গেছে। এতদিন ধরে আমাদের ভোগান্তিই যাচ্ছে না। ব্রিজটা হলে আমরা বাঁচি। কুষ্টিয়া জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সদস্য হাজি গোলাম মহসিন বলেন, কুষ্টিয়ায় নির্মাণাধীন রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভার্ট ও অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পগুলো নানা অনিয়ম অবহেলায় অসম্পন্নভাবে ঝুলে আছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে সকল প্রস্ততি ও সক্ষমতাসহ প্রকল্প বাস্তবায়নের যাত্রা শুরু হলেও ঝুলে থাকা এসব প্রকল্পে একদিকে বাড়ছে ব্যয় অন্যদিকে স্বভাবিক চলাচল ব্যহতের পাশাপাশি দীর্ঘ হচ্ছে ভোগান্তি।
সচেতন নাগরিক কমিটি সনাক’র সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম টুকু বলেন, এই পরিস্থিতি সৃষ্টি জন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার দায়িত্বহীনতার প্রমাণ থাকলে অবশ্যই তার জবাবদিহিতাসহ শাস্তি হওয়া উচিত। টেকসই উন্নয়ন অভিযাত্রা বাস্তবায়নে সরকারের অর্থ বরাদ্দ দেয়ার পরও কেন এমন জনভোগান্তি হবে? এতে হয় তাদের অনিয়ম অবহেলা আছে, নচেৎ তারা অযোগ্য।
তিনি আরো বলেন, গত উন্নয়ন সমন্বয় সভাতে যোগ দিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতর এলজিইডি কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো.আব্দুর রাজ্জাক বলেন, উজানগ্রাম-ঝাউদিয়া সড়কের কুমার নদীর উপর নির্মাণাধীন ৮১ মিটার দৈর্ঘের ব্রিজটির নির্মাণ কাজ কিছু দিন বন্ধ ছিল তবে খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে।