সিএমপির এডিসি কামরুল হাসানের সম্পদের পাহাড়

প্রকাশিত: ৮:২১ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১০, ২০২৪

মোঃ আহসানউল্লাহ হাসানঃ
ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পেয়ে সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামেন দুর্নীতি দমন কমিশন। চট্টগ্রাম নগরের সবচেয়ে অভিজাত খুলশী আবাসিক এলাকায় ‘ফয়জুন ভিস্তা’ অ্যাপার্টমেন্টের অষ্টম তলায় সি-৭ নামে ২ হাজার ৫৭০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট ও ১৩৬ বর্গফুটের পাড়ি পার্কিং থাকার তথ্য পায়। সোয়া সাত লাখ টাকায় ফ্ল্যাট ও মাত্র ২৫ হাজার টাকায় পার্কিং স্পেস কিনেছেন এবং আয়কর নথিতে উল্লেখ রয়েছে দাবি করলেও খুলশীতে আড়াই হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটের বর্তমান বাজারমূল্য তিন কোটি টাকার বেশি। পাশাপাশি নগরের পশ্চিম নাসিরাবাদ মৌজায় সাত শতক ভূমির ওপর চার তলাবিশিষ্ট বাড়ি রয়েছে। এছাড়া স্ত্রীর নামেও গড়েছেন অঢেল সম্পদ। তাদের এসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। ৮জুলাই২০২৪ তারিখ চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ জেবুননেছা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। কামরুল হাসান বর্তমানে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পিওএম) পদে আছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদকের আইনজীবী কাজী সানোয়ার আহমেদ লাভলু।
দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তা কামরুল হাসানের ৯ কোটি ৭৩ লাখ ২২ হাজার ৪৪ টাকার এবং তার স্ত্রী সায়মা বেগমের ১ কোটি ৬২ লাখ ৮৫ হাজার ১৮৮ টাকার সম্পদের কোনো বৈধ উৎস মেলেনি। গত ১৩ মে দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা এ বিষয়ে দুদক কমিশন বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেন। তার প্রেক্ষিতে কমিশন ওই কর্মকর্তার সম্পদ ক্রোকের জন্য আদালতে আবেদন দাখিলের অনুমতি দেয়।’
দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত-১ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. এমরান হোসেন আদালতের কাছে পুলিশ কর্মকর্তা কামরুল হাসানের সম্পদ ক্রোকের আবেদন করলে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে দুদক অনুসন্ধানে নেমে সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নগরের সবচেয়ে অভিজাত খুলশী আবাসিক এলাকায় ‘ফয়জুন ভিস্তা’ অ্যাপার্টমেন্টের অষ্টম তলায় সি-৭ নামে ২ হাজার ৫৭০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট ও ১৩৬ বর্গফুটের পাড়ি পার্কিং থাকার তথ্য পায়। সোয়া সাত লাখ টাকায় ফ্ল্যাট ও মাত্র ২৫ হাজার টাকায় পার্কিং স্পেস কিনেছেন—আয়কর নথিতে দাবি করলেও খুলশীতে আড়াই হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটের বর্তমান বাজারমূল্য তিন কোটি টাকার বেশি। পাশাপাশি নগরের পশ্চিম নাসিরাবাদ মৌজায় সাত শতক ভূমির ওপর চার তলাবিশিষ্ট বাড়ি রয়েছে।
জমিসহ ভবন নির্মাণে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা খরচ দেখালেও নাসিরাবাদ এলাকায় এক শতক ভূমিই এক কোটি টাকার বেশি মূল্যে কেনাবেচা হচ্ছে। সেই হিসাবে ভূমি ও ভবনের বাজার মূল্য সাত-আট কোটি টাকা। একইভাবে ঢাকার সাভারে ১০৭ শতক জায়গার ওপর সাভার সিটি সেন্টার নামে ১২ তলা ভবনের চারজন অংশীদারের একজন এডিসি কামরুল। সেখানে তিনি কাগজ-কলমে সাত কোটি ৫২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এ ভবনের বেজমেন্টে ৯০টি, প্রথম তলায় ১৪০টি, দ্বিতীয় তলায় ১৪৬টি, তৃতীয় তলায় ৮৯টি ও চতুর্থ তলায় ১০৩টি দোকান এবং ৫ হাজার বর্গফুটের ফুডকোর্ট, পঞ্চম তলায় অফিস ও ষষ্ঠ তলায় ৬৭টি ফ্ল্যাট রয়েছে। বাজার মূল্যে এ সম্পদের মূল্য শতকোটি টাকারও বেশি।
ঢাকার সাভারে মার্কেট ছাড়াও সাভার সিটি টাওয়ার নামে একটি ১০ তলা আবাসিক ভবনেরও অংশীদার। সেখানে ৫৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এভাবেই চট্টগ্রাম ও ঢাকায় সম্পদ আর সম্পদ গড়ে তুলেছেন তিনি। এছাড়া কামরুল চট্টগ্রাম নগরের উত্তর হালিশহর, নাসিরাবাদ, চান্দগাঁও এলাকা এবং ঢাকার সাভারে ১৫৪ শতক জমি ও দুটি বাড়ি কিনেছেন। ব্যাংকে ১ কোটি ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকার বন্ড ও এফডিআর রয়েছে। তাঁর স্ত্রী সায়মার নামে রয়েছে পাঁচটি জাহাজ। চট্টগ্রামের হালিশহরে ৪০ শতক নাল জমি রয়েছে। তা মাত্র ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় ক্রয় দেখানো হলেও বর্তমান বাজারে সেই জমির মূল্য ১২ থেকে ১৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকে তাঁর নামে ৪৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও দেড় কোটি টাকায় কেনা পাঁচটি জাহাজ রয়েছে।
১৯৮৯ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে যোগ দেন কামরুল হাসান। পরে ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর বিএনপি জোট সরকারের আমলে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, বাঁশখালীসহ বিভিন্ন থানায় ওসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০২৩ সালের ৩১ মে দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে তাঁর সম্পদের অনুসন্ধানের অনুমোদন দেওয়া হয়।