সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অনেকে

প্রকাশিত: ৮:৩০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৮, ২০২৪

জীবনযাত্রা দিনে দিনে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসছে রাজধানীতে। আজ বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে প্রচুর যানবাহন চলাচলে গতিময় হয়ে ওঠে ঢাকার রাজপথ। বৈষম্যবিরোধী যে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে রাজপথ অচল করে সরকারের পতন ঘটিয়েছেন, তাঁরাই এখন রাজপথে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন। কাজটি সুচারুভাবেই সম্পন্ন করছেন তাঁরা।

৫ আগস্ট সোমবার সরকার পতনের দিন থেকেই রাজধানীতে পুলিশের দেখা মিলছে না। সেদিন পথে যানবাহনও চলাচল করেছে অল্প। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিজয়ে জনতার ঢল নেমেছিল পথে পথে। পরদিন মঙ্গলবার থেকে কিছু কিছু করে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। দু–একটি মোড়ে যান চলাচলে বিশৃঙ্খলাও সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসে যানজট নিরসনের চেষ্টা চালিয়েছেন। এরপর পথে যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে থাকায় কার্যকর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কালবিলম্ব না করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা পথে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের কাজে নেমে পড়েন।

আজ রাজধানীর প্রতিটি সড়কের মোড়ে বিপুলসংখ্যক সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিএনসিসি, বয়স্কাউট, গার্ল গাইডস, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবীদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া আনসার সদস্যরাও বুধবার থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে যোগ দেন। আর আজ বৃহস্পতিবার দোয়েল চত্বর, শিক্ষা ভবন মোড়, ফুলবাড়িয়া মোড়সহ বিভিন্ন সড়কের মোড়ে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদেরও দেখা গেল বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিলে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছেন।

শাহবাগে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ
শাহবাগে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

শাহবাগ মোড়ে কথা হলো রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবী রাহিদ হাসানের সঙ্গে। তিনি জানালেন, তাঁদের ৮০ জন সদস্য গতকাল থেকে শাহবাগ, বাংলামোটর, সোনারগাঁ হোটেল, মগবাজার, বেইলি রোড—এসব এলাকায় কাজ করছেন। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে তাঁরা বিভিন্ন ধরনের জনকল্যাণকর কাজে অংশ নিয়ে থাকেন। এখন এই বিশেষ পরিস্থিতিতে পুলিশের অনুপস্থিতিতে নগরজীবনের যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষা করা খুবই জরুরি ও জনগুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ কারণেই তাঁরা শিক্ষার্থীদের মতোই এই কাজে অংশ নিয়েছেন।

শহরের বিভিন্ন এলাকায় কথা হয় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ব্যতিব্যস্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তাঁরা জানান, পালা করে দায়িত্ব পালন করছেন। বেশ নিষ্ঠার সঙ্গেই তাঁরা কাজটি করছেন। মোড়ে রিকশা বা স্কুটারের কোনো রকম জটলা হতে দিচ্ছেন না। মোড় থেকে অনেকটা দূর পর্যন্ত প্রতিটি যানবাহনকে নিজ নিজ লেন মেনে চলতে অনুরোধ করছেন এবং যানবাহনের চালকেরা নির্দ্বিধায় তা পালন করছেন। ফলে সংকটের সময়ও এখন রাজপথে যানবাহনের বেশ স্বচ্ছন্দ গতি।

সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব স্বেচ্ছায় পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। মতিঝিল, ৮ আগস্ট, ঢাকা
সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব স্বেচ্ছায় পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। মতিঝিল, ৮ আগস্ট, ঢাকাছবি: দীপু মালাকার

এদিকে দোকানপাট, বড় বড় অনেক মার্কেটও খুলতে শুরু করেছে আজ থেকে। ঢাকা নিউমার্কেট খুলেছে আজ। তবে এখানে সব দোকানপাট খোলেনি আর বেচাকেনাও কম। লোকসমাগম খুব অল্প। পোশাকের দোকান রাজশ্রী ফ্যাশনের মালিক আকাশ মাতবর, স্টেশনারির দোকান ফ্রেন্ডস ট্রেডিং করপোরেশনের বিক্রয় প্রতিনিধি হামিদ হোসেন বললেন, চার দিন পর আজ মার্কেট খুলেছে। বিক্রি তেমন নেই।

গাউছিয়া মার্কেটও আজ খুলেছে চার দিন পর। প্রসাধনী ও ইমিটেশন অলংকারের দোকান রনি কালেকশনের ব্যবস্থাপক আমির হোসেন বলেন, অল্প করে বিক্রি শুরু হয়েছে। সপ্তাহখানেক ধরে মানুষ কেনাকাটার কথা ভাবেননি। এখন কিছু কিছু ক্রেতা আসছেন।

ব্যবসার লেনদেনে মন্দাভাব থাকলেও অফিসে লোকজনের যাতায়াত বেড়েছে। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের অভিঘাত কাটিয়ে স্বাভাবিকতার দিকে ফিরছে জীবনযাত্রা।