ঢাকার কেরানীগঞ্জে অবাধে বিক্রি হচ্ছে নেশার ট্যাবলেট এবং ইঞ্জেকশন।

প্রকাশিত: ৪:১২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২৩

————–************************——–
শিব ব্রত(বিশেষ প্রতিনিধি)
—————**************——-***—-*
টামাডল মুলত: ব্যথা নাশক ট্যাবলেট।এনাডল,টাপেন্ডাডল,পেন্টাডল, ডাইক্লোপেন সহ আরো বিভিন্ন ব্যথা নাশক ট্যাবলেট এবং ইজিয়াম সহ পেথেডিন ইঞ্জেকশন বাজারজাত করে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানী। কিন্তু মাদকাসক্তরা এটিকে মাদকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে। হেরোইন ও ইয়াবার দাম বেশি হওয়ায় স্বল্প মূল্যের এ ট্যাবলেট এবং ইঞ্জেকশন বেছে নিয়েছে তারা। কেরানীগঞ্জ সহ দেশের সর্বত্র এ নেশার ট্যাবলেট ও ইঞ্জেকশন বিক্রি হচ্ছে অবাধে।এই ট্যাবলেট এবং ইঞ্জেকশন বিনা প্রেসক্রিপশনে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে।
জানা যায়,এই জাতীয় ব্যথা নাশক ট্যাবলেট ও ইঞ্জেকশন কে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের তফসিল ভুক্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। এছাড়া ও এই জাতীয় ট্যাবলেট ও ইঞ্জেকশন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে নির্দিষ্ট ফার্মেসিতে বিক্রি সহ প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা এ খবর শুনে বিপুল পরিমাণ ট্যাবলেট ও ইঞ্জেকশন মজুদ করে অবাধে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দেখা যায় কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার ফার্মেসিতে হাতের নাগালে পাওয়া যাচ্ছে এজাতীয় ট্যাবলেট ও ইঞ্জেকশন।আর বিনা প্রেসক্রিপশনে কিনে নিয়ে যাচ্ছে মাদক সেবিরা। ১৮,১০ও ৫ টাকা মূল্যের প্রতি ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছে একশ বা ততোধিক টাকায়। ইজিয়াম এবং পেথেডিন ও বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ২৫০ টাকায়। অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে কেরানীগঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, বুড়িগঙ্গা নদীর দক্ষিণ বাঁধে টংদোকান গুলোর পিছনে নেশাগ্রস্হরা নিজের শরীরে নিজেই ইঞ্জেকশন পুস করছে। নিজের শরীরে ইঞ্জেকশন পুস করছে এমন অবস্থায় এক হাড় জিরজিরে নেশাগ্রস্তের কাছে গিয়ে তার নাম জানতে চাইলে, জানায় তার নাম কালাম। পেশায় রিকসা চালক। তার নিজস্ব বাড়ী নেই। দিনে রিকসা চালায়‌।রাতে রাস্তায় অথবা যেখানে সুবিধা হয় সেখানে ঘুমায়। দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা উপার্জন হয়।এক প্রশ্নের জবাবে ওই কালাম জানায়,সে আগে হেরোইন খেত, কিন্তু দাম বেড়ে যাওয়ায় তাই সে এখন ইজিয়াম ইঞ্জেকশন ব্যবহার করে।দিনে কয়টা ইঞ্জেকশন পুস করা লাগে উত্তরে কালাম জানায়, দৈনিক তিনটা ইঞ্জেকশন পুস করা লাগে এবং এই হিসেবে দৈনিক ৯০ টাকা খরচ হয়। কোথায় থেকে এই ইঞ্জেকশন কিনে এবং আর কারা এই জাতীয় নেশা করে জবাবে কালাম জানায়, বুড়িগঙ্গা বাঁধ সংলগ্ন প্রায় ফার্মেসিতে এই জাতীয় ট্যাবলেট ও ইঞ্জেকশন বিক্রি করে মাঝে মাঝে কিছু ভ্রাম্যমান বিক্রেতাও এগুলো বিক্রি করে থাকে। তার দলে সুজন, জসিম সহ আরো অনেকে আছে বলেও জানায় কালাম।
এদিকে নেশার টাকা সংগ্রহ করতে কেরানীগঞ্জে বেড়ে গেছে চুরি ও নানাধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরের ছোট দোকানের সহকারী হাসিনা আক্তার বলেন, আমি এই দোকানে কাজ করে খাই। স্বামী নেই। আমার একমাত্র ছেলে নেশা করে। আগে গাঁজা খেতো।এখন কিসের জানি ট্যাবলেট আছে তা খায়। ট্যাবলেট কেনার টাকা না পেলে আমার গলায় ছুরি ধরে, অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে, ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর করে।
এলাকার সচেতন লোকেরা বলেন, হাতের নাগালে এ ধরনের ট্যাবলেট ও নেশা জাতীয় জিনিস পেয়ে এলাকার উঠতি বয়সের অধিকাংশ ছেলে নেশায় জড়িয়ে পড়েছে। এলাকায় চুরি বেড়ে গেছে। প্রশাসনকে এদিকে নজর দেওয়ার ও অনুরোধ করেন তারা। এদিকে কয়েকটি ফার্মেসিতে এজাতীয় ঔষধ আছে কিনা জানতে চাইলে ,তারা ওই জাতীয় ঔষধ বিক্রি করেনা বলে জানায় ।তবে স্হানীয়রা বলেন এই জাতীয় নিষিদ্ধ ঔষধ স্হানীয় সব ফার্মেসি থেকেই সংগ্রহ করে নেশাগ্রস্তরা।
ঢাকা ঔষধ প্রশাসন অফিস সূত্র জানায়,এ ধরনের ঔষধ শুধু হাসপাতাল ও ক্লিনিক সংলগ্ন ফার্মেসিতে রাখার অনুমতি আছে।এ বিষয়ে কঠোর। তবে এ বিষয়ে
অভিযোগ পেলে অবশ্যই অভিযান চালানো হবে।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি কে তার মুঠোফোনে বার বার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।