দশ বছরে পা দিয়েছে জোড়া শরীর নিয়ে জন্মানো সেই মনি-মুক্তা,অস্ত্রোপচারে পৃথক হয়ে তারা এখন সুস্থ।

ক্রাইম ক্রাইম

পেট্রোল

প্রকাশিত: ১১:২৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২২, ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক:আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নয়নের ছোয়া এবং বাংলাদেশের চিকিৎসক এ আর খানের সাফল্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশর চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রাকে সম্ভাবনাময় করেছে।
আর সাফল্যকে কাজে লগিয়ে বাংলাদেশে প্রথম অস্ত্রোপচারে মাধ্যমে জোড়া লাগানো শিশুর সফল পৃথকীকরণ করা হয়। এই সাফল্যের ইতিহাস বীরগঞ্জের জোড়া লাগানো জমজ দুই বোন মনি-মুক্তা। সেই ইতিহাস ৯ বছর পূর্বে।

বাবা-মায়ের কোলে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়ে ওঠা মনি মুক্তা এখন ১০ বছরে পা দিয়েছে। তারা এখন স্থানীয় পালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী।

বৃহস্পতিবার নিজ বাড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হয় মনি-মুক্তার জন্মদিন। বিকালে বিদ্যালয় শিক্ষক ও মনি-মুক্তার বন্ধুবান্ধবসহ প্রতিবেশীদের উপস্থিতিতে কেক কেটে জন্মবার্ষিকী পালন করে পরিবারের লোকজন।
জন্মদিন উপলক্ষে গণমাধ্যম কর্মীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয় পরিবারের পক্ষ থেকে।
মনি ও মুক্তা দুজনই সুস্থ আছে। তারা একে অপরের সঙ্গে খেলা করে সময় কাটায়। বেশ সুন্দর করে কথা বলে। নিয়মিত স্কুলে যায় বলে জানিয়েছেন তাদের বাবা-মা। জন্মদিনে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছে মনি-মুক্তা।
দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের শরৎ চন্দ্র পালের পুত্র জয় প্রকাশ পাল। জয় প্রকাশ পালের স্ত্রী কৃষ্ণা রাণী পালের গর্ভে ২০০৯ সালের ২২ আগস্ট পার্বতীপুর ল্যাম্ব হাসপাতালে সিজারিয়ান সেকশনে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মনি এবং মুক্তা জোরা লাগা অবস্থায় জন্ম নেয়।
পরে রংপুরের চিকিৎসকগণ ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে যমজ বোনকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথক করার পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শ ক্রমে ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকা শিশু হাসপাতালে মনি-মুক্তাকে ভর্তি করা হয়।
অতঃপর ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শিশু হাসাপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এ আর খানের সফল অপারেশনের মাধ্যমে মনি-মুক্তা ভিন্ন সত্ত্বা লাভ করে। বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে সৃষ্টি হয় এক নতুন ইতিহাস।
মনি-মুক্তার বাবা জয় প্রকাশ পাল জানান, সে সময় গ্রামের মানুষ এটাকে অভিশপ্ত জীবনের ফসল বলে প্রচার করতে থাকে। সমাজের নানা কুসংস্কারে প্রায় একঘরে হয়ে পড়ি। সমাজের নানা অপবাদে গ্রামে আসিনি। হতাশার মাঝে স্বপ্ন দেখি মনি-মুক্তাকে নিয়ে। বিভিন্ন চিকিৎসকের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকি তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাওয়ার জন্য। আমাদের স্বপ্ন বাস্তব হয় ডা. এ আর খানের কারণে। সেই মানুষটির কারণে আমাদের এই দুই সন্তানের নতুন করে বেঁচে থাকা।
মনি-মুক্তার মা কৃষ্ণা রাণী পাল জানান, ২০০৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে প্রথমে ২১ ফেব্রুয়ারি পার্বতীপুরে বাবার বাড়িতে আসি। কিছুদিন সেখানে থাকার পর নিজগ্রাম বীরগঞ্জ উপজেলার পালপাড়ায় মনি-মুক্তাকে নিয়ে আসি। সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে এবং ডা. এ আর খানের সাফল্যে আমরা মনি মুক্তাকে স্বাভাবিকভাবে ফিরে পেয়েছি।
তিনি বলেন, সব কষ্ট ভুলে তাদেরকে চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। মনি-মুক্তা এবং পরিবারের জন্য সবার দোয়া কামনা করেছেন তিনি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক ধনঞ্জয় পাল ও সহকারী শিক্ষিকা শিউলি আকতার জানান, মনি-মুক্তা এখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। তারা লেখাপড়ায় বেশ ভালো। সহপাঠীরা তাদের খুব ভালোবাসে। মনি শান্ত হলেও মুক্তা বেশ চটপটে বলেও তিনি জানান।
মনি-মুক্তাদের একমাত্র বড় ভাই সজল কুমার পাল অনার্স তৃতীয় বর্ষে লেখাপড়া করছেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের লোকজন।