পৃথীবির শ্রেষ্ঠ মহামানব  নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসালাম।

প্রকাশিত: ১১:৫৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৫, ২০২৩

মো: মিজানুর রহমান:পৃথীবির শ্রেষ্ঠ মহামানব
নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসালাম।

বিশ্বাসী -অবিশ্বাসী , মুসলিম -অমুসলিম, সবার মনেই এই প্রশ্ন,
কেন নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর এত বদনাম ?
কেন তাকে অপমান করার চেষ্টা করতে হবে?
যখন উগ্রবাদী শিবসেনা, ভারতে মুসলিমদের উপর নির্যাতন করে, কিংবা কেউ অন্যায়ভাবে কাশ্মীরিদের হত্যা করে, তখন কেউ কিন্তু কৃষ্ণকে এইজন্য দায়ী করেনা।
যখন বার্মায় রোহিজ্ঞাদের উপর এমন পাশবিক গণহত্যা হলো তখন কেউ এই গন হত্যার জন্য বুদ্ধকে অপমান করার চেষ্টা করেনি।
একইভাবে, ১.৫ মিলিয়ন এরও বেশী সিরীয় ও ইরাকিদের হত্যার দায় যীশুর নেই।
প্রশ্ন হলো, নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর এত বদনাম কেন ?
তাঁর কি অপরাধ?
কারন হলো, নবী মুহাম্মদ (সাঃ), অন্যদের মত, কৃষ্ণ, বুদ্ধ ও যীশুর মত শুধুমাত্র একজন ধর্মপ্রচারক ছিলেন না
তিনি এই পৃথিবীতে এক ধরণের বিপ্লব নিয়ে এসেছিলেন
এই কথাটি কেন বলেছি, সেই বিষয়ে কিছু তথ্য দেই, তারপর আমরা আবার মূল প্রশ্নে চলে আসবো।
আপনি কি জানেন, নবী হওয়ার পর এই মানুষটি, সর্বপ্রথম সমাজে কি পরিবর্তন চেয়েছিলেন ?
তিনি চেয়েছিলেন, নারীর অধিকার।
সমাজ পরিবর্তনের জন্য কোরআনের আয়াতগুলিকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাজালে
প্রথম আয়াতটির মূল বিষয় ও আদেশ ছিল, “নারী শিশুদেরকে জীবন্ত কবর দেয়া যাবে না”
এর পর কিছুদিন পরই তিনি বললেন, একজন নারী তার পিতার, স্বামীর ও সন্তানের সম্পদের অংশীদার হবে।
রাসূল (সাঃ) যখন এই ঘোষনা দিলেন, তখনই তিনি সমাজপতিদের রোষানলে পড়ে গেলেন।
এত দিনের মেনে চলা এই সংস্কৃতি ও আইনের বিরুদ্ধে, এই মত তারা মেনে নিতে পারেনি।
(নারী শিশুকে জীবন্ত কবর দেয়ার মত অপরাধ এই পৃথিবীতে এখনো আছে, আধুনিক ভারতে প্রতিদিন দুই হাজার নারী শিশুর এবরশন হয় কিন্তু কত জন নারীবাদী এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ছেন ?)
তারপর আসলো ক্রীতদাসের কথা।
তিনি জানালেন, মানুষ আর মানুষের ক্রীতদাস হতে পারবেনা।
মৃত পিতার রেখে যাওয়া ইথিওপিয়ান ক্রীতদাসী উম্মে আইমানকে নিজের মা, আর উপহার হিসাবে পাওয়া জায়েদকে নিজের ছেলে, হিসাবে যখন সমাজে পরিচয় করিয়ে দিলেন, তখন সারা পৃথিবীতে আলোচনা শুরু হয়ে গেলো,
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিসসালাম আসলে কি চায় ?
ক্রীতদাস ছাড়া সমাজ ব্যবস্থা কেমন করে চলবে? অর্থনীতি কি করে আগাবে? ক্রীতদাসের দল মুক্তির জন্য আন্দোলন শুরু করলে কি অবস্থা হবে ?
ব্যাস, তিনি হয়ে গেলেন সমাজের সবচেয়ে বড় শত্রু।
(আজকের আধুনিক ইউরোপীয়ানদের হাজার বছরের ক্রীতদাস প্রথা এখনো বহাল তবিয়তেই আছে,  ব্ল্যাক লাইভস ষ্টীল ডাজ নট মেটার )
ম্যালকম এক্সের মত বিপ্লবীরা, মুহাম্মদ আলীর মত শক্তিমান পুরুষরা যখন নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে ভালোবাসতে শুরু করলো, তখনই তাদের মনে হলো, সব অপরাধ ঐ আরব লোকটিরই।
তিনি বললেন,
ধনীদের সম্পদের সুষম বন্টন হতে হবে,  তাদের সম্পদের উপর গরিবের অধিকার আছে।
তিনি ঘোষণা দিলেন, সবাইকে জাকাত দিতে হবে।
সমাজের ধনী ব্যবসায়ী ও ক্ষমতাবানরা ভাবলো,
মুহাম্মদ একজন সমাজ বিপ্লবী, তাকে সমাজ থেকে তাড়িয়ে দিতে হবে।
শেক্সপিয়ারের শাইলকের মত লোভী সব ইহুদি মুদ্রা ব্যবসায়ীদেরকে সুদ বন্ধ করতে আদেশ দিলেন।
ধনী-গরিবের অর্থনৈতিক বৈষম্যকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করলেন।
সবাই ভাবলো, মুহাম্মদ একজন সোসালিস্ট, তাকে মেরে ফেলতে হবে।
নিজের অনুসারীদেরকে বললেন, তোমরা আর মদ পান করবে না,  সমাজে অন্যায় অবিচার কমে গেলো।  চুরি ডাকাতি কমে গেলো।
মাতাল স্বামীর সংখ্যা কমে যাওয়ায়, নারী নির্যাতন প্রায় বন্ধ হয়ে গেলো।
অসভ্য পুরুষের মনে হিংসা শুরু হলো, এ লোক পাগল নাকি? মদ খাবে না, নারীকে নিয়ে ফুর্তি করবে না, তাহলে
সে কোন ধরণের সমাজ চায়?
মাদক ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে মুহাম্মদকে ঠেকানোর জন্য নতুন পরিকল্পনা শুরু করলো।
মানুষের কষ্টার্জিত সম্পদ নিয়ে জুয়ার আসরের নিষেধাজ্ঞা আসলো।
মুহাম্মদের আর কোন রক্ষা নেই।  সে বড় বেশি বাড়া বাড়ি করছে।
জুয়ার ব্যবসা ছাড়া সমাজে বিনোদনের আর কি রইলো ?
মুহাম্মদকে ঘর ছাড়া করতে হবে।  তার সব আয়-রোজগার বন্ধ করতে হবে।
এখন কি বুঝতে পারছেন,
কেন মুহাম্মদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহিসসালাম) এত অপরাধ ?
এই যে এখন, নবী মুহাম্মদকে (সাঃ) কে এত বছর পর অপমান করার চেষ্টা করা হয়েছে
তার কি কারন?
শুধু “ফ্রীডম অফ স্পিচ” ?
নো।
যে মানুষটির অনুসারীরা শুধু ভালোবাসা দিয়ে একসময় আফ্রিকা বিজয় করেছিল
সেই আফ্রিকার ২৪ টি দেশের, শত বছরের কলোনিয়াল নির্যাতন নিপীড়ন ও শোষণ থেকে যখন আলজেরিয়া ও তিউনেশিয়ার মত দেশগুলি অর্থনৈতিক ও রাজনৌতিক মুক্তি চেয়েছে তখনই নবী মুহাম্মদ হয়ে গেলেন বড় অপরাধী।
লক্ষ-লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে, অসহায় ও নিরপরাধ মানুষকে নিজের ক্রীতদাস করে রেখে যে সম্পদের পাহাড় তারা একসময় গড়েছেন, সেটি যখন হুমকির মুখে তখনই সব রাগ ও ক্ষোভ এসে জমা হয়েছে।
এখন তাদের নবীকে অপমান করতে হবে, তাঁর ব্যঙ্গ চিত্র প্রদর্শন করতে হবে।
তারপর আফ্রিকাতে আবার জঙ্গি দমানোর জন্য ন্যাটো বাহিনীকে পাঠাতে হবে।
কিন্তু তারা পারবে না।
পিউ রিসার্চের গবেষণা অনুযায়ী, শুধু ইউরোপেই প্রতিবছর প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে।
আপনি দেখবেন কিছু দিন পর এই সংখ্যা হবে, দশ হাজার।
কারন হলো, এই ঘটনার পর, মানুষ জানতে চাইবে ,
কে এই মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ?
প্রথমেই সে জানবে।
মানুষটি শুধু আমাদেরকে মনে প্রাণে একজন মাত্র সৃষ্টিকর্তাকে ভালোবাসতে বলেছেন।
মানুষরূপী কোন খোদার কাছে মাথানত করতে নিষেধ করেছেন।
একজন মানুষের জন্য শুধু এতটুকু জানাই যথেষ্ট।
এখন কেউ যদি চোখ বন্ধ করে সূর্যের আলোকে দেখতে না চায়, তাহলে কি সূর্য আলো দেয়া বন্ধ করে দিবে নাকি সূর্যের আলো হারিয়ে যাবে ?
নবী মুহাম্মদ (সাঃ) হলেন এই পৃথিবীতে সেই আলো
এই আলোকে দাবিয়ে রাখার ক্ষমতা কারও নেই।