প্রশাসনে অবসরের পর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া, চুক্তির সংস্কৃতি থেকে মুক্তির দাবি।

প্রকাশিত: ৩:১৯ অপরাহ্ণ, মে ১৮, ২০২৩

বিশেষ প্রতিনিধি : প্রশাসনে ফের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাড়ছে। বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ বা দপ্তরে সিনিয়র সচিব ও সচিব মর্যাদার ১৯ কর্মকর্তা চুক্তিভিত্তিক চাকরি করছেন। গত কয়েক মাসের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, একের পর এক সচিব অবসরের বয়সসীমা শেষে ফের চুক্তিতে স্বপদে বহাল থাকছেন। এ নিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে সচিব হওয়ার দৌড়ে থাকা অতিরিক্ত সচিবরা এ নিয়ে বিরক্ত। চুক্তির সংস্কৃতি থেকে তারা মুক্তি চান। একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এমনটি জানা গেছে।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মো. ফিরোজ মিয়া কালবেলাকে বলেন, চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়ার ফলে পদোন্নতিপ্রত্যাশীরা বঞ্চিত হন। ফলে তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়। তাদের মধ্যে আন্তরিকতার কিছুটা ঘাটতিও দেখা দিতে পারে। এতে মূলত রাষ্ট্রেরই ক্ষতি হয়। তিনি আরও বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তরা সরকারের ঊর্ধ্বতনদের মন রক্ষায় তাদের আদেশ-নিষেধকেই বেশি প্রাধান্য দেন। তারা জনস্বার্থ চিন্তা করেন কম। ফলে জনস্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়। সুতরাং রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থে চুক্তির সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

close

প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, একজনের চুক্তিতে নিয়োগে পদোন্নতি আটকে যায় ৪ জনের। যিনি অতিরিক্ত সচিব, তিনি সচিব হওয়ার সুযোগ হারান। যুগ্ম সচিব অতিরিক্ত সচিব হতে পারেন না। উপসচিব যুগ্ম সচিব হতে পারেন না। আর একজন সিনিয়র সহকারী সচিব উপসচিব হওয়ার সুযোগ হারান। এ কারণে প্রশাসন থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের রেওয়াজ বাতিল করা খুবই জরুরি বলে মনে করেন কর্মকর্তারা। তারা আরও বলেন, নির্বাচনী বছরে সরকার বর্তমান সচিবদের ওপরই বেশি আস্থা রাখতে চায়। ফলে তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে নির্বাচন শেষ করতে চায়। কিন্তু নতুনদের দায়িত্ব দেওয়া হলে প্রশাসনে কাজের গতি বাড়বে। তারা নির্বাচনকালীন সরকারেও ভালোভাবে দায়িত্ব সামলাতে পারবেন।

তবে ভিন্নমত পোষণ করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তার মতে, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ও কারিগরি পদে কোনো কারণে যোগ্য ব্যক্তি পাওয়া না গেলে জনস্বার্থেই চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অতীতেও ছিল, এখনো আছে। প্রশাসনিক কাজের সুবিধার জন্যই সরকারকে এটা করতে হয়।

১৯ দপ্তরে চুক্তিভিত্তিক সচিব/সিনিয়র সচিব : রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জন বিভাগের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, প্রেস সচিব (সচিব) জয়নাল আবেদীন এবং রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে সংযুক্ত সচিব ওয়াহিদুল ইসলাম খান চুক্তিতে দায়িত্ব পালন করছেন। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে রয়েছেন। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) পদে চুক্তিতে রয়েছেন।