শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকার পরও অধ্যক্ষ পদে রংপুরের সমাজকল্যাণ বিদ্যাবিথী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ নাহিদ ইয়াসমিন।

প্রকাশিত: ৩:৫০ অপরাহ্ণ, মে ১৯, ২০২৩

বিশেষ প্রতিনিধি : শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকার পরও অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের অভিযোগে রংপুরের সমাজকল্যাণ বিদ্যাবিথী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ নাহিদ ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত মঙ্গলবার দুদকের রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হোসাইন শরীফ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, নাহিদ ইয়াসমিন প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকার সময় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকার পরও অধ্যক্ষ পদে আবেদন করেন। এরপর সাজানো একটি নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান। এর মধ্য দিয়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন তিনি।

বুধবার (১৭ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু হেনা আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‌‘নীতিমালা অমান্য করে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেয়েছেন নাহিদ ইয়াসমিন। প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।’

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, নাহিদ ইয়াসমিন ১৯৭৭ সালে রাজশাহী বোর্ডের অধীনে মাধ্যমিক পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে, ১৯৭৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে, ১৯৮২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস বিভাগে স্নাতক পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে এবং ১৯৮৩ সালে একই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৯৫ সালের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী অধ্যক্ষ পদে আবেদনের জন্য উপযুক্ত নন নাহিদ ইয়াসমিন। এরপরও অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের আবেদন করে চাকরি নিয়েছেন।

দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায়, নাহিদ ইয়াসমিন ১৯৮৭ সালের ৭ জুলাই ওই প্রতিষ্ঠানে ইসলামের ইতিহাস বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৮ সালের ১ মার্চ এমপিওভুক্ত হয় প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৫ সালে একই প্রতিষ্ঠানে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী অধ্যাপক হন। ওই পদে দায়িত্ব পালনকালে সাবেক অধ্যক্ষ অবসরে যান। ২০০১ সালের ৯ জানুয়ারি ম্যানেজিং কমিটি সভার সিদ্ধান্তে রংপুর থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকায় ২০০২ সালের ১৬ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা কী হবে, তা ইচ্ছাকৃতভাবে উল্লেখ করা হয়নি।

এমপিওভুক্ত বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অধ্যক্ষ নিয়োগ সংক্রান্ত বিদ্যমান নীতিমালা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য জনবল কাঠামো মোতাবেক অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় শ্রেণির অনার্স ও দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। সব পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ থাকতে হবে। জনবল কাঠামো ১৯৯৫ অনুযায়ী শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে দুটি তৃতীয় শ্রেণি গ্রহণযোগ্য ছিল না। যেহেতু নাহিদ ইয়াসমিনের অধ্যক্ষ নিয়োগকালে দুটি তৃতীয় বিভাগ ছিল, সেক্ষেত্রে নিয়মের লঙ্ঘন হয়েছে। অথচ এভাবে গত ২০ বছর ধরে চাকরি করছেন তিনি।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, সমাজকল্যাণ বিদ্যাবিথী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে যে ছয় জন অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের আবেদন করেন, তাদের পাঁচ জনই ওই প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। অপরজন মাহিগঞ্জ কলেজে উপাধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক হোসাইন শরীফ বলেন, ‘নীতিমালা অমান্য করে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেয়েছেন নাহিদ ইয়াসমিন। অভিযোগ পাওয়ার পর তা আমলে নিয়ে তদন্ত করে দুদক। তদন্ত শেষে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মামলা করা হয়। মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’