সদ্য সচিব হওয়া খাইরুল ইসলাম বেসিক ব্যাংকে ৯ কোটি টাকা ঋণ, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সত্তেও পদোন্নতি।

প্রকাশিত: ৩:৩০ অপরাহ্ণ, জুলাই ৯, ২০২৩

বিশেষ প্রতিনিধি :: মো. খাইরুল ইসলাম বেসিক ব্যাংকের একজন ঋণখেলাপি। ব্যাংকের টাকা পরিশোধ না করলেও সরকারি চাকরিতে তাঁর একের পর এক পদোন্নতি হয়েছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সময় ২০১০ সালে ছিলেন উপসচিব। এরপর পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব এবং সর্বশেষ ২ জুলাই সচিব হয়েছেন। এখন তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি)। কিন্তু এত পদোন্নতি হলেও ব্যাংকের টাকা আর পরিশোধ করেননি তিনি। ৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে কিছু ফেরত দিলেও জমতে জমতে সুদাসলে তাঁর দেনা এখন ৯ কোটি টাকা। ঋণও নিয়েছিলেন প্রভাব খাটিয়ে, বেআইনিভাবে এবং সরকারের অনুমতি ছাড়া।

বেসিক ব্যাংক পাওনা আদায়ে খাইরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে গত বছরের ১৩ নভেম্বর মামলা করেছে। মামলা নম্বর ১৪০২। এরপর তাঁর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। গত এপ্রিলে তিনি আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। অর্থঋণ আদালতে তাঁর নামে আরেকটি মামলা করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ মামলা করার অংশ হিসেবে খাইরুল ইসলামকে কয়েক দফা নোটিশ দিলেও বেসিক ব্যাংককে তিনি কোনো জবাব দেননি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাণিজ্যিক অডিট অধিদপ্তর, বেসিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় এবং শাখা কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আনিসুর রহমান গত বৃহস্পতিবার  বলেন, ‘জনাব মো. খাইরুল ইসলাম ব্যাংকে এসেছিলেন। তাঁর কাছ থেকে পাওনা আদায়ে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি এবং নিচ্ছি।’ এর বাইরে কিছু বলতে চাননি তিনি।

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির প্রধান হোতা ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই ওরফে বাচ্চু। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি শেখ আবদুল হাইয়ের নামে ৫৬টি মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছে। খাইরুল ইসলামের এ বেআইনি ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে শেখ আবদুল হাইয়ের প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে বলে বাণিজ্যিক অডিট অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

শেখ আবদুল হাই ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হন। খাইরুল ইসলামের ঋণ প্রস্তাব এর ১১ মাস পরের ঘটনা। বেসিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখায় ৪ কোটি টাকা নাবালক দুই সন্তানের নামে ঋণ চেয়ে আবেদন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন এপিএস খাইরুল ইসলাম ওরফে মান্নান। ২০১০ সালের ১৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত ব্যাংকের ২৭৬তম পর্ষদ সভায় জামানত ছাড়া খাইরুল ইসলামের ব্যক্তিগত নিশ্চয়তা দিয়ে করা গৃহনির্মাণ ঋণ প্রস্তাব মঞ্জুর হয়ে যায়।

বেসিক ব্যাংক বলছে, প্রথমে ২ কোটি টাকা করে মোট ৪ কোটি টাকার ঋণ প্রস্তাব পাস হয় খাইরুল ইসলামের নাবালক ছেলে ও মেয়ের নামে। অথচ ব্যাংকের ঋণ কমিটির নীতিমালা অনুযায়ী, জামানত ছাড়া কোনো ঋণ দেওয়া যায় না। ব্যাংকের আইনজীবীও তখন মতামত দেন যে নাবালক ছেলে ও নাবালিকা মেয়ের সঙ্গে ব্যাংক বন্ধকি দলিল করতে পারবে না। ফলে আটকে যায় ঋণ বিতরণ।