ফেনীর পরশুরামে পল্লী চিকিৎসকরাই এখন বড় ডাক্তার।

প্রকাশিত: ৯:৩৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ৯, ২০২৩

শিবব্রত (বিশেষ প্রতিনিধি)
***************************************
ফেনীর পরশুরামে পল্লী চিকিৎসকরা নিজেদের ডাক্তার পরিচয়ে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। পূর্বে অনেকে বাইসাইকেল মেকার, কম্পাউন্ডার, কর্মচারি, ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করলেও বর্তমানে ডাক্তার সেজে চিকিৎসা দেওয়ার মতোও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আরএমপি (রুরাল মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার) কোর্স করেই উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ও চরাঞ্চলে অনেকেই এখন মস্ত বড় ডাক্তার। এমবিবিএস পাস না করে তারা সকল রোগের চিকিৎসক। এমনকি করছেন অস্ত্রোপচারও। তাদের ভুল চিকিৎসা, মাত্রাতিরিক্ত ওষুধের প্রেসক্রিপশনের কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ রোগীদের। স্থানীয় বেশির ভাগ বাজারে চটকদার সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে নিজেদের নামের আগে ‘ডাক্তার’ উপাধি আর ‘ডিপ্লোমা, প্যারামেডিক, এলএমএএফ, ডিএইসএস, যৌন মা ও শিশু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার এর মতো নামে শব্দ লাগিয়ে দেদারছে অপচিকিৎসা বাণিজ্য চালাচ্ছে এরা।

গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসক সংকট থাকায় এসব ভুয়া চিকিৎসকের ওষুধ খেয়ে রোগমুক্তি তো দূরের কথা, নানান জটিলতায় ভুগছেন হাজারো রোগী। তাদের ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীর জীবন বিপন্ন হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। আবার অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধের যাচ্ছে তাই ব্যবহারের কারণে সাধারণ রোগকে আরো জটিল থেকে জটিলতর পর্যায়ে নিয়ে নিরাময়-অসম্ভব করে ফেলছেন। নিজের চেম্বার খোলার পাশাপাশি এসব পল্লী চিকিৎসকঔষধ ও বিক্রি করছেন।
একাধিক ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পল্লী চিকিৎসকদের জন্য টাকাসহ বিভিন্ন ধরনের গিফট দেয়া হয়। এজন্যই তারা এন্টিবায়োটিক ঔষধও লিখে দেন রোগীদের।

পাশাপাশি পরশুরাম সহ ফেনী জেলাধীন বিভিন্ন উপজেলায় যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অনুমতিবিহীন অসংখ্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যেখানে ল্যাব পরিক্ষার নামে দিনদুপুরে গলাকাটা বাণিজ্য চলছে। ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে কর্মীরাই রিপোর্ট তৈরি করে দিচ্ছে অহরহ। ডিএমএফ ডিগ্রির সাইনবোর্ড লাগিয়ে অদক্ষরাই করছেন আলট্রাসোনগ্রাম, এক্সরের মতো পরীক্ষা। ভুল এনালাইসে জীবন হারাচ্ছে গর্ভবতী মা ও শিশু। প্রশাসন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নজরদারি না থাকায় এসব ব্যবসা ঢের গজিয়ে ওঠারও অভিযোগ করেন অনেক স্থানীয় জনগণ।
সরেজমিনে দেখা যায়, পরশুরাম উপজেলা সদর ও গ্রাম-গঞ্জে অনেকেই লাইসেন্সবিহীন ডাক্তার নামধারী চেম্বার খুলে বসেছেন। পরশুরাম বাজারে বেঙ্গল ফামেসী চিকিৎসার পাশাপাশি অপারেশন করেন পল্লী চিকিৎসক নারায়ন চন্দ্র বর্নিক ও তা ছেলে। যার ব্যাবস্থাপত্রে দেখা যায় রোগ বিশেষজ্ঞসহ নানা বিশেষন। তিনি তার ফার্মেসীর সামন নামের আগে ডাক্তার লিখে সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে ওই পল্লী চিকিৎসক জানান, তিনি ডাক্তারী পাশ করেছেন তাই নামের আগে ডাক্তার লিখেছেন। কিন্তু আইনে রয়েছে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করে বাংলাদেশ মেডিসিন এন্ড ডেন্টাল এসোসিয়েশনের অনুমতি নেয়া ছাড়া নামের আগে ডাক্তার লিখা যায়না।এটা মানতে রাজি নন অনেক পল্লি চিকিৎসক।
শালধর বাজারে দেখা যায় পল্লি চিকিৎসক জাকির।। এমবিবিএস ডিগ্রি না থাকলেও নামের আগে ডাক্তার লিখেছেন।
এ বিষয়ে জানতে জাকির জানান তিনি গত ৩৫ বছর ধরে ডাক্তারী করে আসছেন, তাই তার নামের আগে ডাক্তার লেখার বৈধতা আছে। চিকিৎসার পাশাপাশি টাকার বিনিময়ে ব্যবস্থাপত্র করে থাকেন বলে জানান তিনি। । ্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্্্র্র্র্র্র্র্
একই ধারাবাহিকতায় ধনীকুন্ডা বাজার ,রাজষপুর ,সুবার বাজার গুথুমা,কেতরাঙ্গা,নরনীয়া এবং বক্সমাহমুদ বাজারে ও দেখা যায় পল্লী চিকিৎসককে একই চিত্র। অথচ তাদের রোগ সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান ছাড়া বিশেষ রোগ সম্পর্কে বিশেষ কোনো জ্ঞান না থাকলেও চিকিৎসার নামে প্রতিদিন মোটা অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিস সুত্র জানায়, আরএমপি কোর্স করেই পল্লী চিকিৎসকরা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করছেন। এটি বন্ধ করা অথবা প্রেসক্রিপশনে তারা কি কি ঔষধ লিখতে পারবেন এ ব্যাপারে যদি আইনগত কোনো নির্দেশনা থাকতো তবে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারতাম। এ ধরনের সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। এর ফলে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে কেনো পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, প্রশাসনের পক্ষ হতে মোবাইল কোর্ট করার বিধান থাকলেও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে তা নেই।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা শমসাদ বেগম বলেন,এব্যাপারে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।