মধ্যযুগের বইপ্রেমী বাদশাহ ছিলেন যিনি ক্রাইম পেট্রোল ক্রাইম পেট্রোল News প্রকাশিত: ১১:২৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৯, ২০২৩ নিজস্ব প্রতিনিধি স্পেনের শাসক দ্বিতীয় হাকাম আল মুস্তানসির বিল্লাহ বিন আবদুর রহমান ছিলেন গ্রন্থাগার আন্দোলনের একজন পুরোধা। অতিশয় বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তি। তাঁর মতো বইপ্রেমিক রাজা পৃথিবীর ইতিহাসে খুবই বিরল। তাঁর মধ্যে শৈল্পিক রুচিবোধ ও সাহিত্য রসবোধের সমন্বয় ছিল। স্পেনের সিংহাসনে এত বড় পণ্ডিত ও জ্ঞানানুরাগী আর কেউ আরোহণ করেননি। তাঁর নামে বড় বড় লেখকের অসংখ্য গ্রন্থ উৎসর্গিত হয়েছিল। তাঁর সম্পর্কে ইবনে খালদুন লিখেছেন, ‘হাকাম সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা করতে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। পণ্ডিত ব্যক্তিদের প্রতি ছিল তাঁর অপরিসীম বদান্যতা। ’ খলিফা দ্বিতীয় হাকাম (৯৬১-৯৭৬) স্পেনের রাজধানী কর্ডোভায় এক রাজকীয় গ্রন্থাগার গড়ে তোলেন। এটি তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। এই গ্রন্থাগারে চার লক্ষাধিক গ্রন্থ ও পাণ্ডুলিপির বিশাল সংগ্রহ ছিল। ইতিহাসবিদ, পণ্ডিত, কপি লেখক ছাড়াও এখানে পাঁচ শতাধিক কর্মচারী কাজ করতেন। তা ছাড়া বই নকল করা, চিত্রশোভন ও বাঁধাই কাজের জন্য রাজপ্রাসাদের কয়েকটি কক্ষ নির্দিষ্ট ছিল আর ওই সব কাজের জন্য সে যুগের সেরা লিপিকার ও বাঁধাইকাররা হাকামের গ্রন্থাগারে কাজ করতেন। খলিফা হাকাম দুর্লভ ও মূল্যবান গ্রন্থ সংগ্রহে নিজের পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছেন। দুর্লভ পাণ্ডুলিপি ক্রয় করে কর্ডোভায় আনয়নের জন্য তিনি প্রাচ্যের সর্বাংশে দলে দলে লোক পাঠাতেন। তাঁরা কায়রো, বাগদাদ, দিমিশক ও আলেকজান্দ্রিয়ায় পুস্তকের দোকানগুলোতে দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থের অনুসন্ধান করতেন। নতুন-পুরনো যেকোনো ধরনের পাণ্ডুলিপি যেকোনো মূল্যে ক্রয় করার জন্য তাঁদের প্রতি খলিফার আদেশ ছিল। সর্বোচ্চ মূল্য দিয়েও কোনো পুস্তকের গ্রন্থকার বা স্বত্বাধিকারীকে তা বিক্রয়ে রাজি করাতে না পারলে তাঁরা তা নকল করিয়ে নিতেন। খলিফার জন্য এ বই সংগ্রহের কাজে বিদেশি পণ্ডিতরা নিযুক্ত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে মিসরের ইবনে সাবান, বাগদাদের ইবনে ইয়াকুব আল কিন্দি ও মুহাম্মদ ইবনে ফারজান অন্যতম। এইভাবে আনীত পুস্তক, দপ্তরি ও নকলনবিশে তাঁর বিরাট প্রাসাদের চারদিক ভরপুর হয়ে গেল। মাঝেমধ্যে পুস্তক লিখিত হওয়ার আগেই হাকাম তা ক্রয়ের ব্যবস্থা করে রাখতেন। আবুল ফরাজ আল ইস্পাহানির আরব কবি ও চারণিকদের বিষয়ে ‘কিতাবুল আগানি’ লেখার সংবাদ পেয়ে হাকাম তাঁকে সহস্র স্বর্ণমুদ্রা প্রেরণ করেন এবং লেখার কাজ শেষ হলে তাঁকে এক কপি পাঠানোর অনুরোধ করেন। আবুল ফরাজ ‘কিতাবুল আগানি’ প্রকাশিত হওয়ার আগেই তার প্রতিলিপি কর্ডোভায় পাঠিয়ে দেন। তার সঙ্গে খলিফার প্রশংসাত্মক একটি কবিতা ও উমাইয়া বংশের একটি বংশতালিকার প্রতিলিপি পাঠিয়েছিলেন। ফলে তিনি আবার পুরস্কৃত হন। এভাবে হাকাম অন্ততপক্ষে চার লাখ পুস্তক সংগ্রহ করেন। এই বিরাট কুতুবখানার পুস্তকের তালিকা ৪৪ খণ্ডে সমাপ্ত হয়; প্রতি খণ্ডে ২০০ পেজ ছিল। অন্যান্য পুস্তক-সংগ্রহকারীর মতো হাকাম শুধু পুস্তক ক্রয় করে ক্ষান্ত হতেন না, নিজের সংগৃহীত প্রতিটি পুস্তক তিনি অধ্যয়ন করতেন। বেশির ভাগ পুস্তকের পাশে তিনি মূল্যবান টীকা লিখতেন। গ্রন্থগুলো পুস্তকালয়ে যত্নের সঙ্গে সজ্জিত থাকত। জোসেফ ম্যাকেভ বলেন, হাকাম আন্দালুসীয় সভ্যতার পরিপূর্ণতা আনয়ন করে কর্ডোভা নগরীকে ইউরোপের বুকে একটি বাতিঘরে পরিণত করেন। সূত্র : আল কুতুব ওয়াল মাকতাবাত ফিল আন্দালুস, ড. হামিদ আশ শাফেয়ী লেখক : শিক্ষক ও অনুবাদক SHARES ইসলাম বিষয়: বইবাদশাহস্পেন
স্পেনের শাসক দ্বিতীয় হাকাম আল মুস্তানসির বিল্লাহ বিন আবদুর রহমান ছিলেন গ্রন্থাগার আন্দোলনের একজন পুরোধা। অতিশয় বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তি। তাঁর মতো বইপ্রেমিক রাজা পৃথিবীর ইতিহাসে খুবই বিরল। তাঁর মধ্যে শৈল্পিক রুচিবোধ ও সাহিত্য রসবোধের সমন্বয় ছিল।
স্পেনের সিংহাসনে এত বড় পণ্ডিত ও জ্ঞানানুরাগী আর কেউ আরোহণ করেননি। তাঁর নামে বড় বড় লেখকের অসংখ্য গ্রন্থ উৎসর্গিত হয়েছিল। তাঁর সম্পর্কে ইবনে খালদুন লিখেছেন, ‘হাকাম সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা করতে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। পণ্ডিত ব্যক্তিদের প্রতি ছিল তাঁর অপরিসীম বদান্যতা।
’ খলিফা দ্বিতীয় হাকাম (৯৬১-৯৭৬) স্পেনের রাজধানী কর্ডোভায় এক রাজকীয় গ্রন্থাগার গড়ে তোলেন। এটি তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। এই গ্রন্থাগারে চার লক্ষাধিক গ্রন্থ ও পাণ্ডুলিপির বিশাল সংগ্রহ ছিল। ইতিহাসবিদ, পণ্ডিত, কপি লেখক ছাড়াও এখানে পাঁচ শতাধিক কর্মচারী কাজ করতেন।
তা ছাড়া বই নকল করা, চিত্রশোভন ও বাঁধাই কাজের জন্য রাজপ্রাসাদের কয়েকটি কক্ষ নির্দিষ্ট ছিল আর ওই সব কাজের জন্য সে যুগের সেরা লিপিকার ও বাঁধাইকাররা হাকামের গ্রন্থাগারে কাজ করতেন। খলিফা হাকাম দুর্লভ ও মূল্যবান গ্রন্থ সংগ্রহে নিজের পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছেন। দুর্লভ পাণ্ডুলিপি ক্রয় করে কর্ডোভায় আনয়নের জন্য তিনি প্রাচ্যের সর্বাংশে দলে দলে লোক পাঠাতেন। তাঁরা কায়রো, বাগদাদ, দিমিশক ও আলেকজান্দ্রিয়ায় পুস্তকের দোকানগুলোতে দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থের অনুসন্ধান করতেন। নতুন-পুরনো যেকোনো ধরনের পাণ্ডুলিপি যেকোনো মূল্যে ক্রয় করার জন্য তাঁদের প্রতি খলিফার আদেশ ছিল।
সর্বোচ্চ মূল্য দিয়েও কোনো পুস্তকের গ্রন্থকার বা স্বত্বাধিকারীকে তা বিক্রয়ে রাজি করাতে না পারলে তাঁরা তা নকল করিয়ে নিতেন। খলিফার জন্য এ বই সংগ্রহের কাজে বিদেশি পণ্ডিতরা নিযুক্ত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে মিসরের ইবনে সাবান, বাগদাদের ইবনে ইয়াকুব আল কিন্দি ও মুহাম্মদ ইবনে ফারজান অন্যতম। এইভাবে আনীত পুস্তক, দপ্তরি ও নকলনবিশে তাঁর বিরাট প্রাসাদের চারদিক ভরপুর হয়ে গেল। মাঝেমধ্যে পুস্তক লিখিত হওয়ার আগেই হাকাম তা ক্রয়ের ব্যবস্থা করে রাখতেন। আবুল ফরাজ আল ইস্পাহানির আরব কবি ও চারণিকদের বিষয়ে ‘কিতাবুল আগানি’ লেখার সংবাদ পেয়ে হাকাম তাঁকে সহস্র স্বর্ণমুদ্রা প্রেরণ করেন এবং লেখার কাজ শেষ হলে তাঁকে এক কপি পাঠানোর অনুরোধ করেন। আবুল ফরাজ ‘কিতাবুল আগানি’ প্রকাশিত হওয়ার আগেই তার প্রতিলিপি কর্ডোভায় পাঠিয়ে দেন। তার সঙ্গে খলিফার প্রশংসাত্মক একটি কবিতা ও উমাইয়া বংশের একটি বংশতালিকার প্রতিলিপি পাঠিয়েছিলেন। ফলে তিনি আবার পুরস্কৃত হন। এভাবে হাকাম অন্ততপক্ষে চার লাখ পুস্তক সংগ্রহ করেন। এই বিরাট কুতুবখানার পুস্তকের তালিকা ৪৪ খণ্ডে সমাপ্ত হয়; প্রতি খণ্ডে ২০০ পেজ ছিল। অন্যান্য পুস্তক-সংগ্রহকারীর মতো হাকাম শুধু পুস্তক ক্রয় করে ক্ষান্ত হতেন না, নিজের সংগৃহীত প্রতিটি পুস্তক তিনি অধ্যয়ন করতেন। বেশির ভাগ পুস্তকের পাশে তিনি মূল্যবান টীকা লিখতেন। গ্রন্থগুলো পুস্তকালয়ে যত্নের সঙ্গে সজ্জিত থাকত। জোসেফ ম্যাকেভ বলেন, হাকাম আন্দালুসীয় সভ্যতার পরিপূর্ণতা আনয়ন করে কর্ডোভা নগরীকে ইউরোপের বুকে একটি বাতিঘরে পরিণত করেন। সূত্র : আল কুতুব ওয়াল মাকতাবাত ফিল আন্দালুস, ড. হামিদ আশ শাফেয়ী লেখক : শিক্ষক ও অনুবাদক