যে সাহাবিকে মহানবী কাবা প্রাঙ্গণের মুয়াজ্জিন নিযুক্ত করেছিলেন

প্রকাশিত: ১০:৫৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৯, ২০২৩
পবিত্র মসজিদুল হারাম, মক্কা, সৌদি আরব। ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক

অল্পবয়সী বালক আবু মাহজুরা। আসল নাম আউস ইবনে মিআর অথবা সুমাইর ইবনে উমাইর। নিজ গোত্রীয় ১০ জন বালকের সঙ্গে বের হয়েছেন মুসলমানদের খোঁজে। এদিকে আল্লাহর রাসুল (সা.) হুনাইন যুদ্ধ থেকে মদিনায় ফিরছেন।

পথিমধ্যে জিইরানা নামক স্থানে নামাজের সময় হওয়ায় যাত্রাবিরতি দেওয়া হলো। নামাজের পাশাপাশি সফরের ক্লান্তিও কেটে যাবে খানিকটা। সবাই নিজ নিজ প্রয়োজন সেরে নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মহানবী (সা.) বিলাল (রা.)-কে আজানের নির্দেশ দিলেন।
 

বিলাল (রা.) আবেগ আর ভালোবাসা মিশ্রিত কণ্ঠে আজান শুরু করলেন, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে। বিলাল (রা.)-এর আজানের সুমধুর ধ্বনি বাতাসে ভর করে পৌঁছে গেল বহু দূর-দূরান্তে। পৌঁছে গেল আবু মাহজুরা ও তাঁর সঙ্গীদের কর্ণকুহরে। আবু মাহজুরার অন্তরে তখনো ঈমানের নূর প্রবেশ করেনি।

তাই তিনি বিদ্রুপের স্বরে বিলাল (রা.)-এর সঙ্গে সঙ্গে আজান দিতে লাগলেন। 

আবু মাহজুরার কণ্ঠ ছিল বেশ উঁচু ও সুমিষ্ট। মহানবী (সা.) তাঁর আজান শুনতে পেলেন। তিনি সাহাবিদের বললেন, আমি এদিক থেকে কার যেন সুমিষ্ট কণ্ঠে আজান শুনতে পেয়েছি। তৎক্ষণাৎ আলী ও জুবাইর (রা.)-কে পাঠিয়ে দিলেন তাঁদের খোঁজে।

তাঁরা পাহাড়ের পেছন দিক থেকে গিয়ে আবু মাহজুরা ও তাঁর সাথিদের ধরে নিয়ে এলেন নবীজির সামনে। সবাই ভীতসন্ত্রস্ত। চোখে-মুখে স্পষ্ট লজ্জার ছাপ। একে অপরের দিকে তাকিয়ে কী যেন বলতে চাচ্ছেন! এক এক করে সবার আজান শুনলেন নবী (সা.)। আবু মাহজুরার আজান দেওয়ার পর নবী (সা.) বলেন, আবার আজান দাও। কারণ আবু মাহজুরার কণ্ঠ ছিল বেশ উচ্চ সুমিষ্ট ও মাধুর্যপূর্ণ। আল্লাহর নবী (সা.) আবু মাহজুরার মাথায় হাত বুলিয়ে তাঁর জন্য তিনবার বরকতের দোয়া করলেন। 

এদিকে আবু মাহজুরার হৃদয় আকাশে কিরণ ছড়িয়ে গেল হিদায়াতের নতুন দিবাকর। নবী (সা.) কালিমার দাওয়াত দেওয়া মাত্র আবু মাহজুরা কবুল করে নিলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি পড়ে ফেলেন : ‘আশহাদু আললা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্নাকা রাসুল্লাহ।’ নবী (সা.) বলেন, যাও। মসজিদে হারামে গিয়ে আজান দাও। আবু মাহজুরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমি কিভাবে আজান দেব? তারপর তিনি তাঁকে আজান শিক্ষা দিলেন। এর পর থেকে তিনি আমৃত্যু বায়তুল্লাহর মুয়াজ্জিন নিযুক্ত হয়ে গেলেন এবং তার পরবর্তী কয়েক প্রজন্ম পর্যন্ত বায়তুল্লাহর মুয়াজ্জিন ছিলেন।

সাহাবি আবু মাহজুরা (রা.)-এর মাথার অগ্রভাগের চুল ছিল বেশ লম্বাটে। কারণ এই চুলগুলোতে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর বরকতময় হাতের ছোঁয়া লেগেছিল। পরবর্তী সময়ে তিনি সেই চুলগুলো কখনো কাটেননি। বরকতস্বরূপ রেখে দিয়েছিলেন। স্মৃতি হিসেবে। ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে। (সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৪/৬১-৬২)