রূপগঞ্জের নাওড়ায় অস্ত্রের মহড়া \ গ্রামবাসী আতঙ্কিত

প্রকাশিত: ৬:০৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া এলাকায় চারটি হত্যাসহ ৪২ মামলার আসামী মোশারফ হোসেন মোশা বাহিনীর সন্ত্রাসীরা প্রতিনিয়ত অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মোশা বাহিনীর প্রধান মোশারফ হোসেন বহুবার পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন।

প্রতিবারই জামিন নিয়ে নাওড়া এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অবৈধ অস্ত্র মজুদ করেন। সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া ফাঁকা গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিষ্ফোরণে নাওড়া এলাকার সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ওঠে।
নাওড়া এলাকায় মোশারফ হোসেনের গানম্যান সাদা পোশাকে থাকা অবস্থায় প্রকাশ্যে অস্ত্র বহন করছে। অস্ত্র প্রদর্শনের সুযোগ নিয়ে মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করছে। সাদা পোশাকে কোমরে কিংবা হাতে অস্ত্র ইচ্ছাকৃতভাবে রেখে মানুষের মাঝে ভয়ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। নিয়ম বর্হিভ‚তভাবে অস্ত্র প্রদর্শনে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শিশু ও নারীরা আতঙ্কিত হচ্ছে বেশি বলে অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার নাওড়া গ্রাম রাজউকের পূর্বাচল উপশহর ও সেনাবাহিনীর জলসিঁড়ি আবাসন প্রকল্পের দক্ষিণে ও ঢাকার বাড্ডা থানার পূর্বে অবস্থিত। ঢাকার পার্শবর্তী ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় গত কয়েক বছরে এখানে জমির দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। সে কারনে নাওড়া গ্রামের জমির উপর আবাসন প্রকল্পের মালিকদের নজরে আসে। সেই সকল আবাসন প্রকল্প তাদের স্বার্থের জন্য স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নিয়োজিত করে। সুযোগ পেয়ে কায়েতপাড়ার নাওড়া এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন তার নিজের নামের সাথে মিল রেখে মোশা বাহিনী গড়ে তোলে। এ বাহিনীতে বর্তমানে তিন শতাধিক সদস্য রয়েছে। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে তখন দল পাল্টে সে সরকারি দলের কর্মী হয়ে যান তিনি। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি যুবলীগ নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। অবৈধ উপায়ে মূলত জমি দখল করে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গঠন করেন বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী।

মোশা বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, মাদক ব্যবসা করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সাধারণ মানুষের জমি দখল করা মোশারফ হোসেনের প্রধান পেশা। মানুষকে আতঙ্কিত করতে এ বাহিনী কয়েক দিন পর পর ফাঁকা গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিষ্ফোরণে ত্রাস সৃষ্টি করে। কেউ এর প্রতিবাদ করতে গেলেই হামলা, মামলা, মারপিট বা হত্যার শিকার হতে হয়। তার নির্দেশ ছাড়া এলাকার কোথাও কোনো অপকর্ম ঘটে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ৪টি হত্যা, ডাকাতি, ধর্ষণ, চাঁদাবাজিসহ ৪২ মামলার আসামি ও মোশাবাহিনীর প্রধান মোশারফ হোসেনের রয়েছে তিনজন সশস্ত্র দেহরক্ষী। তারা যখন-তখন আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ও গুলি ছুঁড়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করছে। স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ এক নেতার আর্শীবাদে মোশা এখন আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে।
রাজউকের পূর্বাচল উপশহরে গড়ে তুলেছেন অপরাধের সাম্রাজ্য। উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া গ্রামের মোশারফ হোসেন ১৯৯৬ সালে তার বড় ভাই শাহ আলমকে নৃশংসভাবে হত্যার মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করে। গত ২৮ বছরে তিনি হয়ে ওঠেন ভয়ংকর ও দুর্র্ধষ। তার বিরুদ্ধে নারীদের তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগও রয়েছে। তার অত্যাচারে নাওড়া গ্রামের ২শ’ সংখ্যালঘু পরিবার এলাকা ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জমি দখল আর পূর্বাচলের বিভিন্ন আবাসন প্রতিষ্ঠানের কাছে নিয়মিত চাঁদাবাজি করে মোশা গড়ে তুলেছেন ভয়ংকর এক কিলার বাহিনী। নানা অপরাধের কারণে ২৩ বার জেল খেটেছেন মোশারফ হোসেন। তার নামে রাজধানীর খিলক্ষেত, মোহাম্মদপুর, ভাটারা, বাড্ডা, রামপুরা, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জে রয়েছে ৪২টি মামলা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়ায় নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় স্থানীয় শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন ওরফে মোশা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান, রাষ্ট্রের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অথবা ব্যবসায়ীর বাস্তবিক নিরাপত্তার অভাব হলে ১৮৭৮ সালের আর্মস অ্যাক্ট এবং ১৯২৪ সালের আর্মস রুলস অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শর্ট ব্যারেল অথবা লং ব্যারেল অস্ত্রের আবেদন করতে পারেন। তবে গানম্যান নিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অধিক ঝুঁকির আশঙ্কা থাকলেই কেবল দেওয়া যেতে পারে।

সেক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই রাষ্ট্রের অতীব গুরুত্বপূর্ণ অথবা শিল্পপতি কিংবা সিআইপি পদমর্যাদার হতে হবে। তদুপরি গুলিবর্ষণের সঠিক কারণ, গুলির হিসাব থানায় এবং জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানাতে হবে। তবে মোশারফ হোসেনের তিন দেহরক্ষী যখন-তখন গুলিবর্ষণ করে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করলেও সে হিসাব এখন পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কারও কাছে জানানো হয়নি। তাছাড়া জেলা প্রশাসক কিংবা থানা পুলিশও জানে না তার গানম্যানের বিষয়ে।
রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া গ্রামবাসী প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার অস্ত্রের মুখে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়ি ভাংচুর, লুটপাট সহ বিভিন্নরকর্মের সন্ত্রাসী কর্মকার্মী চালিয়ে যাচ্ছে তারা। প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না।

প্রতিদিন তারা নাওড়া গ্রামে আধিপত্য বিস্তারের জন্য গানম্যানদের অস্ত্র প্রদর্শন করে নেতৃত্ব দিয়ে ছেন, চাপাতি, কুড়াল, চাকুসহ অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মহড়া দেন। ফেসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অস্ত্র সহ ছবি আপলোড করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এছাড়া ইভটিজিং, ধর্ষণ চেষ্টা সহ হিন্দু মহিলাদের উত্ত্যক্ত করারও অভিযোগ রয়েছে।
কায়েতপাড়ড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আব্দুল আউয়াল বলেন, মোশারফ হোসেন কোনো ব্যবসায়ী কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তি নন। নন জনপ্রতিনিধি কিংবা দলীয় পদধারীও নন। তবে তিনজন সশস্ত্র গানম্যান নিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করে নাওড়া এলাকা আতঙ্কিত করে তুললেও প্রশাসন নিরব ভ‚মিকা পালন করছে।

এ ব্যপারে মোশারফ হোসেন বলেন, আমি কোন অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত নই। আমাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এ সকল মামলা মিথ্যা ও বানোয়াট।
রূপগঞ্জ থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা জানান, মোশারফের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা চলমান আছে। সে কোন উপায়ে গানম্যান পেয়েছে সেটা আমরা জানি না। সশস্ত্র গানম্যান নিয়োগের ব্যাপারে তিনি অবহিত নন।